# এড. দিপু-জাহাঙ্গীর তরুণদের মতোই নেতৃত্ব দিয়েছেন
# দক্ষ হাতে দায়িত্ব নিয়েছেন কাদির-আসাদ-আদিনাথ
# তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত হতে দেননি সুফিয়ান
# শহীদুল্লাহ’র অভিজ্ঞতার ঝুঁিড় যেন সমৃদ্ধই করলো
উন্নয়নে যেমনি প্রথম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ঠিক তেমনিও এর নির্বাচনী উত্তাপও বেশ আগে থেকেই ছড়ায় সারাদেশে। নির্বাচন যখন আসে তখনি আইভীকে নিয়ে একের পর এক অপপ্রচারও দেখতে অভ্যস্ত দেশবাসী। আইভীকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক দেয়ার খবরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম কেন অজ্ঞান হয়ে যায় সেই প্রশ্নের উত্তরও দেশবাসী ভালোভাবেই জানে। উদ্বেগ-আর উৎকণ্ঠার পারদ যে কতখানি উপরে উঠেছে আইভীর মনোনয়ন প্রাপ্তির পর জাহাঙ্গীরের অসুস্থতার সেটিরই প্রমাণ বহন করে। এযেন শুধু আইভীরই প্রাথমিক বিজয় নয়, এযেন আওয়ামী লীগের সাতজন নেতারও লড়াইয়ের প্রাথমিক বিজয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ দুই নেতার কারণে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা ছিন্নবিচ্ছিন্ন। আইভীকে সমর্থন করা মানেই যেন চক্ষুশূল হয়ে যাওয়া। তবে ছাত্রনেতা থাকাকালীন সময় থেকেই ঠোটকাটা তোলারাম কলেজের সাবেক জিএস জাহাঙ্গীর আলম। সবসময়ই আইভীর হয়ে সত্যটি সামনে তুলে ধরেছেন। এই তো মাত্র কদিন আগে মুখ ফসকে একটি কথা বেরিয়ে যাওয়ার পর ক্ষমা চেয়েও ক্ষমা পাননি, তবে অতীত কর্মকাণ্ড আর দলের প্রতি বিশ্বাস তাকে সাময়িকভাবে হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছে। উদ্বেগ-আর উৎকণ্ঠার পর প্রাথমিক বিজয় প্রাপ্তিতে আত্মহারা তো হবেনই জাহাঙ্গীর আলম।
কোন অংশেই কম যাননা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিসুর রহমান দিপু। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কী হয়েছে তা সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। তবে দিপু যে দমবার পাত্র নয়। আইভীর পাশে যখন কেউ সমর্থন যোগাচ্ছিলনা, ছায়ার মতো পাশে ছিলেন এড. আনিসুর রহমান দিপু। আইভী ছাড়া আওয়ামী লীগের মনেনায়ন চাওয়া বাকি তিনজন এড. আবু হাসনাত শহীদ বাদল, এড. খোকন সাহা, বাবু চন্দনশীল। তারা প্রত্যেকেই এড.দিপুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তবে বাকিদের পথ ছিল আলাদা আর দিপু বেছে নিলেন কঠিন পথ। জেলা আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খল পরিবেশে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এড. দিপু। তবে তিনি যে ভুল ছিলেননা সেটিই প্রমাণিত হলো। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কারণে আইভীর অনুসারী সবাই ছিল সুশৃঙ্খল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও সুশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের হতাশ করলেননা। আস্থা রাখলেন আইভীর উপর। এ যেন আইভীর সাথে সাথে এড.দিপুরও প্রাথমিক বিজয়। মূল লড়াই ১৬ জানুয়ারি। আইভী তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলে এই জয়ে অবদান থাকবে এড. দিপুরও। আইভী নৌকা পাওয়ার পর এককথায় উত্তর, মনোনয়ন চাওয়া ব্যক্তিরা সবাই ভালো। তবে আইভী সেরাদের সেরা।
জেলা আওয়ামী লীগ যখন দুই নেতার কথায় বন্দি। তখন সামনে থেকে এগিয়ে এসেছেন আরো তিন নেতা। যুবলীগ জেলার সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল কাদির, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক পিপি এড.আসাদুজ্জামান আসাদ, আদিনাথ বসু। আবদুল কাদির যেমন জোরালোভাবে যুবলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনি সফল জেলা আওয়ামীলীগেও।
এড. আসাদুজ্জামানও কম যাননা। লোভ লালসা ত্যাগ করে তিনি সবসময়ই ছায়ার মতো ছিলেন আইভীর পাশে। আলাদ করে বলতে হয় আদিনাথ বসুর কথাও। দেবোত্তর সম্পতি নিয়ে যখন কিছু হিন্দু নেতা আইভীর কুৎসা রটনা করে গেছেন, বুক চিতিয়ে যেন ঢাল হয়ে লড়ে গেছেন আদিনাথ বসু। জেলা আওয়ামী লীগের এই তিনসহ-সভাপতি নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের পুরো সহ-সভাপতি প্যানেল টিকেই। একচেটিয়া কুক্ষিগত করে ফেলা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যকরীসভাও এই তিন নেতার নেতৃত্বে বয়কট করেছিলো জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা।
ঠিক যেন নীরবেই অনেক কাজ করলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান। ২০১১ সালে তার নৈপুন্যে বিপুলভোটে সিংহপুরুষ হিসেবে খ্যাত এক নেতাকে হারাতে ভোটব্যাংক সংগ্রহের মিশনে নেমে জয়ী হয়েছিলেন সুফিয়ান। ২০১৬ সালেও হয়েছিলো একই ফলাফল। আইভীর সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করে একটি পক্ষ যখন পানি ঘোলা করতে ব্যস্ত অনেকটা নীরবে নিভৃতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন আবু সুফিয়ান। নানা অনুষ্ঠান আর কর্মসূচি পালন করে পুরো বছর নেতাকর্মীদের সাথে রেখেছেন তিনি। অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই তাই আর পথভ্রষ্ট হননি।
অভিজ্ঞতা যেন সবকিছুকেই ম্লান করে দেয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ সদস্য মো. শহীদুল্লাহ। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ যখন আইভী সমালোচনায় মত্ত, তখন শহীদুল্লাহ আইভীর উন্নয়নকাজগুলো এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের চিত্রগুলো তুলে ধরতে এতোখানি কার্পণ্য করেননি। বয়সে প্রবীণ হলেও নেতৃত্ব দিয়েছেন নবীনের মতো।
এই সাত নেতার ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই যেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন নারায়ণগঞ্জ সিটি বাসী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে পেলেন। পাকা জহুরির মতো খাঁটি সোনাই বেঁছে নিলেন। আবারও তিনি বিনা দ্বিধায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের জন্য ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনিত করলেন। এই সংবাদ নারায়ণগঞ্জে পৌঁছানো মাত্রই উৎসব রবে পুরো শহর। খবর শোনার পর থেকেই শহরের মিষ্টির দোকানগুলো ফাঁকা। ক্ষণে ক্ষণে বেরোচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল। ভোট ১৬ জানুয়ারি। তবুও এযেন প্রাথমিক বিজয়। এই বিজয়টি যেন আইভীর সাথে সাথে এই সাত নেতারও বিজয়।
নৌকার প্রার্থী মনোনিত করায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এছাড়া মনোনয়ন প্রাপ্তির পর আইভী কিছু কথা বলেছেন। তিনি কেন সেরা সেসব কথার মধ্য দিয়েই তা প্রমাণিত হয়। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের দলের স্বার্থে নৌকা প্রার্থীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে নৌকার স্বার্থে, প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থে আমরা একসাথে সকলে মিলে কাজ করবো। আমি সকলকেই এই আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সকল ধরণের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নেত্রীর পাশে দাঁড়াবো। নৌকার পাশে দাঁড়ানো মানেই নেত্রীর পাশে দাঁড়ানো। নৌকার পাশে থাকা মানেই আমাকে এখন জয়যুক্ত করা। নৌকা এখন উন্নয়নের মার্কা। জনতার মার্কা। জনতার মার্কাকে আমরা জয়যুক্ত করবো ইনশাল্লাহ।’


