শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আজ মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা

রাসেল আদিত্য

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২০  

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী ছিল গতকাল। তবে দিনভর বৃষ্টির কারণে পূজায় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম লক্ষ করা গেছে।

 

আজ শনিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনা দুর্যোগের কারণে এবার দুর্গোৎসবের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের রামকৃষ্ণ মিশনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

 

তবে প্রতি বছরের ন্যায় নিতাইগঞ্জের জমিদারি কাচারিগলি এলাকায় পূবালী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ পরিবারের উদ্যোগে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূবালী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জয় কে সাহা যুগের চিন্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

জয় কে সাহা জানান, পারিবারিকভাবে আমরা প্রতিবারই দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকি। এবার আমাদের ১৩তম আয়োজন। আমাদের মণ্ডপে প্রতিবছরই কুমারী পূজার আয়োজন করে থাকি। এবছরও আমরা কুমারী পূজা করছি। যদিও দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা মহামারির কারণে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, প্রতিবছর ঝাঁকজমকভাবে কুমারী পূজার যে আয়োজন হতো, এবার সেভাবে হচ্ছে না। করোনা মহামারি চারিদিকেই আছে। তাই এখন সময় যথাযত স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার। আমরা এ স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের পূজাটা উদযাপন করছি।

 

প্রতিবছর কুমারী পূজায় প্রচুর দর্শনাথীদের ভিড় হয়। এবার করোনা মহামারীর কারণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দিতে পারছিনা। আবার সবাই যাতে এ পূজা থেকে বঞ্চিত না হয় তাই অনলাইলে ‘পূবালী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর শারদীয় দুর্গোৎসব’ ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। দর্শনার্থীরা যেন অনলাইনে দেখতে পারে। মায়ের শ্রীচরণে পুষ্পাঞ্জলী দিতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।

 

এক প্রশ্নের জবাবে জয় কে সাহা বলেন, আমরা প্রথমে চিন্তা করেছিলাম সামনে একটা প্রজেক্টর বা টিভির ব্যবস্থা করবো। কিন্তু সেখানেও প্রচুর জনসমাগম হতে পারে, তাই আমরা চিন্তা করেছি অনলাইনেরই পূজাটা সম্প্রচার করবো।

 

অনলাইনের মাধ্যমে যাতে অঞ্জলী নিতে পারে সেটারও ব্যবস্থা আমরা করেছি। পূজার পর পর যখন অঞ্জলীটা হবে তখন ব্রাহ্মণ মহাশয় অনলাইনেই সরাসরি মন্ত্র পাঠ করবেন। যারা যারা চায় তারা এখানে দেখে বাড়িতে বসে পূজার অঞ্জলীটা নিতে পারবেন। 

 

নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী একনাথানন্দ মহারাজ জানান, ১৯০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে হিসেবে এখানে প্রায় শত বছর ধরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।

 

মিশনে সবসময় কুমারীকে বসিয়ে পূজা করা হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কুমারীকে বসিয়ে পূজা করা হবে না। তবে এর পরিবর্তে ঘট পূজা হবে। এ ঘট পূজায় কুমারী না থাকলেও হয়, ঘট হলো বাস্তবতা।

 

‘কুমরী পূজা’ বইয়ের লেখক তারাপদ আচার্য্য বলেন, কুমারী পূজা শুধু রামকৃষ্ণ মিশনে হয় তা কিন্তু নয়। এটা দুর্গাপূজার একটা অংশ। আজ থেকে ২০০ বছর আগে যারা এ সমাজ পরিচালিত করতো; তারা এটা বন্ধ করে দিয়েছিল।

 

কিন্তু ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের পার্শ্ব সাগরিদ স্বামী বিবেকানন্দ আধ্যাত্মিকভাবে কুমারী পূজা করেন। কাশ্মীরেও ভিন্ন এক মেয়েকে এবং বেলুড় মঠে ১৯০১ সাল থেকে এ কুমারী পূজা হয়ে আসছে।

 

তিনি আরও বলেন, কুমারী পূজা মানে মাতৃ দেবীকে পূজা করা। মাতৃ দেবী মানে আমরা সমস্ত নারীকে পূজা করে থাকি- দূর্গা পূজা, কালী পূজা, সরস্বতী পূজা। মাতৃপূজা একটি শক্তি পূজা, এটি একটি আধ্যাত সাধনা, যে সাধনার ফলে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, মা সারদা দেবী জগতের শক্তি, তাঁর শক্তি। এ শক্তি হিসেবে আমরা কুমারী পূজা করে থাকি, দুর্গা পূজা করে থাকি। অন্যান্য মাতৃ দেবীকে শক্তি রূপে পূজা করে থাকি।

 

জানা যায়, ১৯০১ সালে ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজার মাধ্যমে এর প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে।

 

পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এ ছাড়া নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়।