শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আসামীর নাম ওভাররাইট : জামালের পরিবর্তে গ্রেফতার হলো কামাল

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২১  

জামাল নামের এক ব্যাক্তিকে আদালত মাদক মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পরওয়ানার নামের ‘জ’ অংশটি ওভাররাইট করে ‘ক’ বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর কামাল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। 

 

কামাল হোসেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একজন মেম্বার প্রার্থী। কামাল হোসেনের অভিযোগ, নির্বাচনে সুবিধা পেতে তার প্রতিদ্বন্দ্বি এক প্রার্থী সদর থানার ওসি, ইন্সপেক্টর তদন্তসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে জামাল হোসেনকে গ্রেফতার না করে কেনো কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হলো সে সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে বলেছে আদালত। তবে আদালতের আদেশের দুইদিন পরেও নির্দেশের কাগজ পাননি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার। 

 

ভূক্তভোগি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর কুমিল্লার একটি আদালতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আলমগীর হোসেন ও জামাল হোসেন নামের দু’জনকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। দন্ডিতদের মধ্যে আলমগীর কুমিল্লার দাউদকান্দির মোঃ আলীর এবং জামাল হোসেন নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুরের সুরুজ মিয়ার ছেলে। দন্ডিতদের মধ্যে জামাল হোসেন রায় ঘোষণার সময় পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য কুমিল্লার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা পাঠানো হয়।

 

নারাযণগঞ্জ সদর মডেল থানায় জামালকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা পৌঁছার পর পরোয়ানার কাগজে থাকা ‘জামাল’ এর নাম টেম্পারিং করে ‘কামাল’ লিখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর মডেল থানা পুলিশ কামালকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর কামাল হোসেনকে পুলিশ কুমিল্লা আদালতে পাঠায়। আদালত আসামীর জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট জাচাই করে দেখতে পান গ্রেফতারকৃত আসামী কামাল হোসেন। অথচ মাদক আইনে সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত ব্যক্তির নাম জামাল হোসেন। তবে জামাল হোসেন ও নিরপরাধ কামাল হোসেন উভয়ের বাবার নামই সুরুজ মিয়া। 

 

আদালত নথি ও কামাল হোসেনের পাসপোর্ট যাচাই করে দেখতে পান, কুমিল্লার যে মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই মামলায় কামাল হোসেন নামের কোন আসামীই নেই। আর ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল যখন কুমিল্লার কোতয়ালি থানার অরণ্যপুর এলাকা থেকে ৯৫০ কেজি ভারতীয় গাঁজাসহ আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়, ওই সময় কামাল হোসেন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাসী ছিলেন। 


সদর থানা পুলিশ কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল মোহসীনের আদালতে সোপর্দ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ কপিতে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্র বনাম জামাল হোসেন গং। কিন্তু একই আদেশের নিচের অংশে আসামী হিসেবে কামাল হোসেনের নাম লেখা রয়েছে। 

 


এসব বিষয় বিবেচনা করে কুমিল্লার যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক তাকে জামিন প্রদান করেন। তবে এর আগেই তাকে ৯ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে। আদালত কামালের জামিনের আদেশে বলেন, কামাল হোসেন নামের কোন আসামী এই মামলায় নেই। কিন্তু জামাল হোসেনের নাম ওভাররাইটিং করে কামাল হোসেন করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার কামাল হোসেনকে এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। কেন জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার না করে কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে বলা হলো।’

 


জামাল হোসেন জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি মেম্বার পদপ্রার্থী। এ কারনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সদর থানার ওসি শাহ্ জামানকে ম্যানেজ করে তাকে গ্রেফতার করিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। ওসি শাহ জামানকে সহযোগিতা করেছেন ইন্সপেক্টর তদন্ত, এস আই ওয়ালী উল্লাহ ও এস আই মনির।

 

অভিযোগ সম্পর্ক জানতে চাইলে গোগনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনা বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। 

 

প্রতিবেশী আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, কামালেরা নয় ভাই-বোন। কিন্তু তার অন্য কোনো ভাইয়ের নাম জামাল নেই যে পুলিশ ভুল করে কামালকে গ্রেফতার করেছে বলা যাবে। এমনকি প্রতিবেশী-ও কারো নাম জামাল নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। 

 

ভূক্তভোগি কামাল হোসেন আরো জানান, আমরা বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। গ্রেপ্তারের সময় সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে শুধু তার নাম ও তার বাবার নাম জানতে চেয়েছে। গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কোন কাগজ দেখায়নি। একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে শুধু একটি গ্রেফতারি পরোয়ানার ছবি দেখিয়েছিলো।
 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, এমনটা হওয়ার কথা না। কেন এমন হয়েছে সেটি তিনি খতিয়ে দেখবেন। 

 

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, এ বিষয়ে এখনও তিনি আদালতের কোন চিঠি বা আদেশ পাননি। চিঠি পেলে তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


 

এই বিভাগের আরো খবর