শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অটোরিকশার দাপটে লোকসান গুনছেন বাস মালিকরা

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২  

 

নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বেশ পরিচিত নাম শীতলক্ষ্যা ও দূরন্ত পরিবহন। তবে এখন আর সড়কে দেখা মিলে না এ দুটি বাসের। দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য বাসের মতো এ দুটিও বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

 

 

নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়কের যাত্রীদের কম খরচে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম ছিল দূরন্ত-শীতলক্ষ্যা পরিবহন। দূরন্ত ও শীতলক্ষ্যা বাস কাউন্টারের একাধিক পরিচালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বাসের চাহিদা কমে গেছে।

 

 

বর্তমানে বড় ধরনের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নিরুপায় হয়ে জীবনযাপন করছেন তারা। দেশের অন্যান্য জেলার মতো এখানেও ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা তুলনামূলক খুব বেশি। যার ফলে সড়কটিকে ইজিবাইকের আওতায় এনে যাত্রী আসা-নেওয়া করছে থ্রি-হুইলার চালকরা। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার পূর্ব পর্যন্ত অবৈধ থ্রি-হুইলারের সংখ্যা তেমন বেশি ছিল না বলে জানান কাউন্টার পরিচালকরা।

 

 

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলালকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৪ সালে দূরন্ত মালিক সমিতি নামে চালু হয় দূরত্ব পরিবহনের। তখন কাউন্টারগুলোর মাধ্যমে ৪৯টি গাড়ি চলতো।

 

 

দূরন্ত পরিবহনগুলোর কাউন্টার ছিল শিমরাইল মোড়, পাওয়ার হাউস, দুই নাম্বার স্ট্যান্ড, চৌধুরী বাড়ি স্ট্যান্ড, মেট্রো স্ট্যান্ড ও চাষাঢ়ায়। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এস.এম. জিল্লুর রহমান লিটনকে চেয়ারম্যান ও পরশ মন্ডলকে এমডি'র দায়িত্বে রেখে ২০০৬ সালে ২৪টি গাড়ি দিয়ে চালু করা হয়েছিল শীতলক্ষ্যা পরিবহন।

 

 

শিমরাইল থেকে কালীবাজার পর্যন্ত চলাচল করতো গাড়িগুলো। শীতলক্ষ্যার কাউন্টার ছিল শিমরাইল মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল, আদমজী, দুই নাম্বার স্ট্যান্ড, চৌধুরী বাড়ি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া ও কালীবাজারের দীগুবাবুর বাজার।

 

 

পরিচালকরা জানান, শুরুতে শীতলক্ষ্যা পরিবহন টিকিট সিস্টেমে চালু করা হয়েছিল। শিমরাইল থেকে দুই নাম্বার স্ট্যান্ড ও চৌধুরীবাড়ী ১০ টাকা, গুদারাঘাট ১৫ টাকা ও কালীবাজার ১৮ টাকা ভাড়া ছিল। একপর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে আনুমানিক ৬-৭ বছর আগে অভিলের মাধ্যমে সড়কে চলতো গাড়িগুলো।

 

 

কথা হয় শিমরাইল মোড় শীতলক্ষ্যা কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মোঃ আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবহন চালু হওয়ার দুবছর পর আমি এখানকার দায়িত্ব নেই। তখন আমরা খুব ভালো অবস্থায় ছিলাম। আমাদের প্রতিটি গাড়ির মূল্য ছিলো ৩০-৩৫ লাখের মতো। যখন ডিএনডি প্রকল্পের কাজের জন্য সাময়িকভাবে সড়ক বন্ধ হওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আমাদের।

 

 

তারপর ইজিবাইকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ার কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখানে সবসময়ই ইজিবাইক দিয়ে সড়ক দখল থাকে আমরা আর কিভাবে যাত্রী পাবো? শেষের দিকে গাড়ি মালিকরা হতাশ হয়ে গাড়িগুলো ভাঙারির দামে বিক্রি করে ফেলেন।

 

 

তিনি বলেন, মূলত ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার কারণে আমাদের গাড়ি আর চালু হয়নি। অটোর সংখ্যা বেশি হওয়ায় যাত্রী পাওয়া যায় না। তার উপর রাস্তাঘাটে জটলা লেগে থাকে। আমাদের ৩০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে।

 

 

মোঃ রিপন নামের আরেক দূরন্ত বাস মালিক জানান, যখন এ সড়কে গাড়ি চলতো তখন আমার নিজের তিনটা গাড়ি ছিল। ১০ লাখ থেকে ১১ লাখ টাকা করে আমরা গাড়ি কিনেছিলাম। তবে যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন ৭০-৮০ হাজার টাকায় আমরা গাড়িগুলো বিক্রি করেছিলাম।

 

 

এখন পরিবহন নেতারা বলছেন, সামনে হয়তো ডিএনডির কাজ শেষ হলে অটোরিকশাগুলোকে প্রশাসন চলতে দিবে না। তাই আমরা আশাবাদী আবারও আমরা এ সড়কে বাস নামাতে পারবো।

 

 

শীতলক্ষ্যা পরিবহনের চেয়ারম্যান এস.এম. জিল্লুর রহমান লিটন জানান, আমাদের বাসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, অটেরিকশাগুলোর জন্য বাসগুলোতে কেউ উঠে না। দেশে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের বাসগুলো বন্ধ। অথচ আমাদের কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেনি।

 

 

সারা নারায়ণগঞ্জ শহরে এমন একটা অবস্থা হয়েছে অবৈধ অটো রিকশার জন্য। একটি বাস চিটাগাংরোড থেকে যাত্রী দিয়ে পূর্ণ করতে আমাদের ২০ মিনিট সময় লাগতো। যাত্রীরা ২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা না করে অটোরিকশাতে চড়ে গন্তব্যস্থলে চলে যেত। যখন চিটাগাংরোডে সড়কের কাজ চলমান ছিল তখন আমাদের গাড়িগুলো প্রশাসন দাঁড়াতে দেয়নি।

 

 

এরপর মালিকরা ৩০ লাখ টাকার গাড়ি দেড় লক্ষ টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে ফেলেছে। অটোর কারণে বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে, অথচ প্রশাসন কেনো নীরব বুঝতে পারছি না।

 

 

পরিবহনগুলো চালুর পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিকল্পনা বলতে পরিবহনের যে ভয়াবহ অবস্থা। নারায়ণগঞ্জ শহরে অটোর জন্য কোনো ব্যবসা করা যায় না। আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা বড় গাড়িগুলো বিক্রি করে ফেলেছি এখন ছোট আকারের পরিবেশ বান্ধব যেটাতে বিদ্যুৎ খরচ হবে না তেমন গাড়ি আনার চেষ্টায় আছি।

 

 

তবে বাঁধা হিসেবে অটোরিকশা আছে। কালিবাজার থেকে শুরু করে কোথাও গাড়ি দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর