শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

অনন্য এক মেয়র আইভী

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২১  

বলা হয়ে থাকে একজন রাজনৈতিক নেতার স্বপ্নের সাথে যখন অগণিত মানুষের স্বপ্ন মিশে যায়, তার চিন্তা-কর্মের মাঝে যখন মানুষ আশার আলো দেখতে পায়, তখনই তিনি গণমানুষের নেতা হয়ে উঠেন। এমনই একজন মানুষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

 


অনেকটাই শূন্য থেকে শুরু করেছেন মেয়র আইভী। ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনে যখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বড় পরিচয় ছিল, তিনি প্রয়াত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে। সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী নুরল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে চমক দেখান সদ্য রাজনীতিতে প্রবেশ করা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ও পিতার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সে সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

 

এরপর ৮ বছর পৌরসভায় এবং ১০ বছর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে টানা মোট ১৮ বছর ধরে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের গন্ডি ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে আজ পরিচিত এক রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি মেয়র আইভী। দেশের যেকোনো স্থানে নারায়ণগঞ্জের কথা উচ্চারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়র আইভীর নাম নেয়া হয়। এই নাম একজন সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক সাহসের বাতিঘরের।

 

তবুও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরসভা আমল থেকেই মেয়র আইভীকে ঘায়েল করতে তৎপর একটি পক্ষ। কিন্তু কোনো নেতিবাচক প্রচারণাই মেয়র আইভীকে কাবু করতে পারেনি। উল্টো দিনদিন আরও জনপ্রিয় হচ্ছেন মেয়র আইভী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে কেন এতো জনপ্রিয় মেয়র আইভী? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে নারায়ণগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অপশক্তির বিরুদ্ধে আপোসহীন আন্দোলন-সংগ্রামের দিকে তাকালেই। মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জের শান্তিপ্রিয় মানুষের চাহিদা যেমন উপলব্ধি করতে পারেন, নারায়ণগঞ্জবাসীও তার সৎ সাহস ও লড়াইয়ের মনোভাব সম্পর্কে জ্ঞাত।

 

আধুনিক নারায়ণগঞ্জের রূপকার


২০০৩ সালে পৌর চেয়ারম্যান ও ২০১১ সাল থেকে সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে বদলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নগরীর চিরচেনা রূপ। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাসহ সারা দেশে আজ উন্নয়নের নতুন মডেল নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ সিটির উন্নয়ন আজ সারা বাংলাদেশে স্বীকৃত। পরিকল্পিত নগর গড়তে ব্যাপক রাস্তা-ঘাট নির্মাণ ও উন্নয়ন, সমন্বিত ড্রেনেজ সিস্টেম, পয়োনিষ্কাশন, জলধার সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও মাতৃসদন এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু; পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ, শহর থেকে ট্রাক টার্মিনাল সরানো, এনসিসির আয় বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব ভূমিতে মার্কেট ও ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং কাঁচাবাজারসমূহের উন্নয়ন, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ, শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ, নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুপারিশ, নাগরিকের সুবিধার্থে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় রাখাসহ নানান উন্নয়ন ককর্মকাণ্ডের কারণে মেয়র আইভীকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক নারায়ণগঞ্জের রূপকার।

 

তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বৃক্ষরোপণ, রাস্তায় রাতে বাতি জ্বালানো, জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠগুলো রক্ষা, প্রতিটি এলাকায় সমপরিমাণ উন্নয়ন তাকে নিয়ে গেছে সফলতার অন্য উচ্চতায়। সুপরিকল্পিত নগরায়নের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে শহরের বুকে নির্মাণ করেছেন শেখ রাসেল নগর পার্ক, বাবুরাইল খাল এবং সিদ্ধিরগঞ্জ খাল।

 


সাহসের বাতিঘর


কেবল নারায়ণগঞ্জ সিটির উন্নয়ন নয়, দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে তিনি লড়াই করছেন গডফাদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ সিটির সামগ্রিক উন্নয়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার আইভী। নগরীর গুম-খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্দ-বিরক্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে আইভীর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতার বিরুদ্ধে আপোসহীন মনোভাব তাকে করেছে জনপ্রিয়। মেধাবী ছাত্র ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে প্রতিবাদের অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। অনেকের মতে, রক্তচক্ষুকে ভয় না করার সাহস নগরবাসী পেয়েছেন মেয়র আইভীর কাছে। পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার মতো অল্প সময়েই মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন ডা. আইভী। রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা তিনি অল্প সময়তেই বুঝেছিলেন, মানুষ উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি চায়। সেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। যা তাকে নারায়ণগঞ্জবাসীর হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেকরা।

