শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আজ্ঞাবহ-বশংবদদের দিয়ে গঠিত হচ্ছে কমিটি

পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২  

 

# আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন কেন্দ্রিক অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে বিএনপিতে

 

নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বর্তমানে কেন্দ্রভিত্তিক থানা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো বশংবদ ও আজ্ঞাবহ দিয়ে কুক্ষিগত করে রাখা এবং দলীয় সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে মাইনাস করার এক অশুভ প্রতিযোগিতায় মত্ত। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। মাঝেমধ্যে  সংঘর্ষ ও ভাঙ্গচুরের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশও ঘটছে। তথাপি এ অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধেরও কোন উদ্যোগ নেই।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ববাহী আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন। কারণ বিগত ১১টি সংসদীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, এ আসনটিতে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছে সে দলই শেষে সরকার গঠন করেছে। ২০০৮ সালে এ আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন শিল্পপতি শাহআলম। 

 

সে নির্বাচনে শিল্পপতি শাহআলম আওয়ামী লীগ প্রার্থী সারাহ্ বেগম কবরীর কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে শাহআলমকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমানকে মোকাবেলা করতে ভয় পেয়ে মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেন। 

 

পরবর্তীতে সম্মিলিত বিরোধী দলের অংশীদার হিসাবে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম নেতা মনির হোসাইন কাসেমীকে এ আসনে ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনের দিন কাসেমী ভোটের ময়দান ছেড়ে পলায়ন করেন। ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী শিল্পপতি শাহআলম বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপি সভাপতি। শাহআলমের শূন্যতাপূরনে ২৬ ফেব্রুয়ারী নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

 

এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্নাকে সদস্য সচিব করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, শাহআলম দল থেকে পদত্যাগ করলেও তার লোকদের দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে মাইনাস করা হয় সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম। তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারীতে এ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। 

 

জাহিদ হাসান রোজেলকে আহ্বায়ক ও শহীদুল ইসলাম টিটুকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এবার অভিযোগ উঠে, জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ কমিটি গঠনে বাণিজ্য করেছেন। তিনি শাহআলমের নির্দেশ মতো এ কমিটি করেছেন। এ কমিটির দুজন বাদে বাকী ২৯ জনই শাহআলমের লোক। এ কমিটিতে শাহআলমের কর্মচারী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনও রয়েছে। বাদ পড়েছেন, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, স ম নূর ইসলাম ও আলাউদ্দিন খন্দকার শিপনের মতো পোড় খাওয়া নেতা।

 

এদিকে, বিলুপ্ত সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটিও গঠন করা যায়নি। এখানে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও সম্মেলনের দিন দলের একটি বিরাট অংশকে না জানানো ও মাইনাস করার চেষ্টার অভিযোগে তুমুল মারামারির পর সম্মেলন ভন্ডুল হয়ে যায়। অভিযোগ, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার লোকদের মাইনাস চেষ্টার কারনে এ সংঘর্ষ বাঁধে। জানা গেছে, শিল্পপতি শাহআলম দল থেকে পদত্যাগ করলেও যে কোন মূল্যে আগামীতে বিএনপির মনোনয়ন চান।

 

সোনারগাঁতে বিএনপির মনোনয়ন চান আরেক ধনাঢ্য ব্যাক্তি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এখানে মাইনাস করা হয়েছে সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও শহীদুল ইসলাম স্বপনকে। আড়াইহাজারে আগামীর মনোনয়নের দাবীদার নজরুল ইসলাম আজাদ। যিনি নিজেকে জেলা বিএনপির নিয়ন্তা এবং জিয়া পরিবারের পারিবারিক বন্ধু দাবী করেন। এখানে সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও পোড়খাওয়া নেতা আনোয়ার হোসেন অনুকে মাইনাস করা হয়েছে।

 

এমনি ভাবে রূপগঞ্জে শিল্পপতি দীপু ভুইয়াকে আহ্বায়ক করে তার আজ্ঞাবহ ও বশংবদ কর্মীদের দিয়ে থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং মনোনয়ন শিকারের ক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দীদের মাইনাস করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গত মাসে রূপগঞ্জের দশটি ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে দীপু ভুইয়ার মতিঝিলের অফিসে বসে তার আজ্ঞাবহদের দিয়ে। এ নিয়ে রূপগঞ্জের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর