শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আউয়ালে চটেছে আ’লীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২১  

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে শনাক্ত হচ্ছে ভারতীয় করোনার ধরণ। প্রতিনিয়তই তা বৃদ্ধিও পাচ্ছে। ফলে ভয়াবহ এই করোনার সংক্রমণ এড়াতে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। যা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা।

 

তবে, সরকার ঘোষিত লকডাউনের বিরোধীতা করে এর কঠোর সমালোচনা করছেন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও নারায়ণগঞ্জ ওলামা পরিষদের সভাপতি এবং শহরের ডিআইডি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল। গত দুই জুমার খুতবায় তিনি সরকারের এই লকডাউন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে গত ২ জুলাই শুক্রবার জুমার খুৎবায় মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, ‘সরকার পড়ে যাবে।’ এভাবে প্রায় প্রতিটি জুমার খুৎবায় রাষ্ট্র বা সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধীতা ও সমালোচনা করছেন, ছাড়ছেন হুংকারও। তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চটেছেন মাওলানা আব্দুল আউয়ালের প্রতি। তাদের মতে, মাওলানা আব্দুল আউয়াল বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের উস্কে দিতে চাইছেন।

 


এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘হেফাজত ইসলামের নেতা ও ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল জুমার খুৎবায় বসে প্রতিনিয়তই রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কথাবার্তা বলে মানুষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। করোনার সংক্রোমণ এড়াতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সরকার যখন লকডাউনের ঘোষণা দিচ্ছেন মানুষকে সংক্রোমণ থেকে বাঁচাতে, তখন এর বিরোধীতা করে মাওলানা আউয়াল প্রকাশ্যে লকডাউন নিয়ে সমালোচনা করছেন। এছাড়াও তিনি বলছেন, মাক্স পড়ে লাভ নাই! এগুলো কোন বক্তব্য নয়। তিনি বিজ্ঞানকেও অস্বীকার করছেন।

 

আমরা দেখেছি, করোনার সংক্রমণ এড়াতে সৌদী আরবেও লকডাউন দেয়া হয়েছে। হজ্ব বন্ধ ছিলো। প্রবাসীরা যারা সৌদী আরবে যায়, তারা দু’টি ভ্যাক্সিন নিয়ে ও করোনা পরীক্ষা করিয়ে তারপর সৌদী আরবে যাওয়ার অনুমতি মিলে। তার মানে করোনার বিষয়ে মুসলিম দেশ সৌদী আরবের সরকারও বিজ্ঞানকে মানছে এবং সচেতনতার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু মাওলানা আউয়াল এগুলো অস্বীকার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং মানুষকে একপ্রকার উস্কে দিচ্ছে। তিনি মাক্সকে মহিলাদের মুখের মেকাপ এবং পিপিই’কে মহিলাদের বোরকার সাথে তুলনা করে উপহাস করছে। গত জুমায় তিনি বলেছেন ‘সরকার পড়ে যাবে’। জুমার বয়ানে বসে মাওলানা আউয়াল সরকার পতনের এমন মন্তব্য করার কারণ কী? আর এমন বক্তব্যের পরও প্রশাসন নীরব ভুমিকায় কেন? প্রশাসনের প্রতি আমার আহবান, থাকবে মাওলানা আওয়ালের এমন মন্তব্যের কারণ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। আমি তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাই।’

 


নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মসজিদের মিম্বারে বসে এসব কথা আমরা প্রত্যাশা করিনা। আমার মতে, এই বিষয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিৎ। তারা এই বিষয়গুলো জানে কিনা, তা আমার জানা নেই। তাদেরকে এই বিষয়গুলো অবগত করা উচিত। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা আছেন, তাদেরকেও এই বিষয়ে নজর দিতে হবে। যারা সরকারের নির্দেশনা মানে না বরং বড় বড় কথা বলে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। বিভিন্ন মসজিদেই এই কার্যকলাপ চলছে। অনেক মসজিদেই মুসল্লিরা মাক্স ব্যবহার করে না। মসজিদ কমিটির নির্দেশনাও তারা মানে না। আর মাওলানা আউয়াল সাহেব সরকারের পতন চেয়ে এমন মন্তব্য কেন করছেন তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করা উচিৎ।’

 


জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য। আর যেই মাওলানা এটা নিয়ে সমালোচনা করছেন, তার প্রতি আমার প্রশ্ন, তিনি যখন অসুস্থ হন তখনকি কোন ডাক্তারের কাছে যায় না? তিনিও তো ডাক্তার দেখায়। আর আমাদের আল্লাহ তো সকলের জন্য। আল্লাগ মহান। আল্লাহ আমাদের শ্রষ্ঠা। কিন্তু আল্লাহতো বলেছেন, অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা করাতে এবং আল্লাহকেও ডাকতে। সেই জন্য মাওলানা আউয়াল যদি বলে লকডাউন দিয়ে কোন লাভ নেই- তাহলেকি হলো? এটাতো তার মনগড়া কথা। সে একটি দুষ্ট চরিত্রের লোক। আমরা তার গ্রেফতার চাই। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হোক। তিনি প্রতিনিয়তই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন এবং সাধারণ মুসল্লিদের উস্কে দিচ্ছে। দেশে আবারও হেফাজতের নৈরাজ্যতার ছক আঁকছে। এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজর দেয়া উচিৎ।’

 


এই বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ এর উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকির হোসাইনের মুঠোফোনে গতকাল একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জায়েদুল আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং এর প্রমান পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল হুজুরের বিষয়টি আমাদের নলেজে এসেছে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।’  

এই বিভাগের আরো খবর