বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অবৈধ তেলের কোটি টাকা নুরুর পকেটে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২১  

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে তেলের ডিপোর চারপাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান। এসব দোকানে থাকে অবৈধ জ্বালানি তেলের মজুদ। ডিপোর চুরি যাওয়া জ্বালানি তেলের একটি অংশ অবৈধ দোকানিরা স্বল্পমূল্যে ক্রয়ের পর বিক্রি করছিলো এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। লাইসেন্সহীন কতিয় অবৈধ ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ডিপোর চারপাশে খোলামেলা ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল অবৈধ তেলের রমরমা ব্যবসা।

 

শুরুতেই অভিযোগ ছিলো, একটি আসাধু পক্ষ এসকল দোকানি ও তেলচোর সিন্ডিকেটের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মেতেছিলো চাঁদাবাজির মহোৎসবে। এবার গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ওই চাঁদাবাজ মহলটির মুখোশ উন্মচিত হয়েছে। বেড়িয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্যও। চাঁদাবাজির একটি মামলার তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য আসে- ‘নুরু নামে সাবেক এক পুলিশ সদস্য (নুরু ক্যাশিয়ার) সহ সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কয়েকজন কথিত সাংবাদিক ওই চাঁদাবাজির সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছে। ডিপোর চারপাশে গড়ে উঠা এসব অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করে আসছে ওই অসাধু পক্ষটি।

 

তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাঠ পর্যায়ের একটি চক্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও বিভিন্ন মহলের নাম করে কেবল সিদ্ধিরগঞ্জের ৪০টি অবৈধ তেলের দোকান থেকে দু’হাজার টাকা করে মাসে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে চক্রটি। বছরে এর অংক দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এভাবে বছরের পর বছর অবৈধ তেলের কোটি টাকার চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ সূত্রটির। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জসহ নরসিংদি জেলা জুড়ে আরো বিভিন্ন অবৈধ সেক্টর থেকে নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক পুলিশ সদস্য নুরু ওরফে নুরু ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে।   

 


ডিবি সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ই মে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের তেলের ডিপো এলাকায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আমিনুর রহমান। অভিযানে ডিপো সংলগ্ন জ্বালানি তেলের দোকান থেকে চাঁদা উত্তলনরত অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নং ঢাকেশ^রী এলাকার ওবাইদুল্লা খলিফার ছেলে ডিবির সোর্স হোসেন প্রধান ওরফে মিষু (৫৮), নারায়ণগঞ্জের ১ নং বাবুরাইল এলাকার আঃ হামিদের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বিষু (৫৫) এবং ফতুল্লার ফাজিলপুর এলাকার মৃত রইছ প্রধানের ছেলে মোকলেছ প্রধান (৫২)কে চাঁদা উত্তোলনের নগদ টাকাসহ হাতেনাতে আটক করা হয়।  


ওই ঘটনায় গত ৬ই মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে ডিবির এসআই আমিনুর রহমান। পরে মামলার প্রধান আসামী হোসেন প্রধান ওরফে মিষুর (ডিবির সোর্স) জবানবন্দিতে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জবানবন্দিতে আসামী মিষু জানান, ইতিপূর্বে সে ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতো। বর্তমানে জালকুড়ি এলাকায় মুদি দোকানের ব্যবসা করলেও ব্যবসার আড়ালে সাবেক পুলিশ সদস্য নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুর পক্ষে সিদ্ধিরগঞ্জের বার্মশিল এলাকায় ২০ টি এসও রোড এলাকায় আরো ২০টি সহ প্রায় ৪০টি অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান থেকে পুলিশের নামে চাঁদা উত্তোলন করছিলো। নুরু ক্যাশিয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তালন করতো কথিত এই ডিবির সোর্স। সে হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন হয়। এই চাঁদার অংশ থেকে নুরুর নির্দেশেই ১৫ থেকে ২০ জন অসাধু সাংবাদিককে মাসে এক থেকে দু’হাজার টাকা করে মাসোহারা দেয়া হতো। অবশিষ্ট চাঁদার টাকা চলে যেত সাবেক পুলিশ সদস্য নুরুর পকেটে।  


বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, নুরু মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তার অবৈধ সেক্টরের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আর এই পন্থায় সে একাধিক বাড়ি ও গাড়ির মালিকও বনে গেছে। সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশেই নুরুর মালিকানা দু’টি হাইয়েস গাড়ি রয়েছে। অসাধু কিছু কর্মকর্তার কাঁধে ভর করে নুরু এখন কোটিপতি!  


জানা গেছে, কেবল সিদ্ধিরগঞ্জেই নয়, ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত মেঘনা ও যমুনা ডিপো ঘিরে বিশেষ পেশার কিছু লোকের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাচ্ছে এই ক্যাশিয়ার নুরু। অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একাধিক উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই সাবেক কনস্টেবল নূরুর চাঁদাবাজীর মহোৎসব চলমান রয়েছে। নূরুর অভিযোগেই বেশ কয়েকদিন আগে আটক করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক সোর্স ও অবৈধ অর্থের ক্যাশিয়ার আনোয়ারকে। আনোয়ার নূরুকে উপেক্ষা করেই নিয়মিত সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার অবৈধ তেলের চাঁদার টাকা ভোগ করে আসছিল।

 

পরবর্তীতে নুরু গোয়েন্দা পুলিশর শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করলে ওই কর্মকর্তা আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে রূপগঞ্জের একটি চাঁদাবাজীর মামলায় আসামী করে এবং পরবর্তীতে আনোয়ারকে হেফাজতের চলমান তান্ডবের মামলাগুলোতে শ্যোন এরেষ্ট দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করে। জানা গেছে, আনোয়ার বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছে এবং আদালতের নির্দেশে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  

এই বিভাগের আরো খবর