Logo
Logo
×

রাজনীতি

আওয়ামীলীগে নয়া মেরুকরণ

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৫৩ পিএম

আওয়ামীলীগে নয়া মেরুকরণ
Swapno

 

# ব্যক্তিগত কাজে কোন সংগঠনই ব্যবহৃত হবেনা
# মূল দল থেকে অঙ্গ-সংগঠন, সবজায়গাতেই থাকতে সাংগঠনিক ভিত্তি

 

 নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কারের পর নবউদ্যোগে সাজবার বার্তা দিয়ে গেছে। মাঘ মাসের শীতের জরাজীর্ণতা কাটিয়ে বসন্তের আগমনী বাতাসের পূর্বাভাসও শুরু হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের কুক্ষিগত রাজনীতিরও যেন পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। জেলা পরিষদের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেই ঝলকও মিলল।  সাধারণত প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে এবার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নবনির্বাচিত নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দেখা গেছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমেই গত কয়েকবছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।



সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের দাপট ও আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা কমিটিগুলো এমনকি অঙ্গসংগঠনেরও ওসমানপন্থীদের দাপট লক্ষ্য করা যেত। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেয়ার পর শামীম ওসমান ও তার অনুসারী নেতাদের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পরও তারা আইভীর পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, বরং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে।  তবে শক্ত হাতে দমনের ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্র।

 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শামীম ওসমানের প্রতি বলেন, ‘আমরা বেঁচে থাকতে আর নৌকা পাবেননা।’ তাতেও তাদের টনক না নড়লে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। এরপরও ওসমানপন্থীরা তাদের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন।  এটি নিশ্চিত হয়ে পড়ে মহানগর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া মহানগরের দুই নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়। নারায়ণগঞ্জে থাকাকালীন সময়েই কেন্দ্রীয় নেতারা বলে যান, খুব শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হবে। এমনকি ওয়ার্ডকমিটিগুলো করতেও কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে। যার দরুণ ওসমানপন্থীদের মধ্যে হতাশা বিরাজমান।



তবে মুদ্রার ওপিঠও লক্ষ্য করা গেছে আওয়ামী লীগে। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ক্লিন ইমেজের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে আরো বেশ কয়েকজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক। ত্যাগী কিন্তু বঞ্চিত নেতাকর্মীরাও এই নির্বাচনে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়ে আইভীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর  পাশে অন্যতম শক্তি হিসেবে আছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার আহম্মেদ পলাশ, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিমউদ্দিন প্রমুখ।



এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন তো রয়েছেনই নতুন মেরুকরণে। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদির, এড, আসাদুজ্জামান আসাদ, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আদিনাথ বসু, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সুন্দর আলী, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. নিজাম আলী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক  রানু খন্দকার, মহিলা সম্পাদক মরিয়ম কল্পনা, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসান হাবীব, জিএম আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, মাহমুদা মালা, স্বাস্থ্য সম্পাদক আতিকুজ্জামান সোহেলসহ আরো অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর সমন্বয়ে জেলা, মহানগর আওয়ামী লীগে নেতাদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধনের আভাস মিলেছে।



এমন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা যখন নারায়ণগঞ্জে এসে সাংগঠনিক তৎপরতার বিষয়ে খোঁজ নেন, তখন তারা বুঝতে পারে পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি বিশেষ করে ওসমান পরিবার আওয়ামী লীগকে নিজেদের কাজেই ব্যবহার করেছে, যার ফলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী হয়নি, এমনকি নতুন নেতৃত্বও তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের জন্য সার্ভিস দিয়েও ত্যাগী ও দক্ষ সাংগঠনিক নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন রাজনীতিকরা অভিমানে নিজেদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। কেন্দ্রীয়  নেতারা যখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে, আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও দক্ষ সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করতে পারে এমন নেতারাও তারুণ্যদিপ্তভাবে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে রাজপথে নেমেছেন। আশা করা হচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির করতে ঢেলে সাজানো হবে। সেখানে যেমন স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের রাজনীতিকরা মূল্যায়িত হবেন, তেমনি নবীনরাও সুযোগ পাবে।



একাধিক সূত্র বলছে, এতোদিন নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ বলতে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান অনুগত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত দুই কমিটির কিছু ব্যক্তিকে বোঝানো হত। সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর সাথে সাথেই মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত ও দলের জন্য নিবেদিত এমন কর্মীদের দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। বিলুপ্ত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ  ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটিতেও অনুরূপ নীতি গ্রহণ করা হবে। মহানগর শ্রমিক লীগেও থাকবে শক্তিশালী কাঠামো। মোদ্দাকথা, নারায়ণগঞ্জে যাতে আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গসংগঠনকে কেউ পারিবারিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে কিংবা কোন কমিটির উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারে এমন সাংগঠনিক রূপই দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।  
 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন