বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

আলমগীরের সাথে ফারুক মেম্বারের কি ঘটেছিল

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২২  

# স্ত্রীর করা মামলার এজহারে জিহবা কাটা ও চোখ উঠানো উল্লেখ্য নেই
#  নিহত আলমগীরের স্ত্রীর অভিযোগ মিথ্যা: এস আই সুকান্ত

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের লক্ষীনগর গ্রামের আলমগীর হত্যা নিয়ে রহস্যের জোট যেন খুলছে না। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে আলমগীরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। বক্তাবলী গ্রাম তথা বিভিন্ন ইট ভাটার নারী শ্রমিকদের ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ তার ভয়ে নারীরা ঠিকমত ঘর থেকে বের হতে পারতেন না।

 

এমনকি বিভিন্ন সময়ে ফারুক মেম্বারের ইট ভাটা মারুফা ব্রিকফিল্ড এবং আব্দুল আলীর ইট ভাটা তিশা ব্রিকফিল্ড গিয়ে দায়িত্বরত ম্যানেজারের কাছ থেকে চাদাঁবাজি করার অভিযোগ আছে। যদি চাদাঁ দিতে অস্বীকার করত তখন সে তার সাথে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে ভয় দেখাত। আলমগীরসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে মাদককারবারির অভিযোগ রয়েছে।

 

এত অপরাধের কান্ডারি হওয়ায় লক্ষীনগর গ্রামের মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ছিল। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে মারধর করত। তাই আলমগীর মারা যাওয়াতে লক্ষীনগর গ্রামের নারী পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ সকলে এখন স্বস্তি বোধ করছে। ফারুক মেম্বারের বিরুদ্ধে করা মামলায় আলমগীরের স্ত্রী মিনু মামলার এজহারে  তার স্বামীর জিহবা কাটার কথা এবং চোখ উঠানোর বিষয় কোথায়ও উল্লেখ্য নেই।

 

পুলিশ প্রশাসনও তার কোন ক্লু পান নাই। প্রশাসন হতে নিহত আলমগীরের জিহবা কাটা ও চোখ উঠানোর কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নাই বলে জানান।   তবে কি কারণে মারা গেছে তা এখনো প্রশাসন নিশ্চিত হতে পারে নাই। কেননা লাশ পোষ্ট মোর্টেম এর ডাক্তারি রিপোর্ট আসে নাই।

 

লক্ষীনগরের স্থানীয়রা জানান, সচেতন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে আলমগীরের সাথে ফারুক মেম্বারের কি ঘটেছিল! তার উত্তরে খুজতে গিয়ে মানুষ বলেন, বক্তাবলীর লক্ষীনগর পূর্ব পাড়া গ্রামের পাশেই ধলেশ্বরী নদীর সাথে ফারুক মেম্বারের মারুফা ব্রিকফিল্ড গত মার্চ মাসের

 

২১ তারিখ আগের রাতে আলমগীর ইট ভাটায় গিয়ে এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন ওই নারীর চিৎকারে অনেক শ্রমিকরা এগিয়ে আসলে ঘটনাস্থল থেকে আলমগীর দৌড়ে পালিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় নারীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

 

ফতুল্লা মডেল থানার সূত্রে জানাযায়, ২১ মার্চ নিহত আলমগীরকে প্রধান আসামী করে ৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে আবদুল আলী ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যা পরবর্তিতে ১৪৩,৩৪১, ৩২৪, ৩২৬,৩০৭ এবং ৩৭৯ ধারায় পেনাল কোডে মামলা রুজু করা হয়। যার মামলা নম্বর ৬৪। এই মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন লক্ষীনগর বাসিন্দার বাচ্চুর ছেলে রাসেল (৩৬), রামনগরের মতিনের ছেলে বাবু।

 

মামলার এজহারে জানাযায়, গত মাসের ২১ মার্চ সোমবার সকালে ১১ টার দিকে ফারুক মেম্বার মারুফা ইট ভাটার শ্রমিকদের বিল দেয়ার জন্য সাথে করে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা একটি ব্যাগে করে নিয়ে যায়। প্রতি সোমবার শ্রমিকদের বিল দেয়া হয়। আর এই খবর পেয়ে আলমগীর তার দলবল নিয়ে  ফারুক মেম্বারেরপথি মধ্যে পথ রোধ করে তার সাথে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়।

 

তখন তাকে বাধা প্রদান করলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আলমগীরে সাথে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে ফারুক মেম্বারের কপালে আঘাত করে। তখন তার আস্ত্রের আঘাতে এই জনপ্রতিনিধি আহত হয়ে যান।

 

আর এই সুযোগে তার সাথে থাকা টাকা রাসেল ও বাচ্চু নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। তখন ইট ভাটার শ্রমিক ও এলাকাবাসি মিলে আলমগীরকে গণপিটুনি দিয়ে এলোপাথারি ভাবে গনহারে মারধর করে। আর এতে করে সে আহত হয়ে যায়। তার আগে ফারুক মেম্বর আহত হওয়ায় তাকে কয়েক জন ধরে নিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত আলমগীরের জিহবা কেউ কাটে নাই। এমনকি তার স্ত্রী মিনু যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার চোখে পর্যন্ত তেমন কোন আঘাত নেই। চোখ উঠিয়ে ফেলার প্রশ্ন উঠে না।

 

মানুষের গণধোলাইয়ের মাইরে আলমগীরের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ হয়। সে এই এলাকার একটা মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। তার ভয়ে এলাকার কোন মানুষ ভালো ভাবে চলাচল করতে পারতেন না। নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। যার জন্য আলমগীরের মত সন্ত্রাসী নিহত হওয়ায় মানুষের মাঝে  কোন অনুসুচনা ছিলনা। তবে সে যতই খারাত হোক মারা যাক তা কেউ চিন্তা করে নাই। আলমগীর মারা যাওয়াতে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বক্তাবলি ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওমর ফারুক ও আব্দুল আলী আলমগীর হত্যাকান্ডে জড়িত নয় দাবী জানিয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেন। এবং তাদের মুক্তি দিয়ে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান। মানববন্ধনে বক্তারা জানান, আলমগীর অনেক বড় ডাকাত ছিলো। মাদককাবারি করত। কোন মানুষকে শান্তি দেয় নাই। সে মারা যাওয়াতে আমরা দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি।


অন্যদিকে মানুষের গণপিটুনিতে আহত হয়ে ২২ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে আলমগীর। এ ঘটনায় নিহত আলমগীরের স্ত্রী বাদী হয়ে ২৩ মার্চ ফতুল্লা থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় পেনাল কোড মামলা দায়ের করেন।  যার মামলা নং-৭০। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে মহসিন ও তোফাজ্জল ও র‌্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে ঢাকার শান্তিনগর ওমর ফারুক (৪৬) এবং হাজী আব্দুল আলীকে (৬০) গ্রেফতার করে।

 

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আলমগীর মরাতে আমাদের পুরো এলাকাটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ফারুক মেম্বার ছিলো হাসপাতালে তাকে কেনো গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আমরা মুক্তি চাই। আর আলমগীর তো একজন খারাপ মানুষ তার জন্য মানুষ এত শোক দেখাচ্ছে কেনো।তার বউও হইছে একটা মিথ্যাবাদী।মিথ্যা মিথ্যা কথা কইয়া মানুষের মন ভুলাইতাছে।


 নিহত আলমগীরের বিরুদ্ধে থানায় রয়েছে একাধিক মাদকের মামলা। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারী ডিবি পুলিশের সোর্স দেলোয়ার হোসেনকে লক্ষ্মীনগরস্থ মেসার্স আশিক ব্রিক ফিল্ডে (ইটভাটা) শ্রমিকদের বাসভবনে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আলমগীর ও তার সহযোগী শফিক, ফয়সালসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী। এছাড়া আলমগীরের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ফতুল্লা মডেল থানায় মাদকের মামলা রয়েছে।

 

যার মামলা নম্বর ১৪, ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারী মাহাবুব গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজে তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় ডাকাতির মামলা হয়। যার মামলা (নং৯)। ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারী ঢাকা কলাবাগান থানায় ৫ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন। তখন তার নামে মামলা হয় যার মামলা (নং ১৯)। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারী জামাল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়।


এই ঘটনার দুই মামলার আয়ু ফতুল্লা মডেল থানার এস আই সুকান্ত দত্ত বলেন, আলমগীরের স্ত্রী মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন তার স্বামী আলমগীরের জিহবা কাটা হয়েছে। চোখ উঠানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার কাছে আলমগীরের লাশের সকল ছবি আছে। তার লাশের পোষ্ট মোর্টেম রিপোর্ট আমরা এখনো পাই নাই। তদন্ত চলছে। তদন্ত চলকালিন সব বিষয়ে তথ্য দিতে পারবো না।

এই বিভাগের আরো খবর