শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইভীর হ্যাট্রিক বিজয় ছিল প্রত্যাশিত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২২  

 

# এই জয় আইভীর প্রাপ্য : রফিউর রাব্বি
# এই বিজয়টা আইভীর কর্মেরই ফল : হালিম আজাদ
# সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জগণের একটা রায় : এড.মাসুম



আইভীর হ্যাট্রিক বিজয়ে উচ্ছসিত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগসহ আইভী ভক্তরা। তার এই বিজয় নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো সাহসী ভূমিকা নিতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জবাসী। তবে এই বিজয়ে যতটা প্রতীক বা দলের অবদান তারচেয়েও অনেক বেশী আইভীর ব্যক্তিগত ইমেজ বলে মন্তব্য করেছেন সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যাকিবর্গ। তাদের অনেকে আবার আইভী যেভাবে এলাকার উন্নয়ন করেছে, সে হিসেবে তাকে জয়ী হতে এতটা পরিশ্রম করার প্রয়োজন হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর নির্ভরশীলতা হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেও মনে করেন তারা। তবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দায়ী করে এর পরিবর্তনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করছেন কেউ কেউ। তবে এই বিজয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নকে আরো তরান্বিত করবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সচেতন মহল।
 
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, গত দীর্ঘ ১০ বছরে আইভীর যে উন্নয়ন কর্মকান্ড তাকে জনগণ খুশি হয়ে তাকে বিজয়ী করেছে। এটা তার প্রাপ্য। তিনি সন্ত্রাসী ও অপশক্তির বিরুদ্ধে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন এজন্য জনগণ তাকে ভোট দিয়ে আবারো হ্যাট্রিক মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, এই বিজয়টা আইভীর কর্মেরই ফল। তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে যেসব কাজকর্ম করেছেন এবং তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পারিবারিক যে ধারা বজায় রেখে যেভাবে কাজগুলো করেছেন। তারমাধ্যমে তিনি মানুষের কাছে একটি ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। নিঃস্বার্থভাবে তিনি কাজ করে গেছেন। বন্দর এলাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে একটি রিকশা চলতেই কষ্টকর হয়ে যেত সেই বন্দরকে তিনি এডিবি থেকে লোন এনে তিনি আধুনিক নগরী হিসেবে রূপান্তর করেছেন। নারায়ণগঞ্জ এর অবৈধ দখল কারীদের হাত থেকে তিনি জায়গা উদ্ধার করে উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সেই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের মানুষই তাকে আবারও মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তাই এই ফলাফল তার কর্মের কারণেই হয়েছে। তিনি বলেন, এই শহরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করত না। ত্বকীসহ কতগুলো ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এ সব বিষয়ে কেউ মুখ খুলতো না।
 
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, এই জয় হলো মানবতার জয়, সত্যের জয় এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জগণের একটা রায়। মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন সে সন্ত্রাস ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিবাদ করেছে, সেই প্রতিবাদের মধ্যদিয়েই তার নিজের ইমেজ তৈরি হয়েছে। মেয়র হিসেবে তাকে ভোট দিলে তিনি জনগণকে সন্ত্রাসের হাত থেকে নিরাপত্তা দিবে। একারণেই জনগণ তাকে ভালবাসে। তার এই ভাবমূর্তিসহ সে যে উন্নয়ন করেছে তাতে জনগণের এখনকার চিন্তা হলো ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জকে শান্তিময় করার জন্য সে কাজ করবে। তাই তার হাতকে শক্তিশালী করতে জনগণ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
 
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, এ বিজয় কিন্তু হ্যাট্রিক বিজয়, এর আগেও দুইবার তিনি জিতেছেন। সমস্ত ষড়যন্ত্র ও অপশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তিনি হ্যাট্রিক করেছেন, এটাই হলেন আইভী। সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করে সমস্ত অপশক্তিকে উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এর কারণ হলো তিনি গণমানুষের নেত্রী, তিনি ভাল মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাই তাকে কোন অপশক্তি এবং অপচেষ্টা হারাতে পারেনি।
 
নারায়ণগঞ্জ খেলাঘর এর সভাপতি রথীন চক্রবর্তী বলেন, এটা পরিস্কার যে, এখানে সত্যের জয় হয়েছে। এই জয় হলো আইভীর ব্যক্তিগত কৃতকর্ম বা কাজকর্মের ফল। এখানে প্রতীকের তুলনায় ওনার ব্যক্তিগত গুনটা অনেক বেশী। সারা দেশেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ফলাফলে নেতিবাচক একটা প্রভাব আছে। তা সত্ত্বেও ওনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মতো একটি জায়গায় একন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির নির্বাচন না করলেও তিনি তো বিএনপিরই নেতা। তাই বিষয়টিকে ওভারকাম করে বিজয় লাভ করাটা একটি বিরাট বিষয়। এর বাইরে তার নিজ দলের অভ্যন্তরেও যে দীর্ঘকালীন বিরোধ, সেই বিরোধটাকেও তিনি ওভারকাম করতে পেরেছেন। জনগণই যে ক্ষমতার উৎস এটা তার প্রমাণ। তাই এই বিজয়টা ওনার প্রাপ্য ছিল। জনগণই তাকে জয়মাল্য পড়িয়েছে।
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার বলেন, মেয়র হিসেবে আইভীর হ্যাট্রিক বিজয় হলো একজন নারীর সর্বোচ্চ সফলতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়ণটাকে আইভী যেভাবে ধরে রেখেছে তা একটি বিরল ঘটনা। নারী সমাজের জন্য এটা একটি বিশাল পাওয়া। তিনি বলেন, আইভীর বিগত দিনের কার্যক্রম এতটা ব্যাপক থাকার পরও যে মেয়েটা তার যোগ্যতাকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে। তারপরও নির্বাচনের আগে একটানা পনের দিন এই মেয়েটাকে যেভাবে হয়রানি হতে হয়েছে, তা আমার কাছে খুবই দুঃখজনক বিষয়। নৌকা জয়ী হবে আমরা আগে থেকেই জানতাম। তবে এভাবে যে আসবে তা আমার জানা ছিল না। আইভীর কর্মকান্ড তার জয়টাকে আরো সহজ করে দেওয়ার কথা। তার কোন পরিশ্রম করারই কথা ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের আভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় যা বলা যায় না এমন একটা কারণেই আজকে সবাইকে এতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ঢাকা থেকে কেন্দ্র থেকে নেতাদের ডেকে আনতে হয়েছে। তিনি বলেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনটা কলুষিতই আছে। যেখানে নারায়ণগঞ্জকে আওয়ামী লীগের সূতিকাগার বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় শহর বলা হয়, যেখানে শেখ হাসিনার ঘাটি, আওয়ামী লীগের ঘাটি। সেক্ষেত্রে এতটা ঘাম জড়াতে হবে, আর তার বিনিময়ে এত কম ভোট পাবে এতটা আমি আশা করি নাই। নারায়ণগঞ্জের না জেলা কমিটি শক্তিশালী, না মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি শক্তিশালী। এখানকার বড় ধরণের কোন নেতাই তাদের রোল তারা প্লে করতে পারেনি। ঢাকা থেকে নেতার এসেছেন তাদের সাথেই তারা নাচানাচি করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তারা এই বিষয়টাকে শক্তহাতে হ্যান্ডেল করতে পারেনি। এটা নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। রুট লেবেলের নেতারা যেভাবে চেষ্টা করেছে, ক্ষমতায় বসে থাকা নেতাদের কোন ভূমিকাই ছিল না। মহিলা আওয়ামী লীগতো তার পাশেই ছিল না, কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, শক্তিশালী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের অঙ্গনটাকে সাজানোর চিন্তা করতে হবে। শক্তিশালী সাংগঠনিক লোকদের এখানে নিয়োগ দিতে হবে। এই কদিন আইভীকে সারাটক্ষণই রাস্তায় থাকতে হয়েছে। তার সাথে মাঠে ছিল রুট লেবেলের লোকেরা। অথচ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যে ছিল সেছিল স্বতন্ত্রের প্রার্থী। তার সাথে দল ও নেই। অথচ এমন একজন প্রার্থী ৯২ হাজার ভোট কীভাবে পায়। তারমানে তৈমুর আলম খন্দকার অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, তার সাথে আমাদের দলের লোকেরা ইনডাইরেক্টলি সহযোগিতা করেছে। আমার মনে হয় এখানে আওয়ামী লীগের ভিত্তিটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন। না হলে অদুর ভবিষ্যতে এখান থেকে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, অনেক বাধা-বিঘ্ন ও অপপ্রচার থাকার পরও আমাদের বিশ্বাস ছিল এবারও আইভী বিজয়ী হবে। তার বিগত দিনের কার্যক্রম, তিনি সন্ত্রাসীদের সাথে কখনও আপোষ করেননি। নারায়ণগঞ্জকে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য প্রথম থেকেই তিনি যে সাহসী ভূমিকা চালিয়ে গেছেন, সন্ত্রাসী ও খুনিদের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী কন্ঠ ছিল। তাছাড়া দৃশ্যমান উন্নয়ন যা ছিল চোখে পড়ার মত। এসব কারণেই তিনি বড় ধরণের ব্যবধানে জিতেছেন। এ সময় তিনি মেয়র আইভী পরিবেশের দিকে বিশেষ নজর দিবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করব তিনি বিশেষ করে শীতলক্ষ্যা নদীটাকে দুষণ মুক্ত করবেন, খালগুলো উদ্ধার করবেন, গাছপালা লাগাবেন। অবশ্য তিনি পরিবেশের উন্নয়নের কাজগুলো অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে এবিষয়ে বলেন, এটি জনতার জয় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যে সবসময় শান্তি পছন্দ করে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান, নিরাপদ শহরের যে প্রত্যাশা আইভীর বিজয়ে সেটি আবারো প্রমাণ হয়েছে। আইভীর ১৮ বছরের দায়িত্বে তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে তিনি আসলে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। নিরাপদ শহর রাখতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময় সরব ছিলেন আইভী। আর তাই জনগণ তাকে হতাশ করেনি।
 

এই বিভাগের আরো খবর