শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

অনৈতিকতার আখড়া পঞ্চবটির অ্যাডভেঞ্চার পার্ক

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২২  


# বিপাকে স্থানীয়রা, কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন তারা

# যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ওসি’র

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মিত অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড এমিউজমেন্ট পার্ক। যা ঢাকা–মুন্সীগঞ্জ সড়কে পঞ্চবটির মেথরখোলা এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ৬ দশমিক ২০ একর জমিতে জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনাল (প্রাঃ) লিঃ এর অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এটিই একমাত্র বিনোদন পার্ক।

 

 

শিশু এবং বিভিন্ন কর্মজীবীদের আনন্দ বিনোদনের জন্য বাসার 'দূরদর্শন' এর বাইরে পার্কের কোন বিকল্প নেই। তাই একটু আনন্দ আর বিনোদনের জন্য নানা পেশার কর্মজীবী মানুষ শিশু এবং শিক্ষার্থী ছুটে চলে আসেন এই পার্কে। পার্ক নিঃসন্দেহে শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

 

 

কিন্তু সম্প্রতি এই পার্কে বিভিন্ন কর্মজীবী মানুষ এবং অভিভাবকরা তাদের পরিবার পরিজন এবং ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে এসে পড়েছেন বিপাকে। বহিরাগত লোকজন এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, এমন অভিযোগ পেয়ে সোমবার (৩১ অক্টোবর) ওই পার্কে গিয়ে যা দেখা গেছে তাতে মনে হয় কর্তৃপক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।

 

 

পার্কের ভিতরের চিত্র দেখলে মনে হয় এ যেন তরুন তরুণী আর প্রেমিক-প্রেমিকার অনৈতিক মেলামেশার এক নির্জন অভয়ারণ্য। যা পশ্চিমা সিনেমাকেও হার মানায়। প্রথম দেখাতেই মনে হবে এই পার্কটি যেন তাদেরই দখলে। এখানে শুধু অবৈধ মেলামেশাই নয়, হয় বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবহারও। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

 

যার ফলে পরিবার নিয়ে এসে বিব্রতকর অবস্থার শিকার হন এখানকার দর্শনার্থীরা। অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্ক ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে বসে থাকে তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। এর মধ্যে স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।

 

 

স্কুল বা কলেজ চলাকালীন কিংবা বিকেলে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকার সঙ্গে পার্কে বসে আড্ডা দেয় প্রেমিকরা। অনৈতিক কাজের জন্য পার্কটিকে ব্যবহার করছে তারা। যা সত্যিই খুব দুঃখজনক একটি ব্যাপার। পার্কে বসে এমন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে অতিষ্ঠ এখানকার স্থানীয় সুশীল সমাজ।

 

 

তরুণ-তরুণীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ঘোর বিপাকে পড়েন বিকেলে পার্কে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ। সবার চোখের সামনে এসব হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন এখানে আগত দর্শনার্থীরা।

 

 

শাসনগাঁও এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কের অবস্থা দিনে দিনে খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। পার্কে বসে অনৈতিক কার্যকলাপ করে তরুণ-তরুণীরা। শুধু তাই নয় এখানে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় চলে গোপনে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবনও। পার্কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসে লুকিয়ে খারাপ কাজ করে প্রেমিক যুগল।

 

 

সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হল স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরে আপত্তিকর কাজ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন। তিনি আরো জানান, মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়ি পার্কের গেট পর্যন্ত এসে ঘুরে যায়। ভিতরের অনৈতিক কার্যকলাপ তাদের যেন চোখেই পড়ে না। তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।


 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দর্শনার্থী বলেছেন, পার্কের ভিতর যে অনৈতিক কার্যকলাপ চলে এগুলো কি পুলিশ দেখে না? নাকি পুলিশ চোখে কালো চশমা পড়ে থাকে? আসলে সবকিছুই তারা জানে কিন্তু জানার পরেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার কারণে পরিবার আর ছেলেমেয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়। এরকম অশ্লীল পরিবেশে বাচ্চাদেরকে নিয়ে আসা যায় না; কিন্তু আমাদের বাধ্য হয়েই আসতে হয়।


 

এ বিষয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম পার্কের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা অস্বীকার করে যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবেও এ ধরনের কার্যকলাপের বিরোধী। আমি চাইনা আমার পার্কে এ ধরনের কোন অসামাজিক কাজ হোক।’

 

 

শিক্ষার্থীদের অবাধে বিচরণ এবং অনৈতিক মেলামেশার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘স্কুল কলেজে পড়ুয়া কোন ধরনের ছাত্র-ছাত্রী স্কুল ড্রেস পরে পার্কে ঢুকতে পারে না। এ বিষয়ে আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে।’


 

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রিজাউল হক জানান, ‘বিষয়টি আমাদের অবগত নয়। এ ধরনের ঘটনার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে; আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর