শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

অচলাবস্থা হোসেয়ারী শিল্পখাতের

তানজিলা তিন্নি

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২  

 

# করোনার পর থেকেই ধুকছে মালিক-শ্রমিকরা
# সহজ শর্তে ব্যাংক লোন চান ব্যবসায়ীরা


বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। দেশের শিল্প বিপ্লবের প্রধান ভূমিকা রাখে নারায়ণঞ্জের হোসেয়ারি শিল্প। তবে বর্তমানে এই শিল্পের ব্যবসায়ী দের অবস্থা তেমন সচল নয়। নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠানের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নারায়ণগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার হোসেয়ারি কারখানা রয়েছে।

 

নারায়ণগঞ্জে থাকা বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তাদের সমিতির সদস্য প্রতিষ্ঠান আছে ৮০টি। যেখানে লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহী করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু বর্তমানে কী অবস্থা এই শিল্প খ্যাতের?  কোরবানির ঈদ কে সামনে রেখে বতমানে ব্যাবসার পরিস্থিতি ভালো নয় বলে তারা জানান । গত ২ বছর আগে পুরো বিশ্বে যখন করোনা মহামারির কারণে থমকে যায়, তখন থেকে এই শিল্প খ্যাতের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিছুদিন আগে মহামারির প্রকোপ একটু কমলে হোসেয়ারির ব্যবসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক  হয়। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাদের বর্তমান পরিস্থিতি আরো খারাপ যাচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।

 

নারায়ণঞ্জের উকিলপারা, নয়ামাটি, দেওভোগ, কাঠের দোতলা সহ আরো বিভিন্ন এলাকায় হোসেয়ারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ছোট প্রতিষ্ঠানে ৫ থেকে ১৫ পযর্ন্ত এবং বড় প্রতিষ্ঠানে ১৫০ জন পযর্ন্ত শ্রমিক কাজ করেন। স্বল্প টাকায় এই শিল্পে ভালো মানের কারিগর পাওয়া যায়। তবে কাজ শেখার পর অনেকেই নিজের উদ্দ্যেগে হোসেয়ারি দেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন। হোসিয়ারি শিল্পের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি স্বল্প পুঁজির ব্যবসা। ছোট্ট একটা ঘর আর সেলাই মেশিন, ওভারলক, লক মেশিন, ইস্ত্রি ও কাঁচি এবং আর কয়েকটি যন্ত্র থাকলেই চলে। এর বাইরে কাপড় কেনা ও ডাইং করার জন্য অল্প পুঁজি লাগে। চাইলে কারখানায় কোনো শ্রমিক নিযুক্ত না করলেও চলে। কারখানার মালিক নিজেই কাপড় কাটা ও সেলাইয়ের কাজটা চালিয়ে নিলেই হলো। শুরুতে স্যান্ডো গেঞ্জি ও নারী-পুরুষের অন্তবাস তৈরি হলেও নব্বইয়ের দশকে যুক্ত হয়  ট্রাউজার, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, সোয়েটার, টুপি, মোজা, বাচ্চাদের প্যান্ট-গেঞ্জি তৈরি করা হয়। ঢাকা সহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে এসব পন্য কিনতে এখানে আসেন। ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও যায় এসব পন্য।


তবে হোসেয়ারির মালিক ও কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানাযায় বর্তমানে এই শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। রোজার ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসার উন্নতির বদলে অবনতিই হয়েছে।


শহরের উকিল পাড়ার এক হোসেয়ারির কর্মচারি লিটন সরকার  বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো নেই, রোজা ঈদের থেকেও এখন আরো ভযাবহ অবস্থা। সামনে কোরবানির ঈদ তো চলেই আসছে, পাইকারি ব্যবসাইদের আর আসা নাই। ঈদের পরে বাজারের অবস্থা কেমন হয় তা নিয়েই আমরা চিন্তায় আছি। তিনি আরো বলেন এরকম ভাবে চলতে থাকলে তাদের জীবন-যাপন করা দায় হয়ে পরবে।

 

সেখানের আর একজন কর্মচারী বলেন,  ব্যবসার অবস্থা এতটাই খারাপ যে মালিক আমাদের বেতন দিতে পারছে না। রোজার ঈদের সময় ভালোই ছিলো, এখন খুবই খারাপ। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি ভালো না সার্বিক ভাবেই পরিস্থিতি খারাপ। এমনিতেও কোরবানির ঈদে ব্যবসা তেমন জমজমাট হয় না। আর ঈদের পরে ঠিক হবে বলে তারা আসা করছে না, সামনে বৃষ্টির মৌসুম এই মৌসুমে বেচা বিক্রি একটু কমই হয়। তবে আগামী শীতে ব্যবসা পরিস্থিতি ঠিক হওযা সম্ভবনা রয়েছে। সেপ্টম্বরের মাঝামাঝি  শীত শুরু হওয়ার আগে পাইকারী ব্যবসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তারা আসা করছেন।


নয়ামাটির এক হোসেয়ারি মালিক দিপক জানান, বিগত ১৫ দিনেও আমাদের বেচা বিক্রি হয়নি। করোনার থেকেও এখনকার অবস্থা অনেক খারাপ। এরকম অবস্থায় আমরা কারিগর দের বেতন দিতেও হিমসিম খাচ্ছি। আর বেতন না দিতে পারায় কারিগরা কাজ ছেরে চলে যায়।


এবিষয়ে বাংলাদেশ হোসেয়ারি অ্যাসোসিয়েনের সভপতি  নাজমুল আলম সজল বলেন,  আমাদের এই হোসেয়ারিগুলো বেকারত্বরহার কমিয়ে দিচ্ছে। এখান থেকে মানুষ কাজ শিখে মানুষ বেশি বেতনে গার্মেন্টে কাজের সুজোগ পায়। নারায়ণগঞ্জে হোসেয়ারি ব্যবসার অবস্থা দুই তিন বছর যাবৎ খারাপ। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি এই ব্যবসার দিকে একটু নজর দেয় এবং সহজ শর্তে ব্যাংক লোন নেওয়া সুযোগ করে দেয় তাহলে অনেকেই এই ব্যবসা দিয়ে আরো উন্নত লাভ করবে।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর