শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আলমগীর হত্যার বিচার নিয়ে হতাশায় পরিবার

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

# হত্যাকারীদের জামিন করাতে ফারুক মেম্বারের দৌড়ঝাঁপ
# ফারুক মেম্বারের গ্যাংবাহিনী ধারা হত্যার অভিযোগ
# গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জামিন না দেয়ার দাবি

 

বক্তাবলীর আলমগীর হত্যার বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে আলমগীরের পরিবার। এখনো খান্না থামে নাই আলমগীরের স্ত্রীর। পরিবার থেকে অভিযোগ রয়েছে আলমগীর হত্যার অন্যতমা আসামী বক্তাবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফারুক হোসেনের সন্ত্রাস বাহিনীর ভয়ে নিহতের মেয়ে ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। ফারুক মেম্বাম এবং আব্দুল আলী জামিনে বাহিরে থাকায় নিহতের পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

 

তাই  নিহত আলমগীরের স্ত্রীর ফারুক মেম্বারের সন্ত্রাস বাহিনীর কিশোরগ্যাং হিসেবে এলাকায় পরিচিত যে ১৩ জন রিমান্ডে আছে তাদের যেন কোন ভাবে জামিন না দেয়া হয়। হত্যা মামলার আসামীরা জামিন পেলে নিহতের পরিবার বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকবে।


নিহত আলমগীরের স্ত্রী আলমগীরের স্ত্রী মিনু জানান, ফারুক মেম্বার নির্দেশে তার সন্ত্রাস বাহিনী আলমগীরকে বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করে। যারা রড রাম দা সহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামীর শরীরে আঘাত করেছে তারা গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমান রিমান্ডে আছেন। তাদের জামিনের জন্য ফারুক মেম্বার মোটা অঙ্কে টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দৌরঝাপ করছে।

 

একই সাথে তারা বলছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে কোন উপায়ে এই আসামীদের জামিন করাবেন। তারা যদি জামিন পেয়ে যায় তাহলে আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিবো। কেননা আসামীরা যদি টাকার জোরে বের হয়ে যায় তাহলে তারা আরও খুনের ঘটনা ঘটাতে কোন পিছ পা হবেন না। আমি তাদের ফাসির দাবী জানাই। তাদের যেন কঠোর ভাবে শাস্তি দেয়া হয়।


এছাড়া তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, গত কয়েক দিন আগে আলমগীর হত্যার ২ নম্বর আসামী ফারুক মেম্বার এবং আবদুল আলী জামিনে বের হন। তারা জামিনে এসে তার সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে আামকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে জামিনে বের হয়েছে। আরু টাকা দিয়ে আমার স্বামী হত্যাকারীরা জামিনে বের হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দৌর ঝাপ করে যাচ্ছে।

 

খুনীরা আমার চোখের সামনে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি বারবার মিনতি করার পরও কোনো লাভ হয় নাই। আমার স্বামী যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে এর বিচারের জন্য থানা-পুলিশ, আইন-আদালত আছে। তা না করে ফারুক মেম্বার সন্ত্রাসবাহিনীর রিমান্ডে থাকা ১৩ জন সহ আর লোক নিয়ে  প্রকাশ্য দিবালোকে আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাসি চাই। তাদের যেন কোন ভাবে জামিন দেয়া না হয়। তাদের জামিন দিলে আমার স্বামীর বিচারের আশা আমি কি করে করতে পারি। যদি হত্যার আসামীরা জামিনে বের হয়ে যায়।

 

এলাকাবাসি জানান, বক্তাবলীর আলমগীরকে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর এবার তার স্ত্রীকে এমন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, সে এখন আর বাড়ি থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছে না। আলমগীরের স্ত্রীকে কোনো সাংবাদিক বা অন্য কোনো মিডিয়ার সাথে কথা বলতে বারন করা হয়েছে। বললে তাকে আলমগীরের চেয়ের ভয়নক পরিনতি বরন করতে হবে বলে শাসানো হয়েছে। যার ফলে আলমগীরের স্ত্রী এখন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তাকে গুম এবং হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে খুনীদের আত্নীয়স্বজনরা।


স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ইউনিয়নের লক্ষীনগর নিবাসী আলমগীর হোসেনকে নৃসংস ভাবে খুন করা হয় গত ২১ মার্চ। কিন্তু এই নির্মম হত্যাকান্ডেকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্ঠা করছে একটি চক্র। অভিযোগ পাওয়া গেছে খুনী চক্রের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে একটি মহল এই নির্মম হত্যাকান্ডকে জায়েজ করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

তাদের পিছনে রয়েছে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালি নেতা। এছাড়া সরেজমিন লক্ষীনগর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে গ্রামবাসীও এই হত্যাকান্ডের বিচার চায়। তারা মনে করেন এই নৃসংস হত্যাকান্ডের পর খুনীরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে এলাকায় আরো খুনের ঘটনা ঘটবে। বেপরোয়া হয়ে উঠবে খুনী চক্র।

 

তাই কোনো মতেই যেনো খুনীরা পার পেয়ে না যায় সেই প্রত্যাশা করছে ওই গ্রামের মানুষ। তারা আরো জানান আলমগীরকে খুন করার পর খুনীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। এরই মাঝে তারা পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের প্রভাশালির নেতার মাধ্যমে এই টাকা দেন দরবার হচ্ছে।

 

এদিকে আদালত সূত্রে জানাযায়, ফতুল্লার চাঞ্চল্যকর আলমগীর হত্যা মামলায় ১৩ জনকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ২২ মে দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মহসীনের আদালত এ আদেশ দেন।


এর আগে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘ্টানের জন্য পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে আদালত শুনানী শেষে ১৩ জনের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  রিমান্ডকৃতরা হলেন- কাউসার (৩৫), পাভেল ওরফে রাফিউল রাব্বি (১৮), মজিবুর (৩৫), স্বপন (৩৮), জাহেদ আলী (৪২), আনোয়ার (৩৫), মতিন ওরফে আব্দুল মতিন (৩২),

 

জিহাদ (২০), সজিব ওরফে সজিব হোসেন (৩০), হিমেল ওরফে মো. হিমেল (২৬), হালিম ওরফে আব্দুল হালিম (৩৮), শরিফ (৪৫) ও শাহীন (৪৬)। তাদের প্রত্যেকের বাড়িই সদর উপজেলার বক্তাবলিতে। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের এএসআই মো. রোকনুজ্জামান জানান, হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত ১৩ আসামীর ১ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

 

তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নিহত আলমগীর তিশা বিক্সস ফিল্ড ও মারুফা বিক্সস ফিল্ডে মালিক ওমর ফারুকের ইটভাটায় লোড ও অনলোডের কাজ করতো। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২১ মার্চ বেলা ১১টায় রিমান্ডকৃত আসামীরাসহ আরও ১০/১৫ জন নিহত আলমগীরকে লোহার রড দিয়ে এলোপাতারি ও ধারালো চাকু ধারা আঘাত করে হাত-পা-দাত ভেঙ্গে দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।

 

সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ভিক্টোরিয়াতে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রত ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেখানে জায়গা না পেয়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর