পরিবহনের চাঁদার টাকা নেয় কারা
২০২৪ সনের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও এখনো পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসে নাই। সকল সেক্টরে অস্থিরতা বিরাজমান রয়েছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জ জেলাও এর বাইরে নয়। হঠাৎ করে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সড়কে পরিবহনের ভাড়া পাচঁ টাকা ভাড়ানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মন্তব্য তাদের কাছে বাস ভাড়ানো নিয়ে গেজেট করা চিঠি আসার পরে তারা নারায়ণগঞ্জের নাগিরক সমাজ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ,পরিবহনের মালিক শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু পরিবহন ভাড়া বাড়ানো নিয়ে নাগরিক সমাজ সাংবাদিকত মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সাথে তার প্রতিবাদ জানান।
এদিকে গত বছরের ৫ আগষ্টের আগে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি অভিযোগ উঠে আসছে পারিবহন সেক্টর ওসমান পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে তারা সেখান থেকে কোটি টাকার চাঁদার নিয়ে থাকেন। এই অভিযোগ ৫ আগষ্টের পরে তৎকালিন ডিসি মাহমুদুল হাসানের কক্ষে বসে বাস ভাড়া কমানো নিয়ে এক বৈঠকে বসে পরিবহন মালিকরা শিকার করে বলেন তারা ওসমান পরিবারকে একটা হিস্যা বা চাদাঁর টাকা দিয়েছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পরে যেহেতু কাউকে চাদাঁর টাকা দিতে হয় না সেই হিসেবে ভাড়া কমানো হতে হবে। তারই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন ডিসি মাহমুদুল হাসান সকলের সাথে একাধিকবার আলোচনা করে ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। তবে হঠাৎ কেন ভাড়া বাড়ানো হলো তা নিয়ে সকলের মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সাথে বুধবারের বাস ভাড়া বাড়ানো সভায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান প্রশ্ন তুলে বলেন নতুন কারা চাঁদা নেয় তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। আর নয় ভাড়া বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজারা লোকের যাতায়াত করে মানুষ। ৫৫ টাকা করে ভাড়া নেয়া হলে পরিবহনে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী ভাড়া দাঁড়ায় ২৭ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু এর অধিকাংশ লোক বাস দিয়ে বেশিরভাগ যাত্রী আসা যাওয়া করে। সুত্র মতে, পরিবহন সেক্টরে প্রতি মাসে বাস মালিক সমিতির নামে কোটি টাকা রেখে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন তুলেন পরিবহনের চাদাঁবাজির টাকা কারা নেয়।
অপরদিকে বগিত আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি উত্তর দক্ষিন মেরু করনে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর মেরুর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন বড় ভাই খ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান। দক্ষিণ মেরুর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন শামীম ওসমানের ছোট বোন খ্যাত সাবেক নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই বড় ভাই ছোট বোনের যন্ত্রনায় নগরবাসি ছিলেন আতঙ্কে। তবে পরিবহন সেক্টরের নিয়ন্ত্রনে ছিলেন শামীম ওসমান। কিন্তু আইভী সেখান থেকে ভাগ পেতেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সম্প্রতি গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল ও পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাতেও উত্তর দক্ষিন মেরুর বিভক্ত রয়েছে বিএনপির মাঝে। কিন্তু তারা কারা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সচেতন নাগরিক সমাজ। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বন্ধন পরিবহনের দখল নিয়ে ২০২৪ সনের ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তখন এই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ওই সময় সিটি বন্ধন পরিবহনের এমডি দেলোয়ার হোসেন, জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, সিরাজুল ইসলাম আহত হন।
তখন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সিটি বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিতে শোডাউন করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব উল্লাহ তপন। তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসরাম রানার মামা হন। তাদের সাথে উত্তর মেরু যোগসাজস রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তখন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী দক্ষিণ মেরুর গ্রুপের সমর্থক লিটন ও সালাউদ্দিন সাল্লুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে টার্মিনালটি দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেন। দক্ষিণ মেরুর সাহেব গ্রুপের রাসেল নামে একজনকে অস্ত্র হাতে দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এবং পরে সেখান থেকে উত্তের মেরুর মাহবুব উল্লাহর অনুসারীরা পালিয়ে যান। এছাড়া অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা যুবকের নাম রাসেল। তার বাড়ি ফতুল্লা থানার মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকায়। প্রায় ৬ বছর পুর্বে ফতুল্লা থানা পুলিশের কাছে প্রায় ২ হাজার ৪ শত বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও শহরের দক্ষিণ মেরুর সাহেবের সাথে রাসেলকে ঘন ঘন দেখা যায়। বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। সবসময় নিজের সাথে একটি চাকু রাখতেন বলে এলাকায় চাকু রাসেল হিসেবেও অনেকেই তাকে চিনেন। সাবেক ছাত্রদল নেতার সমর্থক ও কর্মী হিসেবে পরিচিত। এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকে এই রাসেল।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে উত্তর দক্ষিণ মেরুর দুই গ্রুপের পরিবহন সেক্টরের চাদাঁবাজির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাদের দরবারে সেখান থেকে একটি ভাগ চলে যায়। যদিও এই বিষয়ে পরিবহন সেক্টরের কেউ তা প্রকাশ করতে চান নাই।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান পরিবহন সেক্টর থেকে কারা চাঁদা নেয় তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। আর যদি কাউকে চাঁদা দেয়া না হয় তাহলে বাস ভাড়া বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই। কেননা এখনতো ডিজেল তেলের দাম বাড়ে নাই। আমরা চাই ৫০ টাকা ভাড়া বলবৎ থাকুক।