 


বাহিনী নয় জনগণই শক্তি


নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মেয়র আইভীর। নারায়ণগঞ্জের ক্ষমতাসীন দলের একটি বড় অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। নিজের বলয় বড় করতে অনেকে নিজস্ব বাহিনী তৈরি করলেও বরাবরই তা এড়িয়ে গেছেন তিনি। বরং জনগণই তার শক্তির উৎস বলে প্রায় সময় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের বাহিনী নেই বলে কোনো মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের শেল্টার দাতাদের সাথে তাকে আপোস করতে হয় না। কোনো বাহিনী তৈরি করেননি বলেই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বমহলে বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা।

 


অতিসাধারন


কারও কাছে তিনি আইভী আপা। কারও আবার নগরমাতা। জীবন যাপনে ও পোশাক-আশাকে অতি সাধারণ মেয়র আইভী মানেই নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে সততা ও নির্ভরতার প্রতীক। নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে তার রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তার কাছে যাওয়া যায়। নির্বাচনী প্রচারণায় কিংবা সিটি কর্পোরেশনের কোন কাজের উদ্বোধন কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে তাকে ঘিরে তৈরি হয় ভিড়, সমস্ত আলো পড়ে তার উপর। সহজেই মিশে যান মানুষের সাথে। রাজনীতিক যে উঁচুতলার মানুষ নন, তিনি হবেন গণমানুষের বন্ধু- তাদের সমব্যথী, এ কথাটাই বার বার মনে করিয়ে দেন মেয়র আইভী।

 


ক্লিন ইমেজ


ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ। বলা হয়ে থাকে এখানে বাতাসের সাথে টাকা উড়ে। সেই টাকার ভাগ পান নারায়ণগঞ্জের অপরাজনৈতিক শক্তি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও তার বিরুদ্ধে কিংবা তার পরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। বরঞ্চ একাধিকবার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও সুবিধা করতে পারেনি প্রতিপক্ষরা। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশেই ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে মেয়র আইভীর। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নিজ দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও তার এই ক্লিন ইমেজ স্বীকৃত। বিশ্লেষক মহলের দাবি, চুনকা কন্যা হিসেবে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও অনেক ক্ষেত্রেই আজকে নিজের জন্মদাতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। আধুনিক নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

 

আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হোক বা না হোক নারায়ণগঞ্জবাসীর হৃদয় থেকে তাকে সরানো দুঃসাধ্য। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ চুনকা কন্যা মেয়র আইভী। প্রবল ক্ষমতাধর ও বিত্তশালী এক চক্রের বিরুদ্ধে তিনি লড়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন। এই লড়াইয়ে তার সঙ্গী নারায়ণগঞ্জের আপামর জনগণ। তার কর্মীদের দাবি মেয়র আইভীর রয়েছে এক সম্মোহনী শক্তি। তার প্রমাণ ২০১৮ সালে হকার ইস্যুতে সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা। চারদিক দিয়ে সেদিন ইট-পাটকেল ছুটে আসছিল। ইটের আঘাতে চোট পেয়েছিলেন মেয়রও। এক পর্যায়ে সড়কের উপরই বসে পড়েন তিনি। এমন সময় মেয়র আইভীকে রক্ষা করতে কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি আপামর জনতা ঝাপিয়ে পড়েন। মানবঢল তৈরি করে মেয়রকে রক্ষা করেন তারা।

 

মেয়র আইভীর দাবি, সে সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিলেন সাংসদ শামীম ওসমান। সেইদিন মেয়র আইভীকে মানবঢালে রক্ষা করেছেন তার কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। এই ঘটনা ইতিহাসে বিরল। যে কারণে মেয়র আইভী শুধু আওয়ামী লীগের নয় নারায়ণগঞ্জবাসীর সম্পদ, অতি সাধারণ গণমানুষের নেতা।
 

এই বিভাগের আরো খবর