Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

না.গঞ্জে বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিকদের হুমকি

Icon

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

না.গঞ্জে বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিকদের হুমকি

না.গঞ্জে বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিকদের হুমকি

Swapno

#  ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৫ টাকা বাড়লো

# পরিবহন থেকে কারা চাঁদা নেয় তাদের নাম প্রকাশ করুন : এড. সাখাওয়াত

# পরিবহনের মালিকরা হুমকি দিবেন না : এড.টিপু

# সপ্তাহের ৭ দিন হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য:  জেলা প্রশাসক


ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস ভাড়া ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিক, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় নারায়ণগঞ্জ পরিবহন খাত থেকে ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের আগে কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে বেড়াতো ওসমান পরিবার। তাঁর ভাগ আওয়ামী লীড়ের সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রলায়ের পলাতক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পর্যন্ত পৌঁছাতো এমন গুঞ্জন রয়েছে। ২০০৮ সনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের সকল পরিবহন নিয়ন্ত্রণে নেন। তাদের কথা যারা শুনেন নাই, তাদের পরিবহন বন্ধ করে দিতেও তারা কর্ণপাত করেন নাই বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগষ্টের পরে পরিবহন মালিকরাও অকপটে শিকার করেন তৎকালিন ডিসি মাহমুদুল হাসানের কাছে। যা গতকাল এক সভায় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল তা প্রকাশ করেন। সেই সাথে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাত থেকে কারা চাদাঁ নিচ্ছে তাদের যেন নাম প্রকাশ করা হয়। যদিও পরিবহন সেক্টরের মালিকরা তা প্রকাশ করেন নাই। তাছাড়া সভায় বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিকরা হৈ চৈ শুরু করেন। এমনকি তারা কথার প্রেক্ষিতে হরতাল ধর্মঘট দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। তাছাড়া ওসমান পরিবারের জায়গাটা পরিবহন সেক্টরে কারা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তা নিয়ে আলোাচনা তৈরী হয়েছে।

 এই সভায় নারায়ণগঞ্জে ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টে আগে ওসমান পরিবার পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করেছে এক বৈঠকে পরিবহন মালিকারা জানা নেই বলে মন্তব্য করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, আগের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান যখন পরিবহন ভাড়া নিয়ে সকলের সাথে আলোচনায় বসেন তখন পরবিহন মালিকদের প্রতিনিধি রওশন আলী ওই সভায় বলেছেন তারা পরিবহন থেকে বড় একটি হিস্যা বা চাঁদার টাকা ওসমান পরিবারকে দিত। গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে যেহেতু কাউকে চাঁদা দিতে হয় না তাহলে পরিবহনের ভাড়া কমাতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। পরিবহন মালিকদের কয়েকজনও গতকালকের এই সভায় বলেন এটা ৫ আগষ্টের আগে ছিল, এখন নেই।

মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত বছরের ৫ আগষ্টের সরকার পরিবর্তনের আগে কোন মিটিংয়ে আমাদের ডাকা হয় নাই। আজকের মিটিংয়ে রওশন আলী সকল বিষয়ে বার বার বেটু দিতাছেন। অথচ আগের ডিসির সাথে যখন তার কক্ষে বসা হয় তখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে পরিববহনের ভাড়া ৪৫ টাকা আর ৫৫ টাকা নিয়ে বার্গেনিং হচ্ছিল। তখন ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেন প্রাক্তন ডিসি। এই ৫০ টাকা ভাড়া করার পিছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ৫ আগষ্টের পর থেকে কোন রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিতে হয় না। যেহেতু এখন চাদাঁ দিতে হয় না, সে হিসেবে যাত্রীদেরকে সেই ছাড়টা পরিবহন মালিকদের দিতে হবে। আর যদি এখন নতুন করে কাউকে চাঁদা দিতে হয় তাহলে পরিবহন মালিকরা তাদের নাম প্রকাশ করুক এই সভায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে অনেক পরিবহন  মালিকরা এসে বলে তারা গাড়ি নামালে মালিক সমিতিতে নাম না লেখালে তা সড়কে চলতে দেয়া হয় না। কোন মালিক গাড়ি নামাতে চাইলে তাদেরকে জিম্মি করে রাখে পরিবহন মালিক সমিতি। জনগণের যাতে ভোগান্তি হয় তারা সেটা চান। আমরা এটাও জানি যারা পরিবহনের বাসের মালিক রয়েছে, তারা কি টাকা পায়, আর সমিতিতে আপনারা কত টাকা রেখে দেন? মালিকরা প্রকৃত টাকা পায় না , এরকম বহু বিচার আমাদের কাছে আসে। আমরাও ৪ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া নিছি, সেখানে বাসের মালিক পাইছে ১৫শ’ টাকা, আর বাকি টাকা সমিতির নামে মধ্যসত্ত্বভোগিরা নিয়ে যায়। ওই দিক দিয়া মালিকদের আটকে রেখে এদিক দিয়ে জনগণের উপর বেশি ভাড়া চাপিয়ে দিবেন, সেটাও বিবেচনা করতে হবে। আমরা রাজনীতিবিদরা জনগণের কল্যাণে কথা বলবো, সেটাই স্বাভাবিক।

এসময় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, বর্তমানে যদি কেউ চাঁদা নেয় তাহলে তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। আমরা মানুষের কল্যানেকথা বলবো। সেখানে বাস মালিক, পরিবহন শ্রমিক, রাজনীতিবিদসহ মধ্যসত্ত্বভোগিরাও জনগণ। ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের পরে তৎকালিন ডিসি মাহমুদুল হক আমাদের সাথে বাস ভাড়া কমানো নিয়ে বসে ৫০ টাকা নির্ধারণ করে গেছেন। পরিবহনের মালিক কিংবা শ্রমিকরা প্রশাসনের সামনে বসে কোন হুমকি দিবেন না। ভাড়া না বাড়াইলে আপনার গাড়ি চালাবেন, ধর্মঘট অবরোধ করবেন এটাও মানুষ মেনে নিবে না। জনগন রাষ্ট্রের কল্যাণে বিবেচনা করে ডিসি সাহেব ভাড়া নির্ধারণ করবেন। এখানে জোর কিংবা হুমকি দিয়ে ডিসি সাহেবের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আদায় করবো এমনটা যেন না হয়।

জেলা বিআরটিএ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে মিটিং হবে জানা স্বত্বেও কেন আপনারা ইনভয়েস পেপার কেন রাখতে পারলেন না। সরকারি দপ্তরের আপনরা সবাই উদাসীন। এখন যেহেতু নির্বাচনি সরকার নেই, ডিসি সাহেবই আমাদের অভিভাবক। আপনি মালিক শ্রমিক জনগণের কল্যানের চিন্তা করে সিদ্ধান্ত দিবেন। কারো হুমকি ধমকিতে কর্ণপাত না করে রাষ্ট্রের জনগণের কল্যানে চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। আপনার সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নিবেন বলে আমরা আশাবাদি।

যাত্রী অধিকার ফোরামের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ৫ আগষ্টের পরে ভাড়া কমানোর দাবী করার কারণ হলো ২০১১ সনে যখন ২২ টাকা থেকে ৩১ টাকা ভাড়া বাড়ানো হলো তখন আমরা আপত্তি জানাই। সেই র‌্যাব-১১ থেকে দেয়া একটি চিঠি সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করি। সেই চিঠিতে উল্লেখ ছিল এই পরিবহন সেক্টর  থেকে পরিবহন মালিক সমিতি প্রতি মাসে শামীম ওসমানকে এবং সেলিম ওসমান কত টাকা দিত তা উল্লেখ ছিল। তাই আমরা বলে আসছি এই চাঁদাটা যদি কমানো যায় তাহলে বাস ভাড়াও কমানো যাবে। এখননো আর নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার নেই সুতরাং কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে না তাহলে ভাড়া কমাতে সমস্যা কি। আর এজ্ন্য ভাড়াটা কমানো হয়েছে।

এই সভায় শ্রমিকদেরও নেতা বলেন, বাস ভাড়া বাড়ানো না হলে তারা গাড়ি চালাবেন না। তাদের পেটে ভাত না জুটলে তারা গাড়ি রাস্তায় বের করবেন না বলে জানান। এমনকি তারা হরতাল ধর্মঘট দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। এছাড়া এই সভায় মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব ফারুক বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কথা ভেবে হলেও বাস ভাড়ানো হোক। না ভাড়া বাড়ানো না হলে আমরা ধর্মঘট করবো।

জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা আছে। বিআরটিসি বাস যদি ৪০ টাকা ভাড়ায় ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রোডে চলাচল করতে পারে তারা কেন পারবে না। আমি সরকারের দাবী জানাবো বিআরটিসি বাস যেন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রোডে বাড়িয়ে দেয়া হয়। তার এই দাবীর প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকসহ তাদের প্রতিনিধি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করা হোক আমরা তা চাই। এসময় তার কথায় মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে যান।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সড়কে পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে এসপার রুলস আইনে যা আছে আমরা তা ফলো করবো। বিআরটিসি বাসের ডিমান্ড থাকলে আমরা অবশ্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কারো পক্ষে বিপক্ষে যেতে চাই না। জামায়াতের নেতা যেমনটা বললেন পরিবহন মালিকরা চাইবেন ভাড়া বাড়াইতে আমরা জনগণ চাই কমাতে। এটাকে ব্যালন্স করার জন্য সরকারের প্রশাসনসহ আমরা আলোচনায় বসি। এখানকার পরিবহন মালিক, শ্রমিক জনগণ বাস দিয়ে চলাচল করবে। পরিবহন মালিকদের চাওয়া বাস ভাড়া ৬১ টাকা, বিআরটিসির কর্মকর্তারা করেছেন ৫২ সিট অনুযায়ী দুরত্বের ভিত্তিতে ৫৭ টাকা ভাড়া কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমরা  এটাকে ৫৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণকরতে পারি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া ঠিক থাকবে তা পুরো সপ্তাহ জুরে। এসময় ডিসিকে রফিউর রাব্বি বলেন এটা নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। আপাতত যা ভাড়া আছে তা বলবৎ থাকুক। তার এই কথার পরে পরিববহন মালিকরা হৈ চৈ শুরু করেন। সেই সাথে তারা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, মানুষকে জিম্মি রেখে আমরা যে কাজগুলো করি সেগুলো থেকে আমরা বিরত থাকি।  সে গুলোর জন্য আইন প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলছি সেটা কিন্তু আজকের টেবিল থেকে আমরা পাচ্ছি না। দেশে আইন আছে, তার সাথে আমাদের বিবেক বোধ রয়েছে। বিবেক দিয়ে আমাদের বিবেচনা করে কথা বলতে হবে। যার পেটে ভাত থাকছে না, পরের দিন তিনি কোন বাসে উঠবেন তিনি জানেন না, বাসে উঠে সঠিক জায়গায় আমরা পৌছাতে পারবো কি তারই কতখানি নিশ্চয়তা রয়েছে। আমরা সবাইর দিতে তাকাই।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন