বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইজ্জতের দাম ১২ হাজার টাকা !

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২১  

ফতুল্লার কুতুবপুরে এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠে শাহাদাত নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ পেলে পাগলা নন্দলালপুর উত্তর মহল্লা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মজিবর, সাধারণ সম্পাদক শহীদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলম বিচার শালিসীর নামে ১২ হাজার টাকার মাধ্যমে মিমাংসা করেন। মীমাংসার কথা বলে তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে সই রেখে ভুক্তভুগীর ইজ্জতের মূল্য ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ওই পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা।


গত ১৭ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাগলা নন্দলালপুর উত্তর মহল্লা পঞ্চায়েত কমিটির কার্যালয়ে ওই ধর্ষণের ঘটনাটি বিচার শালিসীর নামে ধামাচাপা দেয়া হয়। তবে, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, পাগলা নন্দলালপুর উত্তর মহল্লা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মজিবর, সাধারণ সম্পাদক শহীদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমের বিরুদ্ধে মসজিদ মাদ্রাসা ও বিচার শালিসির নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।


জানা যায়, ধর্ষক শাহাদাত (২২) কুমিল্লার লাকসাম থানাধীন সাতেশ্বর গ্রামের হাজী বাড়ীর মৃত আবুল কালামের ছেলে। বর্তমানে পাগলা নন্দলালপুর উত্তর মহল্লায় সকিনা বেগমের বাড়ীতে ভাড়ায় বসবাস করছে। ভুক্তভুগী মেয়ের নানি জানান, ‘গত ৫ মে সকালে আমি কাজে চলে যাই। সেই সুযোগে শাহাদাত (২২) আমার নাতনীকে জোরপূর্বক ‘ঢাকা ম্যাচ’ নামক একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমি কাজ শেষে বাড়িতে এসে তা জানতে পারি। আমার নাতনীকে না পেয়ে শাহাদাতের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে শাহাদাত কিছুই জানেন না বলে জানায়। আমি থানায় নিখোঁজ জিডি করেছিলাম। একদিন পর আমার নাতনী বাসায় এসে কান্না করে এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলেন। শাহাদাত তাকে ঢাকা মেছের একটি অজ্ঞাত স্থানে একদিন আটকে রেখেছিলেন।

 

এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে আমি পূনরায় থানায় যেতে চাইলে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মজিবর, সাধারণ সম্পাদক শহীদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলম আমাকে বলে, “থানা পুলিশ করার প্রয়োজন নেই। আমরা এই বিষয়টি মীমাংসা করে দিবো।” একপর্যায়ে ১৭ই মে পঞ্চায়েতের ক্লাবে তারা ১২ হাজার টাকার মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন এবং স্ট্যামে স্বাক্ষর রাখেন। আমি স্বাক্ষর করতে চাইনি, কিন্তু তখনকার পরিস্থিতির কারণে স্বাক্ষর না করেও উপায় ছিলো না।


সূত্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত পঞ্চায়েত কমিটির  নেতাকর্মীদের মাঝে দফায় দফায় মিটিং চলছিলো। ১৭ মে সোমবার রাতে তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে সই রেখে ভুক্তভুগীকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করা হয়।
এদিকে, ধর্ষণের মত অপরাধ ও শাস্তিমূলক ঘটনা স্থানীয় পর্যায়ে বিচার বা মীমাংসা করায় তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। তাই বিষয়টির সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।  


এ বিষয়ে পাগলা নন্দলালপুর উত্তর মহল্লা পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছেকৃত ভাবে মিমাংসা করিনি। উভয় পক্ষই নিজেরা মিমাংসা করে আমাদের কাছে এসেছিলো। আমরা স্ট্যাম্প করে তাদের সই রেখেছি।’


ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের কোন ঘটনাই স্থানীয় পর্যায়ে মিমাংসা যোগ্য নয়। আর কুতুবপুরের ঘটনার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।  অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


 

এই বিভাগের আরো খবর