শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আদালতপাড়ায় কাজী সেজে বিয়ে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  


ইউনুছ কাজীর বই, বিয়ে পড়ায় নুরু ও হেলেনা

#অভিযানের কথা বলা হলেও অজ্ঞাত কারণে থেমে গেছে অভিযান
# অবৈধভাবে তারা মানুষের সাথে প্রতারণা করছে দীর্ঘদিন ধরে

 

তালিকাভূক্ত কাজী না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণমার মাধ্যমে বিবাহের কাজ করে আসছেন নুর আলম নামের এক ব্যক্তি। নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় নীট হাউজ নামের একটি বভনের দ্বিতীয় তলায় রীতিমত চেম্বার খুলে প্রকাশ্যেই বিবাহের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে আসছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বন্দরের হেলেনা।

 

নারায়ণগঞ্জের আদালত পাড়া এলাকায় একটি চেম্বার বসিয়ে কাজী না হয়েও বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন নুর আলম। অভিযোগ রয়েছে হেলেনা বিভিন্ন চেম্বার ও অলি-গলির দোকানপাটে ঘুরে ঘুরে তরুন-তরুনীদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে থাকেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে তারা মানুষের সাথে প্রতারণা করছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা কোন বৈধ কাজী নয়। তাদের কাছে কোন বৈধ কাবিনের ভলিয়মও নেই। খোঁজ নিয়ে গেছে এবছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বাল্য বিবাহ করিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে হেলেনাকে গ্রেপ্তার করেছিল নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। সেই মামলায় আরো আসামী করা হয়েছিল আড়াইহাজারের মো. ইউনুস আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে।
 


সূত্র জানিয়েছে, একজন কাজী সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ইসলামী শরিয়া মোতাবেক প্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি করে থাকেন। সে জন্য কাজীকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নির্ধারিত এলাকার কাজী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের তথ্য থাকে জেলা কাজী সমিতিতেও। তাছাড়া, জেলা রেজিষ্টার অফিসেও কাজীর তথ্য থাকবে। কিন্তু নূর আলম, হেলেনাসহ আরো অনেকেই সরকারী বিধি ও অনুমতি ব্যতিরেকেই দীর্ঘদিন ধরে প্রতরণার মাধ্যমে নিকাহ রেজিষ্টার করে আসছে। তাদের কাছে রয়েছে কাবিনের ভলিয়মও। সূত্রটি বলছে হেলেনা নামের ওই নারী আড়াইহাজার উপজেলার এক কাজীর ভলিয়ম দিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে আলোচনায় এসেছেন অনেক আগে থেকে। তবে নুর আলম থেকে গেছে আড়ালে।  


 
তাদের কাছে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন এমন অনেকে জানান, আদালত পাড়ায় নুর আলম এর চেম্বার আছে। সেখানে রয়েছে তার একটি মুদির দোকানও। নুর আলমের প্রতিষ্ঠান গুলোতে মুহুরী ও আইনজীবীর সহকারীরা নিয়ে যায় বিবাহে আগ্রহী পাত্র-পাত্রীদের। এরপর নুর আলম কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বলে হাজির করেন বিয়ের স্বাক্ষী ও উকিল। তারপর বিয়ে সম্পন্ন করে নির্ধারিত ভলিয়মে স্বাক্ষর নিয়ে ধরিয়ে দেন একটি রশিদ। সেই রশিদে কাজীর সিল স্বাক্ষরও থাকে। বলা হয়, পরে গিয়ে কাবিন নামা সনদ সংগ্রহ করতে।


 
শুধু নুর আলম নয় তার মতো হেলেনা নামের ওই নারীও বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে একই প্রক্রিয়ায়। তবে তিনি অনেকেটা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আদালত পাড়ায়। কারণ আড়াইহাজারের সেই ইউনুছ কাজীর ভলিয়ম বই এনে অবৈধভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার দায়ে তার নামে মামলা করেছে জেলা কাজী সমিতি। 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী ইসলাম মিয়া জানান, হেলেনা একজন প্রতারক। সে নারী হয়ে কিভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে। সে কোন কাজী নয়। কিছু দালাল চক্রের মাধ্যমে হেলেনা সহ আরও অনেকে ভূয়া বিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা আদালত পাড়া এলাকায় যেসব বিয়ে পড়ায় তা সম্পূর্ন অবৈধ।


 
ইসলাম কাজী আরও বলেন, প্রতিটি এলাকায় বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার জন্য নির্ধারিত কাজী রয়েছে। নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া আদালত পাড়ায় যারা বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে সবাই অবৈধ। কারণ ওই সব প্রতারকরা প্রেস থেকে ভলিয়ম বানিয়ে বিয়ের নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে।
 


জেলা রেজিষ্টার কর্মকর্তা জিয়াউল হক জানিয়েছেন, আড়াইহাজারের ইউনুস কাজীর অনুমোদন বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তার পরিচয়ে যারা অবৈধ ভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। 
 


এদিকে নুর আলমের দাবি, তিনি আগে ইউনুছ কাজীর ভলিয়ম এনে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতেন। নুর আলম বলেন,  আগে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতাম কিন্তু এখন করি না। কাজী না হয়ে কিভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি।
 


একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আদালত পাড়ার আশপাশে মিলিয়ে নারী সহ অন্তত ১০ জন রয়েছে যারা কাজী না হয়েও কাজী সেজে অবৈধ ভাবে নিকাহ্ রেজিষ্টার করেছেন। বিভিন্ন দোকানে, আইনজীবির চেম্বারে ও অলিতে গলিতে পড়ান বিয়ে। এ জন্য অনেক সময় ভলিয়ম বই দেখানো হয়ে থাকে। বলা হয় উপজেলা কাজীর ভলিয়মসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাজীর বই। আবার নোটারীও করে থাকেন প্রায় সময়। এ জন্য নেন মোটা অংকের অর্থ। তাছাড়া কাবিন নামা সনদের জন্য নেন আরেক ধাপে টাকা। আদালত পাড়ার আশপাশে নুরু, কবির, রাকিব, আলমগীর ও হেলেনা নামের এক নারীসহ আরও কয়েকে এ ভাবেই  বিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ দিন ধরে।
 


এদিকে নারায়নগঞ্জ সদর থানা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এবছর ফেব্রুয়ারী মাসে জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী ইসলাম মিয়া নিজে বাদী হয়ে অবৈধভাবে বিয়ের অভিযোগে বেশ কয়েকজনের বরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় প্রতরক হেলেনাকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো পলাতক রয়েছে অপর অভিযুক্ত মো. ইউনুস আলী। সূত্রটি জানিয়েছে ইতিপূর্বে মামলাটি তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।     
 

এই বিভাগের আরো খবর