শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আজমীর শরীফে সেই শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খান

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক সভাপতি এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী তকমা পাওয়া জাকির খাঁন দিল্লীর হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার শরীফ, বম্বের হযরত হাজী আলীর মাজার শরীফ জিয়ারত শেষে খাজা বাবা খ্যাত হযরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) মাজার শরীফে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে গিলাপ চড়িয়ে জিয়ারত করেন।

 

এসময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য দোয়া করেন। আজমীর শরীফে এসময় তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন আজমীর শরীফের দরবারের খাদেম হযরত কলিম উদ্দীন চিশতী, রাজস্থান যুব কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারী মোঃ ইব্রাহীম খাঁন, যুব কংগ্রেস নেতা তানভীর আলম সহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুব দলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী।

 

নাম না প্রকাশের শর্তে জাকির খাঁনের সফর সঙ্গী কয়েক জন জানায়, নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে কিং খান খ্যাত জাকির খাঁন গত ২৬ জুন রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে থাই এয়ার লাইনসের একটি বিমানে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে আসেন। এরপরে সেখানে থাকা বিএনপির কিছু নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে দিল্লীর হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার শরীফে গিলাপ চড়িয়ে জিয়ারত করেন। এরপরে জাকির খানের নেতৃত্বে উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীরা বম্বে (মুম্বাই) হযরত হাজী আলী’র মাজার শরীফ জিয়ারত শেষে বৃহস্পতিবার রাতে আজমীর শরীফে এসে পৌছাঁয়।

 

গত শুক্রবার জাকির খান আজমীর শরীফে খাজা বাবা খ্যাত হযরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) মাজার শরীফে জুম্মার নামাজ আদায় করেন, এরপরে তিনি দরগাহে্ গিলাপ চড়িয়ে জিয়ারত করেন। সুত্র জানায়, জাকির খান ও তার সফর সঙ্গীরা এসময় সাবেক প্রধান মন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য  দোয়ায় অংশ নেন এবং দ্রুত বেগম জিয়ার মুক্তি চান।

সুত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি  জাকির খান আগামী ২০ জুলাই রাতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ভারতের মাটি ত্যাগ করবেন ।


নারায়ণগঞ্জের আলোচিত বিএনপি নেতা জাকির খানের সফর সঙ্গী বিএনপির নেতাদের দাবী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একাধিক মামলা ও নানামুখী হয়রানির শিকার হওয়ার পরেও কিং খান খ্যাত জাকির খান দীর্ঘ সময়ে বিদেশে অবস্হান করলেও তার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় বিএনপি তথা তারেক রহমানের নির্দেশিত দলের সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে।

 

পাশাপাশি বেগম জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমান সহ বিএনপির সকল নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত  মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলনে প্রবাসী বিএনপির সকল অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন জাকির খান।

 

উল্লেখ্য যে জাকির খান ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সভাপতি পদে আসীন ছিলেন, ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তৎকালীন সময় থেকে জাকির খান নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করে রেখেছে।

কে এই জাকির খান : জাকির খানের পিতা মরহুম দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে উত্থান ঘটে জাকির খানের। ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ফতুল্লার বিশাল বিসিকপল্লী তথা ঝুট সেক্টরে একক আধিপত্য কায়েম করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় উঠে আসেন এ শীর্ষ সন্ত্রাসী। টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয়ে জাকির খান পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। সে সময় পতিতাপল্লীর নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতে।

 

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষদিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যান। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান। রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে কাশীপুর এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দ্বিতীয় দফা জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে।

 

১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মুন্সীগঞ্জে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামি করে মামলা করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এরপর সে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যান। এরপর জাকির খান প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে থাইল্যান্ডের সুকুমবিতে পালিয়ে যান। সেখানে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ‘গ্রেস’ নামের ৮ তলা একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন। পরে জাকির খান চলে যান দুবাই।

এই বিভাগের আরো খবর