Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

পরিত্যক্ত রাইফেল ক্লাব ময়লার ডাম্পিং

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

পরিত্যক্ত রাইফেল ক্লাব ময়লার ডাম্পিং

পরিত্যক্ত রাইফেল ক্লাব ময়লার ডাম্পিং

Swapno

২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের আগে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঠেকাতে দফায় দফায় মিটিং করে ব্যর্থ হয়েছে সাবেক এমপি শামীম ওসমান। সর্বশেষ ৩১ জুলাইয়েও তার অনুসারীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে মিটিং করে আন্দোলন ঠেকাতে কর্মীদের উস্কানি দিয়ে নিজে পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে এই রাফেল ক্লাব ছিল গডফাদার শামীম ওসমানের টর্চার সেল। তার কথার বাইরে যারা যেত তাদের ধরে এনে এখানে অন্ধার রুমে নিয়ে তাকে শায়েস্তা করা হত। রাইফেল ক্লাব সরকারি সম্পত্তি হলেও অলিখিতভাবে এটা শামীম ওসমানের কব্জায় রেখেছিল।

এদিকে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের গেটের সামনে ময়লা ফেলে স্তুপে পরিণত করে। ময়লার দুর্গন্ধে মানুষ সড়কেও দাঁড়াতে পারে না। অথচ এক বছর আগেও এই ক্লাবে প্রতিনিয়ত লোকের আনাগোনা ছিল শামীম ওসমানের দরবারের অনুসারীদের। কিন্তু ৪ আগষ্ট ছাত্র জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত এই ক্লাবটি অবহেলায় অযত্নে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাস যাবত দেখা যায় এখানে ময়লা ফেলানো হয়। আর এখন তা ময়লার ডমাপিংয়ে পরিনত হয়ে রয়েছে।

অপরদিকে গত বছরের ৫ আগষ্টের দিন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের ৪২ টি অস্ত্র লুটপাট হয়ে যায়। তার মাঝে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ৪টি অস্ত্র উদ্ধার হয়। তবে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযানে নামলেও তেমন ফল পায় নাই। নারায়ণগঞ্জ রাইফেল কøাবকে নিজের রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ব্যবহার করেছে সাবেক এমপি শামীম ওসমান। তার সকল দলীয় মিটিং মিছিল সহ গোপন বৈঠক এখানে বসে পরিচালনা করা হত। নেতাকর্মীরা এটা শামীম ওসমানের কার্যালয় মনে করতেন। যদিও রাইফেল ক্লাব সেনাবাহিনীর সরকারি সম্পত্তি।    

তথ্যমতে, গত বছরের ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ তারা পুত্র ওয়ন ওসমান অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মানুষের উপর গুলি ছোড়েন। সুত্র বলছে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামীম ওসমানের আস্থাভাজন চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। রাইফেল ক্লাবের শুটারদের জন্য ১৪২টি অস্ত্র ছিল। যার লকারের চাবি ছিল কাজলের কাছে। কাজল চাবি দিয়ে ১৮ জুলাইয়ের আগেই রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র গুলো শামীম ওসমানের গুন্ডাদের হাতে চলে যায়। যা এখনো উদ্ধার হয় নাই।  

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২০২৪ সনে ৪ আগষ্ট বিক্ষোভের দিন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে আগুন দিয়ে সব কিছু জালিয়ে দেয়া হয়। প্রতিটি রুমের দরজা খুলে নিয়ে রুম গুলো এখন ভুতুরে অবস্থা হয়ে রয়েছে। যেখানে গত ৩১ জুলাই ছাত্র জনতার আপন্দোলন ঠেকাতে মিটিং হয়েছে আজ সেটা নিরব ময়লার ডাম্পিংয়ে পরিনত হয়েছে। কিন্তু যারা আগুন লাগিয়ে সব কিছু জালিয়ে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা জানতেন এটা শামীম  ওসমানের কার্যালয়। এখানে বসে তিনি মিটিং করে তার নানা কুকর্মের অপরাধের নীল নকশা তৈরী করতেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর এই সম্পত্তিকে শামীম ওসমানের টর্চার সেল হিসেবেও ব্যবহার করা হত। যার জন্য রাইফেল ক্লাব নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরী হয়ে রয়েছে। আর এতে করে রাস্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন হয়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুটিং প্রতিযোগিতায় সাফল্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের। এই ক্লাবটি নারায়ণগঞ্জের গর্ব। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ৩টি সোনা, ২টি রুপা এবং জাতীয় পর‌্যায়ে ৯টি সোনা, ৩টি রুপা ও ৪টি ব্রোঞ্জ ক্লাবে জমা হয়েছে। শুধু শুটিংই নয়, দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসেও রয়েছে ক্লাবটির উল্লেখযোগ্য অবদান। ১৯৫০ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয় প্রশিক্ষণ। ১৯৬৪ সালে জাপান অলিম্পিকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে এ ক্লাব।

নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সদস্য শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ দেশের হয়ে রেকর্ড করেছেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সকল অর্জন গডফাদার শামীম ওসমানের কারণে এক মুহুর্তে তা সবকিছু যেন লুন্ঠন হয়ে গেল। কেননা এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঠেকাতে মিটিং করায় তা আগুন জালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর এতে করে রাষ্ট্রকে হারাতে হলো সম্পদ। গডফাদার শামীম ওসমানদের মত যেন আর কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের কার্যালয় বানিয়ে ব্যবহার করতে না পারে এই সম্পদকে। নানা অর্জনের খ্যাতি অর্জন করা ক্লাব এখন ময়লার ডাম্পিংয়ে পরিণত হয়েছে এক সময়ের শামীম ওসমানের টর্চার সেল।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন