বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অনৈক্যের সুযোগে ভুঁইফোড়রা লাগামছাড়া

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২১  

আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর লাগামছাড়া কর্মকান্ড এখন ট্যক অব দ্যা কান্ট্রি। নারায়ণগঞ্জেও এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের বাহুল্যতায় অতিষ্ঠ আওয়ামী লীগের ত্যাগীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের আস্কারা না দিয়ে কঠোরভাবে লাগাম টেনে ধরার আহবান জানিয়েছেন।

 

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের মূল সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের বাইরে অন্তত  ৩০০’র মতো সংগঠন গজিয়েছে। মূল দলের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকলেও এসব ভুইফোড় সংগঠনগুলো দলের বিভিন্ন নেতাদের দ্বারস্ত হয়ে বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করে। এদের অপকর্মের দায় বর্তায় আওয়ামী লীগের উপর। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মূল সংগঠনের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি অন্তত ৭৩ ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম উল্লেখ করে আওয়ামী লীগে চলছে ব্যাপক আলোচনা।


 
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা রয়েছে তারাই মূলত আওয়ামী লীগের কর্মীদের নেতা হতে পারবেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ছাত্র লীগ, যুব লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর রাজনীতি করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলনা যখন নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই সময়ের রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিল। এই দুটি বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মূল কমিটি, উপ-কমিটি, জেলা-মহানগর ও উপজেলার কমিটি সাজানো হবে। তারা বলছেন, তবে ২০০৮সালের পর নিজেদের ব্যবসা গোছানোর জন্য, নিজেদের আখের গোছানোর জন্য আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদেরই ছত্রছায়ায় কিছু সুবিধাবাদী, টাউট, মুনাফাখোর, দুর্বৃত্তরা এবং অসৎ লোকজন বিভিন্ন লীগ নাম দিয়ে সংগঠন করার চেষ্টা করেছে।


 
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রের  ২৫ এর (৭) এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কোনগুলো। আমাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে কোনগুলো আমাদের সহযোগী সংগঠন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সবসময়ই প্রশাসনকেও বলেছেন, কোনগুলো ভুইফোড় সংগঠনের যারা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আরো বলেছেন, মূল দল এবং এর অঙ্গসংগঠনের বাইরে যেসব ভুইফোড় সংগঠনগুলোর যেসব ব্যানার ফেস্টুন রয়েছে সেসবও যাতে ভেঙে ফেলা হয়। আমরা মনে করি আমাদের গঠনতন্ত্রে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের বাইরে কিছু সামাজিক সংগঠন ব্যতিত ভিন্ননামে যেসব ভুইফোড় সংগঠন অনুমোদন বাদে তৈরি হয়েছে তাদের আওয়ামী লীগের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতেই তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’



এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে নেতায় নেতায় বিভক্তি। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে যেখানে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও  একই কমিটির নেতাদের একসাথে দেখা যায়না। যদি সভাপতি হাটেন একপথে তাহলে সাধারণ সম্পাদক যান ভিন্ন পথে। আর এসবের সুযোগটাই নিয়েছে এসব ভুইফোড় সংগঠনগুলোর নেতারা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের এই চিত্রটাও প্রকট। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোতে বিভক্তির দরুণ স্থানীয় কিছু নেতার আস্কারাতেই এসব ভুইফোড় নেতাদের আগমন ঘটে। আর এরা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নেতার সাথে ছবি দেয়া, তারপর একটা অনুমোদিত কমিটি এবং তাদের ব্যানারে ওই নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে  নিজেদের ভুইফোড় সংগঠনের বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করে। আর মূলত আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে বিভক্তির দরুণ  কমিটির কারো কারো আস্কারাতেই এসব ভুইফোড়রা লাগামছাড়া হয়।



সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ার পর মেয়াদ শেষ হয়ে বহু সময় গড়িয়ে গেলেও এখানে নেই কোন ঐক্য। জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থাও প্রায় একই। তাছাড়া জেলা যুব লীগ ও মহানগর যুব লীগের কমিটি  ও সরব কর্মীর সংখ্যা নিয়েও নানা প্রশ্ন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ শ্রমিক লীগ সব কমিটিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সুযোগসন্ধানীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের এই অনৈক্যের সুযোগটাই নেন। হয়তো এক কমিটির সাধারণ সম্পাদকের আস্কারা ও সমর্থনে অদ্ভুত এবং অনুনোমোদিত কমিটি দাড় করান। এরপর আওয়ামী লীগের নাম মর্যাদা ক্ষুন্ন করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।



এসব ব্যাপারে বারবার কথা বলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, কাউয়া-ব্যাঙ-হাইব্রীডসহ নানা নামে আমি বারবারই এসব ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো লীগ ধারীদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ করে আসছি। কিন্তু আমি তো শুধুমাত্র একটি কমিটিতে থাকিনা। আমি হয়তো সমর্থন দিলামনা কিন্তু কমিটির অন্য কারো সমর্থনে ভুইফোড়রা নিজেদের প্রকাশের সুযোগ পান। আমাদের দলেরই অন্য যিনি ভুইফোড়দের সমর্থন দিলেন তারা মূলত এটা করে তাদের ব্যক্তিগত শক্তি বাড়াতে। কিন্তু এতে হীতে বিপরীতেই হয়। ভুইফোড়দের অপকর্মের দায় এসে পড়ে আমাদের উপরই।



এব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য এড.আনিসুর রহমান দিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এসব ভুইফোড় সংগঠনগুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের ব্যানারে অতিথি করে। এটা করে মূলত তাদের বৈধতা আদায়ের চেষ্টায়। আমাাদের নেতৃবৃন্দ বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে কথা বলেন, এতে করে সেসব ভুইফোড় সংগঠনগুলোর বৈধতা চলে আসে। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেহুতু এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন আমাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’

এই বিভাগের আরো খবর