শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অপকর্মের হোতা পিজা শামীমকে গ্রেপ্তারে বাধা কোথায়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৩  

 

# জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পুরনো
# জমির মালিকরা সন্তাসীদের কাছ থেকে মুক্তি চায়

 

 

নারায়ণগঞ্জের এমপি মেয়র থেকে শুরু করে সকল জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সভায় বলে থাকেন চাঁদাবাজ ভুমিদস্যুদের কোন ছাড় নেই। এমনকি প্রশাসনের ব্যক্তিরাও তা বলে থাকেন। কিন্তু যখন জায়গা দখল নিয়ে বড় ধরণের ঘটনা ঘটে তখন ভুক্তভোগীরা রক্তাক্ত, আহত হলেও তারা তেমন ভাবে বিচার পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ১৬ মার্চ বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায় কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাইসুল হকের পুত্র মাইনুল হক পারভেজ গংদের জায়গা দখল করতে শহরের হোন্ডাবাহিনী।

 

এই ঘটনায় ইতোমধ্যে বন্দর থানায় আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমকে প্রধান আসামী করে তানভীর আহম্মেদ মামলা করেছেন। যার মামলা নম্বর ৩৬। মামলায় উল্লেখ্য করা হয় শহরের চিহ্নিত ভুমিদস্যু পিজা শামীমের নেতৃত্যে অর্ধশত হোন্ডা করে শতাধিক লোক নিয়ে জায়গা দখলের জন্য অপারেশন চালান বলে অভিযোগ মাইনুল হক পারভেজের। জায়গা দখল কারীদের মাঝে ১১ জনের কাছে অস্ত্র দেখতে পান গুলিবৃদ্ধ হয়ে আহত পারভেজের স্ত্রী আদিবা সুলতানা। তিনি তার বক্তব্যে গণমাধ্যম কর্মীদের তা বলেন।

 

এদিকে মামলায় পিজা শামীম প্রধান আসামী হওয়া সত্ত্বেও এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ভুক্তভোগি প্রয়াত রাইসুল হক চেয়ারম্যানের ছেলে মেয়েরা আতঙ্কে রয়েছেন। সেই সাথে তারা প্রশাসনের কাছে মূল আসামী সহ বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবী জানিয়েছেন। একই সাথে তাকে এখনো কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না তা নিয়ে শহরবাসী প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা নগরবাসীর মতে প্রশাসন পারে না এমন কিছু নাই। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন বিভিন্ন ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তারা চাইলে আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারে বলে মনে করেন ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু বন্দরের জায়গা দখল নিয়ে গোলাগুলি ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তি ও মামলার প্রধান আসামী পিজা শামীম কে গ্রেপ্তারে বাধা কোথায় তা নিয়ে সচেন মহল প্রশ্ন তুলেছেন।

 

অপরদিকে পিজা শামীম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের বিষয়ে শহরের মানুষজন মুখ খুলতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, পিজা শামীমের প্রধান সহযোগী হিসেবে জায়গা দখল, চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি কন্টাক নেয় মুকিত ও মনির হোসেন। একই সাথে তাদের সহযোগী হিসেবে আমীরের নামও রয়েছে। তাদের শেল্টার দাতা হিসেবে এদের হর্তকর্তা হিসেবে আরও কয়েকজন রয়েছে। তাদেরও নাম প্রকাশ করতে পারে ভুক্তভোগিরা। বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন চালিয়ে জায়গা দখল করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া পিজা শামীমের বিরুদ্ধে শহরের কালিরবাজার এলাকায় ঢাকা ব্যাংক ভবনের তয় তলায় জোয়ার বোর্ড চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

 

সূত্রমতে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১০ মার্চ সকালে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার এলাকার আমান ভবনে একটি জুয়ার আসরে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রনে ছিলেন শহরের ডিস ব্যবসায়ী শামীম হায়দার ওরফে পিজা শামীম। তাকে প্রধান আসামী করা হয় বন্দরের জায়গা দখলের গোলাগুলির ঘটনায়। এর আগে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রাতে কালিরবাজার সিটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ২১ জুয়ারীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সিটি ক্লাবের পরিচালনায়ও ছিলেন ডিস ব্যবসায়ীদের নেতা শামীম ওরফে পিজা শামীম। সূত্র মতে, শহরের আলোচিত এই পিজা শামীম ফের নতুন করে একটি অফিস নিয়েছে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের একটি ভবনের তিন তলায় এই অফিসের মাধ্যমে আবার জম জমাট ভাবে জুয়ার আসর বসায় বলে জানান একাধিক ব্যক্তি। এছাড়া তার বিরুেেদ্ধ চাদাঁবাজির অভিযোগ উঠেছে।

 

শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জের চিত্তরঞ্জন স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বন্দরের গোলাগুলির ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি আমার বড় ভাই ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বন্ধু। শহরের সচেতন মহল বলেন, ডিস ব্যবাসয়ী নেতা ও হোন্ডাবাহিনীর সেকেন্ড ইনকমান্ড আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমই হচ্ছেন সেলিম ওসমানের বন্ধু। অপরদিকে ২০১৮ সনের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সড়কের পাশে নম পার্ক এক অনুষ্ঠান শেষে এই পিজা শামীমকে সাংসদ সেলিম ওসমানকে চর থাপ্পর মাড়েন। একই সাথে গালা গালি করে চর থাপ্পর দিতে থাকে।

 

সর্বশেষ ১৬ মার্চ বন্দরে জায়গা দখলের ঘটনার মামলা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য জোরালো ভাবে দাবী উঠেছে। এই ভাবে পিস্তল নিয়ে অর্ধশত হোন্ডা দিয়ে শতাধিক লোক হালা চালিয়ে যেন কোন ক্যাডার বাহিনী জায়গা দখল করতে না পারে তার জন্য দাবী তুলেছেন নগরবাসী। গুলিবৃদ্ধ আহত মাইনুল হক পারভেজ বলেন, পিজা শামীম তার গুন্ডাবাহিনী নিয়ে যে ভাবে আমাদের জায়গা দখল করতে আসছে তাতে পুরো এলাকাবাসী আতঙ্কে ছিলেন। এমন ভাবে  অর্ধশতাধিক হোন্ডা নিয়ে তারা যে জায়গা দখল করতে আসছে তা অনেকে বুঝতে পারে নাই। আমরা এই পিজা শামীম সহ তার গুন্ডাবাহিনীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবী জানাই।

 

উল্লেখ্য, মামলা সূত্রে জানাযায়, ১৬ মার্চের বন্দরের জায়গা দখলে গোলাগুলির ঘটনায় তার পরের ১৭ মার্চ বন্দর থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ্য করে এবং ৩১ জন অজ্ঞাত করে তানভীর আহম্মেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৩৬। শহরের চিহ্নিত ভুমিদস্যু সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমকে প্রধান আসামী করে বন্দর থানায় মামলা করা হয়। ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৩২৫/৩২৬/৪৩৬/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোডে বন্দর থানায় মামলা হয়।

 

মামলার আসামীরা হলেন, মৃত রোস্তম আলীর ছেলে আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম, সেকান্দার মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদ, রায়হান জাদা রবি, মামুন, মনির হোসেন মনা, কবির, আমির হোসেন, উৎসব, মুকিত, মুহিদ, পাঠান রনি সহ অজ্ঞাত ৩০ জনের মত। তার মাঝে ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন ৬জনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, রায়হান জাদা রবি, মামুন, কবির, মনির হোসেন, সিয়াম, রনি গ্রেপ্তার হন। পুলিশ প্রশাসনের দাবী আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার তদন্তকারী বন্দর থানার এস আই তছলিম জানান, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারর জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর