শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

অনন্য উচ্চতায় আইভী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২২  

 

 

# তৈমূরের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন আইভী
# তৈমূর চাচাকে নিয়ে কাজ করতে চাই : আইভী
# আইভীর জন্য অনেক দোয়া : তৈমূর

 

 

রাজনীতির এই যুগে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নবনির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ফলাফল ঘোষণার একদিন পরই তৈমূরের মাসদাইরের বাড়িতে ছুটে যান আইভী।

 

সেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়ে দেন তিনি। এছাড়া তৈমূর আলম খন্দকারের স্ত্রী ও কন্যাকেও জড়িয়ে ধরেন আইভী। সম্প্রীতির এই নজির গড়ার দিন নবনির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আইভী বলেন, ‘ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে তার (এড. তৈমূর আলম খন্দকার) পরামর্শ নেব, কাকা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। আমি যখন পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে আসলাম তখন তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। হীরালাল খাল, বোয়ালিয়া খালের জন্য তিনি অনেক সাহায্য করেছেন। মুসলিম একাডেমির জায়গার কথা কাকা বলেছেন, আমি দিয়েছি। তিনিও আমার একটা স্কুল করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। আমরা সবাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘যে যেই দল করি না কেন নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থে দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করা আমাদের উচিত। কাকা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নে চেষ্টা করবো। শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে আপনারাও আমার সহযোগিতা করবেন।’

আইভীর এই সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে নিজ বাড়িতে হাজির হতে দেখে তৈমূর আলম খন্দকারও পাল্টা বলেন, ‘আইভীকে মোবারকবাদ। তার সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি যেখানেই থাকি তার বাবা আলী আহমদ চুনকার জন্য দোয়া করি।

 

তৈমূর বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকে তার বাবা (আলী আহাম্মদ চুনকা) হাত ধরেই বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আমার রাজনীতিতে উত্থান। চুনকা ভাই আমার মাকে মা বলতেন, আমি তাকে ভাই বলতাম। তার মেয়ের পেছনে আমি আছি।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সে (আইভী) যে কোনো জায়গায় থাকুক, তার যে কোনো বিপদ-আপদে অদৃশ্য শক্তির মতো তার মাথায় আমার হাত আছে। তার পাশে আমি ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। অন্য কোন কথাবার্তা কাজে আসবে না। আমাদের এটা অন্তরের সম্পর্ক। আমার শ্রদ্ধাবোধ চুনকা ভাইয়ের জন্য আজীবন থাকবে।’


এদিকে আইভীর এই সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়িতে যাওয়ার দিনে ওই বাড়ির পরিবেশও হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। বৈরী রাজনীতির এই সময়ে এই দৃশ্য একেবারেই বিরল। আইভী যখন ওই বাড়িতে উপস্থিত হন, সেখানে উপস্থিত ছিল মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিকামালসহ অনেক বিএনপি নেতা। আইভীর সাথে তৈমূরের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আদিনাথ বসু, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক রানু খন্দকারসহ আরো অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে বৈরিতা তা ওই বাড়িতে ছিল একেবারেই অনুপুস্থিত। মেয়র আইভীর সাথে সাথে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারাও একে অন্যের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে দেখা গেছে।

আইভীর এই সম্প্রীতির বার্তা সামীবদ্ধ থাকেননি কেবল তৈমূরের বাড়িতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার কল্যাণে চাচা তৈমূরের বাড়িতে গিয়ে তাকে নবনির্বাচিত মেয়র ভাতিজী আইভীর মিষ্টি মুখ করানোর ছবি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নেট দুনিয়ায় সকলেই অন্তব্য করেন আইভী এক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করলেন। আইভীর এই সম্প্রীতির বার্তা যদি পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায় আর তা সকল রাজনীতিকরা গ্রহণ করে তবে আমাদের এই দেশটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিণত হবে। দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিকরাও আইভীর এই রাজনীতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, আইভী যা করলেন তা এক কথায় নজিরবিহীন। সাম্প্রতিক সময়ে এরধরণের ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়নি।  

সুধীজনেরা মন্তব্য করেন, আইভী যে নজির সৃষ্টি করলেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নারায়ণগঞ্জে সম্প্রীতির রাজনীতি অক্ষুন্ন থাকবে এবং এটি উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আইভী বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপি পরাজিত প্রার্থী এড. সাখাওয়াত হোসেনের বাড়িতে যান। সেখানেও তিনি সাখাওয়াতকে মিষ্টি মুখ করিয়ে সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেন। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৬ জানুযারি অনুষ্ঠিত নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারকে প্রায় সত্তুর হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে হ্যাট্রিক মেয়র নির্বাচিত হন।   রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬৯ হাজার ১০২ ভোটে জিতেছেন আইভী। আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।

এই বিভাগের আরো খবর