শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য  বাঁচা-মরার লড়াই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২২  




# নানা ইস্যুতে মাঠ গরম করছে জেলা মহানগর বিএনপি
# থানা পর্যায়ে বেড়েছে কোন্দল

 

 

আগামী বছরের শেষের দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। আর এই নির্বাচনকে গিরে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল গুলোর মাঝে ডামাঢোল বাজতে শুরু করেছে। অপর দিকে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল গুলোকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করানোর জন্য আলোচনা করছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে দীর্ঘ দিন সময় ক্ষমতায় বাহিরে থাকায় বিএনপির অস্থিত্ব নিয়ে টানা হেচরায় পরেছেন। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতার বাইরে। আগামীতে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না এলে নেতা-কর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এও বলছেন, গতবারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।

 


খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকলেও ভিতরে ভিতরে কাজ শুরু করেছে তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সূত্রে জেলা বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তাঁদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। এজন্য তাঁরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এবার অলআউট মাঠে নামতে চান তাঁরা।



এদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নানা দাবীতে সক্রিয় হয়ে ইঠেছে। সেই সাথে বিএনপি নেতা কর্মীরা কমিটি গঠনের মাধ্যমেও তৃনমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলার দলীয় হাই কমান্ড। ঈদের আগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপি। গতকাল মহানগর বিএনপি সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ¦ালানি খাতের অবব্যপস্থাপনার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে তারা সরকারকে হটানোর জন্য হুঙ্কার প্রদান করেন। নারায়ণগঞ্জ থেকেই আন্দোলনকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে চান বিএনপির নেতৃবৃন্দ।



নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এডডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে এই আওয়ামী সরকার সেই পুরানো তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত করেছে। চারিদিকে শুধু চুয়াত্তরের দুর্ভক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। গ্যাস নাই, বিদ্যুত নাই, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, এদেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে আজ হাহাকার। এদেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়। দেশের মানুষ তাদের হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে রাজপথে জেগে উঠেছে। তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারের পতন ঘটিয়েই ছাড়বে। আর সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন দেশের ১৮ কোটি মানুষের আস্থাভাজন নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশে হারানো গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সেই আন্দোলনে শরিক হতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও প্রতিটা অঙ্গ সংগঠনের নেতার্কর্মীকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান তিনি।  


 
দলটির নীতিনির্ধাকরা জানান, আগামী নির্বাচন যে প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন সেজন্য দলের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে চলছে সেই প্রস্তুতি। দল গোছানোর পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্তে গোপনে চলছে কাজ। দলের নীতিনির্ধারকরা নানা মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করছেন। একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখন থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় কর্মসূচি পালনসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 


জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। নির্বাচন কমিশনও চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে। সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি আছে ১৭ মাস। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় আন্দোলন বিএনপির জন্য ‘বাঁচা-মরার লড়াই’। ‘হয় এসপার, না হয় ওসপার’- এমন মনোভাব নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের ৫ টি আসন থেকে যারা বিএনপির প্রার্থী হবে তারাও তাদের মত করে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। তারা প্রত্যেকেই নিজ এলার্কায় কমিটির মাধ্যমে নেতা কর্মীদের জাগিয়ে তুলছে। সেই সাথে সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের শক্ত অবস্থান করছে। সেই সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও পিছিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাই সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন হচ্ছে বিএনপির বাচাঁ মরার লড়াই।


 
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। এরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করে বিএনপি। সে সময় হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুললেও কার্যত তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় দলটি। তবে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে নির্বাচনে যায় বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে সাতটি আসন পায় দলটি। প্রথমে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ দেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত বিএনপির সাত সংসদ সদস্য।এমই/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর