শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আলীগঞ্জ খেলার মাঠ রক্ষায় উত্তপ্ত ফতুল্লা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২১  

ঐতিহ্যবাহী আলীগঞ্জ খেলার মাঠ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের সাথে আলীগঞ্জবাসীর জলঘোলা কম হয়নি। নানামুখি আন্দোলন ও আদালতের নির্দেশনার পর পূরনো মাঠের উত্তর পার্শ্বের জায়গাটি বরাদ্ধ হয় আলীগঞ্জ খেলার মাঠ হিসেবে। তবে, করোনার কারণে কাজের গতি কমতি থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনই ঝুলে আছে আলীগঞ্জ খেলার মাঠটিও।

 

এদিকে, নতুন মাঠ বরাদ্ধ দেয়ার দীর্ঘ এক বছরেও তা খেলার উপযোগি হিসেবে তৈরী না করায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উপর ক্ষুব্দ হচ্ছেন স্থানীয়রা। উত্তপ্ত গোটা ফতুল্লা এলাকা। এমনকি আগামী ১২ জুন আলীগঞ্জে মানববন্ধনও করতে যাচ্ছে এলাকাবাসী। এতে নেতৃত্ব দেবে আলীগঞ্জ ক্লাব।


 
আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন থাকাকালীন গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, পুরাতন মাঠে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই নতুন মাঠটি খেলার উপযোগী করে তৈরী করে দেয়া হবে। কিন্তু আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। জেনেছি, আলীগঞ্জ খেলার মাঠ পূনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্ধ হয় ১৬ কোটি টাকার বরাদ্ধ আছে।

 

এরপরও কাজ হচ্ছে না। তারা যখন নতুন মাঠ থেকে টাওয়ার সরিয়ে নিয়েছিলেন, তখন আমরা ভরসা পেয়েছিলাম যে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুতই কাজ সম্পন্ন করবে। কিন্তু পরবর্তীতে এর বাস্তবায়ন দেখিনি। এমনকি, খানপুর হাসপাতাল থেকে খুড়ে আনা কনক্রিট মিশ্রিত মাটি এনে মাঠ ভরাট করে। এখন বৃষ্টি হওয়ায় কনক্রিটগুলো জেগে উঠেছে। এই মাটিতে মাঠ খেলার উপযুক্ত হবে না।


 
তিনি আরো বলেন, ‘বলা হয়েছিলো যে ভালোমানের টর্পের উইকেট বানিয়ে দিবে। প্যাভিলিয়ন করে দিবে। সীমানা প্রাচীর করবে, আলীগঞ্জ ক্লাব ভবন করে দেবে এবং পানির ডীপ মটর স্থাপন করবে। এগুলোর কোনটারই বাস্তবায়ন নেই। আলীগঞ্জ ক্লাবের অনেকেই তাদের সাথে কথা বললেও তারা কর্ণপাত করছে না। বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছে। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও তা দ্রুত বাস্তবায়ন করছে না। এই অবস্থায় আমরা কর্মসূচির ডাক দিয়েছি। আগামী ১২ জুন আলীগঞ্জ খেলার মাঠের সামনে মানববন্ধন করবো।’


 
এদিকে, গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মীর জহুরুল আরেফিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘খেলার মাঠ নির্মাণের কাজটি আমাদের প্রকল্পের আওতার মধ্যেই আছে। আমরা অবশ্যই এটি করে দেব। কিন্তু আমাদের যেই মূল প্রকল্প (আবাসন ভবন) সেটিইতো আমরা করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারছি না। আলীগঞ্জ খেলার মাঠ করে দেয়ার বিষয়টি যেহেতু আমাদের প্রকল্পের মধ্যে আছে, সেহেতু এটা আমরা অবশ্যই করে দেবো। আমরা যদি আগেই খেলার মাঠ করে দেই, তাহলে পার্শ্ববর্তী আবাসন ভবনের কাজ করতে গিয়ে মাঠ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আগে ভবনের কাজ করে পরবর্তীতে মাঠ তৈরী করে দেয়া হবে। আমাদেরতো পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে কাজ করলে হবে না।’   


  
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জে ১১ দশমিক ৬৫ একর জমি রয়েছে পিডব্লিউডির। এখানে প্রায় ৫ একর ৭০ শতাংশ জমিতে ঐতিহ্যবাহি আলীগঞ্জ খেলার মাঠ ছিলো। দেশ বরেণ্য ক্রীড়াবীদদের আগমণ ঘটেছে ওই মাঠে। কখনো ক্রিকেট, কখনো ফুটবল, একেরপর এক জমজমাট টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্রীড়া মোদিদের প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠে আলীগঞ্জ খেলার মাঠটি। তাইতো কমলমতি শিক্ষার্থী থেকে হাড় কাপুনে বৃদ্ধরাও মাঠ রক্ষায় ছিলেন সোচ্চার। মাঠ রক্ষায় নানা আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ।

 

একনেকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। অতঃপর পূরনো মাঠে আবাসনের কাজ চলমান রেখে পার্শ্ববর্তী বিস্তির্ণ জায়গাটি খেলার মাঠের জন্য বরাদ্ধ হয়। পূরনো মাঠে আবাসন ভবন নির্মানের কাজ চলমান রেখে নতুন ওই জায়গাটিতে আলীগঞ্জ খেলার মাঠ স্থানান্তর করা হয়। নতুন মাঠটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৩৭৫ ফিট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৭৫ ফিট। এই মাঠের প্রায় মধ্যস্থলে বিশালাকৃতির একটি ইলেক্ট্রিক টাওয়ার ছিলো। মাঠের সুবিধার্থে বিশালাকৃতির ওই টাওয়ারটিও নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে, মাঠ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। এর মাধ্যমে আবারও আলীগঞ্জ বাসীর সাথে গণপূর্ত বিভাগ মুখোমুখি অবস্থানের দিকে ধাবিত হচ্ছে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর