বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমাদের গরবের ধন মুজিবুল হক কবীর

ইউসুফ আলী এটম

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২২  

শব্দ দিয়ে খেলেন তিনি ছন্দ নিয়ে থাকেন/
নিজের মনের মাধুরীতে কবিতাকে আঁকেন।/
তাঁর বদনে মিশে আছে প্রতিচ্ছবি কবি’র/
সহজ সরল মানুষ তিনি মুজিবুল হক কবীর।

 


আমার মতো অনেকেরই অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব কবি মুজিবুল হক কবীর। যাঁকে আমরা কবীর ভাই বলে সম্বোধন করতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।। সেই কবীর ভাই যখন অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তখন মনের অজান্তেই আমার মোবাইলে তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির টোকাটুকি আর ঘষাঘষিতে আবিষ্কৃত হয় উপরের ছড়াটি। প্রিয় কবীর ভাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছড়াটি লিখতে পেরে পুলকিত আমি। কারণ দীর্ঘদিন যাবত অনেক চেষ্টা করেও আমি ছড়া লিখতে পারছি না। ব্যর্থতার এ যন্ত্রণা আমাকে গিলে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।


‘৭০ দশকে কবিতার জগতে প্রবেশ করেই একের পর এক চমক দেখাতে থাকেন কবি মুজিবুল হক কবীর। এ ধারা এখনো অব্যাহত। অসংখ্য পাঠকপ্রিয় কবিতা উপহার দিয়েছেন তিনি। শব্দ নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসেন। তারঁ কবিতা দুর্বোধ্য নয়।

 

অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা তাঁর কবিতা পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যেই তাঁর ১১টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘পা যে আমার অনড় পাথর’ বাজারে এলে পাঠক মহলে বিপুল সাড়া পড়ে যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বের হয় আরো ১০টি কাব্যগ্রন্থ। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় ‘ আমাকে দাঁড়াতে দাও’। বলাবাহুল্য, তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থই পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে।


কবিতা চর্চার পাশাপাশি তিনি ছন্দ নিয়েও অনেক গবেষণা করছেন। ফলশ্রুতিতে তাঁর গবেষণালব্ধ প্রবন্ধগ্রন্থ বেরিয়েছে ৭টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ছন্দের ঘরবাড়ি, ছন্দের মায়ামৃগ ও অন্যান্য ভাবনা, ছন্দশিল্প: রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি।


অনুবাদ চর্চাতেও তিনি নৈপুণ্যের সাক্ষর রেখেছেন। ইংরেজিতে অনুবাদ করা তাঁর ২টি বই হলো: সিলেক্টেড পোয়েমস অব মুজিবুল হক কবীর এবং আই পেইন্ট ইন দ্য সাইলেন্ট ক্যানভাস


নারায়ণগঞ্জের ছেলে মুজিবুল হক কবীর আমাদের গরবের ধন। ১৯৫২ সালের ১১ এপ্রিল তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত সিরাজুল হকও ছিলেন সাহিত্যজগতের মানুষ। মূলত পিতার কাছ থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চার প্রথমপাঠ গ্রহণ করেন। জগন্নাথ কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি.এ অনার্স ও এম.এ ডিগ্রি অর্জনকারী কবীর ভাই শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন।

 

১৯৮০ সার থেকে ২০১৮ সার পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলে গেস্ট টিচার হিসেবে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা ও একছেলের জনক। তাঁর দু’সন্তানই শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত।


১৯৭৪ সাল থেকেই কবীর ভাইয়ের সাথে আমার ওঠাবসা। তাঁকে অনুসরণ করেই আমার মতো নারায়ণগঞ্জের অনেক তরুণ সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সাহিত্যসভায় তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আমাদের চলার পথকে সুগম করে দেয়।

 

বিশেষকরে আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে তাঁর  পাশে রাখার চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। যখনই যে অবস্থানে দেখা হোক না কেনো,কুশলাদি বিনিময়ের পরই লেখালেখির খবর নিতে ভুল করেন না। বলতে বাধা নেই, কবীর ভাইয়ের উপর্যুপরি তাগিদের ফসলই হচ্ছে আমার প্রথম প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ ‘চুপ’।


কবি মুজিবুল হক কবীর সুধীজন পাঠাগার প্রদত্ত ২০২১ সালের সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত, উদ্বেলিত। আমরা কবীর ভাইয়ের সুস্থ দীর্ঘজীবন কামনা করি।