
বিএনপি নির্বাচনে না এলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। কারণ দলদুটি মহাজোটে থাকলেও পৃথকভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) ও আরেকটি আসন ব্যতীত ২৯৮টি আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দেয়। অপরদিকে জাতীয় পার্টিও ২৮৭টি আসনে তাদের প্রার্থী দেয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী না দেয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান অনেকটা নির্ভার রয়েছেন।
কেননা তার বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী প্রার্থী নেই। তবে নারায়ণগঞ্জের বাকি চারটি আসনের প্রত্যেকটিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও রয়েছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবশাম্ভাবী ছিল। তবে প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই শেষে মহাজোটের আদর্শিক জোট ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে মূল শরীক আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এ বিষয়ে বিফ্রিং করবেন বলে জানা গেছে। মহাজোটের শরীকদের নিয়ে এই বৈঠকে জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগের কাছে আসন ভাগাভাগি করতে পারে। আর তা হলে, গত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের দুটি আসন আওয়ামীলীগ মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দিলেও এবার এই সংখ্যা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির থলেতে নারায়ণগঞ্জ-৫ ঢুকে গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ), নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) ও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন তিনটির দুটিতে ছাড় দেয়ার দাবি তুলেছে জাতীয় পার্টি জানিয়েছে একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সাথে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের সাথে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
যদিও নারায়ণগঞ্জ-৪ ছাড়া বাকি প্রতিটি আসনেই আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ ব্যতীত বাকি আসনগুলোতে। এখন দেখার বিষয় আজ মহাজোটের শরীকদের সাথে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের আর কোন প্রার্থী আসন ভাগাভাগিতে কাটা পড়ে কিনা।
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ ছয়টার দিকে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক শুরু হয়। প্রায় তিন ঘন্টার বৈঠকে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করার বিষয়ে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা সঙ্গে আলোচনা করে। এই আলোচনার বিষয়ে আজ মঙ্গলবার ব্রিফিং করবেন ওবায়দুল কাদের। সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে এখনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি ১৪ দল।
অন্যদিকে আদর্শিক জোট ১৪ দলের শরিকদের পক্ষ থেকে সর্বমোট ২০টি আসন চাওয়া হলেও আওয়ামী লীগ দিতে চায় ৫টি আসন। এর মধ্যে জাসদ প্রধান হাসানুল হক ইনু ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, বগুড়ার একটি আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী এবং অন্য আরেকটি আসনে জাসদের প্রার্থী দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এই নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে ১৪ দলের শরিকরা। তাদের প্রত্যাশা অন্তত ২০টি আসন।
অন্যদিকে, আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গেও আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ওই বৈঠকে দুই দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। আসন বণ্টন এবং বিরোধী দল হিসেবে তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করতেই আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসতে যাচ্ছে দলটি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, আজ (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে দুই দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আসন বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। মূলত, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েই জাপা নেতৃবৃন্দ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিও জাপা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালেও প্রধান বিরোধীদল ছিল জাতীয় পার্টি। সে সময় বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতা হয়েছিলেন প্রয়াৎ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। তবে, এবার সেই পদটি ধারণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এদিকে দুই দলে বিভক্ত জাপার পুরোদমে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। রওশন এরশাদমুখীরা আগেই প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অন্যদিকে জিএম কাদেরও তার দলবল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে, পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনো সন্দেহ বিরাজ করছে প্রয়াৎ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই দলে। আসন ভাগাগাগি নিয়ে তাদের দলের ভেতরেই চলছে আন্তঃকোন্দল।
তথ্যসূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর আগে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ২৮৯ আসনের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়ে গেছে। এ নিয়েই জাতীয় পার্টি কিছুটা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। যে কারণে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং কয়েকটি আসনে সমঝোতার জন্য প্রস্তাব করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের সাথে আসন সমঝোতা করবে কি না সে ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হবে আগামীকাল।
জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এর আগেই জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জি এম কাদেরের অমত ছিল। এ নিয়ে শেষ দিকে এসে সরকারের দিক থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চাপ আসে। শেষ পর্যন্ত মোটা দাগে দুটি শর্তে জি এম কাদের নির্বাচনে যেতে সম্মত হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একটি হলো নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। এ ছাড়া তার সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এতে কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমঝোতার মাধ্যমে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা শেষেই জাতীয় পার্টির ভাগ্যে কি আছে তা বোঝা যাবে, এজন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল পর্যন্ত। যদি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়, তাহলে এবার সংসদে বিরোধী দলীয় প্রধান নেতা হিসেবে দেখা যাবে জিএম কাদেরকে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আদর্শিক জোট ১৪ দল। ঐ সময় থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটগত ভাবে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয় জোটের শরিকরা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তারা আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছায়।
সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ১৪ দল জোটগত ভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আদর্শিক জোট ১৪ দল ঐকবদ্ধ হয়ে ভোটে অংশ নেবে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এস.এ/জেসি