বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আদি পেশা ছেড়ে দিচ্ছে বেদে পল্লীর লোকজন

আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২  


সাপ একটি ভয়ঙ্কর প্রাণী হলেও সাপের খেলা দেখতে সকলেই পছন্দ করে। এ কারণেই যাযাবর শ্রেণিভুক্ত এক শ্রেণীর মানুষ আবার সাপের খেলা দেখানোকে নিজেদের সাপুড়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। বেদে সম্প্রদায়ের জীবন ব্যবস্থা এবং তাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প-উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে নাটক-সিনেমা।

 

 

কিন্তু তার পরও কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে দেশের একমাত্র যাযাবর শ্রেণিভুক্ত মানুষ বেদে সম্প্রদায়। বাঁচার তাগিদে রাষ্ট্রের অনেক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে না দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো হত দরিদ্র এসব মানুষগুলো।

 

 

তবে বর্তমান সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের ফলে ব্যস্ত মানুষগুলোর কাছে আগের তুলনায় সাপের খেলার চাহিদা অনেকাংশে কমে যাওয়ায় সাপুড়েদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে সাপুড়েরা।

 

 

অনেকে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিয়েছে এ পেশা। অনেকে আবার ভিক্ষাবৃত্তি করে ও সংসার চালাচ্ছে। কাঁধে ঝুলানো কাপড়ের ব্যাগে ছোট বড় কাঠের বাক্স অথবা বাঁশের ঝুড়িতে সাপ নিয়ে প্রতিদিন সকালে সাপুড়েরা বেড়িয়ে যায় জীবিকার তাগিদে। তারা সাধারণত স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না।

 

 

গোটা দশেক সাপুড়ে পরিবার একত্রে জড়ো হয়ে অস্থায়ী তাবু নির্মাণ করে বসবাস করতেই তারা অধিক পছন্দ করে। আবার অনেক সময় বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে নৌকায় বসবাস করতেও দেখা যায় তাদের। এক্ষেত্রে নৌকার মাঝেই তাদের রান্না, খাওয়া, বিশ্রাম ও ঘুমানো, শৌচাগারসহ জীবনধারণের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হয়।  

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে আগত এমনি একদল ভ্রাম্যমান সাপুড়ের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে মানুষ টেলিভিশনসহ অন্যান্য মিডিয়ার বদৌলতে ঘরে বসেই সাপের খেলা দেখার পাশাপাশি সাপ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারে। ফলে সর্বসাধারণের নিকটে বাস্তব সাপের খেলা দেখার চাহিদা অনেকাংশে ম্লান হয়ে গেছে।

 

 

তাছাড়া মানুষ আজ আধুনিক হওয়ার পাশাপাশি যথেষ্ট ঠকবাঁজও হয়েছে বটে। এখন অনেক দর্শকরাই সাপের খেলা দেখে সাপুড়ের পারিশ্রমিক না দিয়েই স্থান ত্যাগ করে। ফলে দিন দিন সাপুড়েদের অর্থাভাব মারাত্মক আকার ধারণ করছে। দিন শেষে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাপের খাদ্য যোগানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

তাই অনেকে বাধ্য হয়ে সাপের খেলা দেখানোর পাশাপাশি ঝাঁড়-ফুঁক, তাবিজ বিক্রি ও কবিরাজী করে সংসার চালাচ্ছে। আবার অনেকে ছেড়ে দিয়েছে বাপ-দাদার এ পেশা। এদিকে সাপের ভয় দেখিয়ে জনসাধারণের নিকট থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে সাপুড়েদের বিরুদ্ধে।

 

 

এক্ষেত্রে সাধারণত ছোট ছোট কাঠের বাক্সে সাপ নিয়ে রাস্তাঘাটে চলাচলরত পথচারীদের গতিরোধ করে সাপুড়েরা। পরে বাক্স থেকে সাপ বের করে ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় সাপের খোরাকি বাবদ নগদ অর্থ।

 

 

এ ব্যাপারে সাপুড়ে সর্দার আবু তাহের বলেন, পেটের তাগিদে অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে। তবে আশাকরি আমার আওতাধীন সাপুড়েদের বিরুদ্ধে এ ধরণের কোন অভিযোগ পাবেন না।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর