শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ইফতারে এক টুকরো বরফেই প্রশান্তি

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৩  


 চলছে পবিত্র রমজান মাস। সূর্যের প্রখর তাপের কারণে প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। ছাতি ফাটা রোদে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। গরমে রোজা তাই শরীরের ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখা খুব জরুরি। তাই ইফতারে রোজাদাররা একটু স্বস্তি পেতে চান ঠান্ডা পানি।

 

 

গরমের তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে ইফতার, সেহরিতে ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার ঝোঁক থাকে অনেকেরই। রোজাদারদের রোজা পূর্ণতায় ইফতারের সময় এক গ্লাস শরবতের জুড়ি নেই। আর এই শরবত বানাতে দরকার পরে বরফের। কিন্তু ধনী লোকের ঘরে ফ্রিজ থাকলেও গরীবের ঘরে নেই ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর।

 

 

তাই ইফতারিতে সাধারণ পানি ছাড়া কিছুই মেলে না তাদের। তাই তীব্র গরমের শেষে ইফতারে একটুখানি ঠান্ডা পানির যোগান দিতে খেটে খাওয়া গরীব মানুষের প্রয়োজন হয় এক টুকরো বরফের। রমজানকে কেন্দ্র করে ফুটপাত ও বিভিন্ন মোড়ে ইফতারের পূর্বে দেখা মেলে ভ্রাম্যমাণ বরফ বিক্রেতাদের।

 


গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) শিল্পাঞ্চল বিসিক এর কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে রমজান কেন্দ্রিক বরফ বিক্রেতাদের বরফ বিক্রির দৃশ্য। ফতুল্লার শাসনগাও এলাকার কলাবাগান মোড়ে দেখা গেছে এক বরফ বিক্রেতা প্লাস্টিকের বস্তার উপর বড় আকারের বরফের খন্ড রেখে কেটে কেটে বিক্রি করছেন।

 

 

বরফ কেটে পলিথিনে করে তা ক্রেতাদের কাছে দিচ্ছেন। তার এই ভ্রাম্যমাণ বরফ বিক্রির দোকান থেকে ১০ টাকায় মিলছে বরফের টুকরো। ১০ টাকায় বরফের টুকরো কিনে খুশি ক্রেতারা। এই বরফ বিক্রির দোকানে এক টুকরো বরফ কিনতে এসেছেন বিসিকের পোশাককর্মী মো. আশফাক মিয়া।

 

 

তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই মোড়ের বরফ বিক্রির দোকান থেকে ইফতারের আগে ১০ টাকার বরফ নিয়ে বাসায় যাই। তিনি বলেন, ‘রমজান মাস চলছে, খুবই গরম তারপরেও রোজা ছাড়ছি না। বড়লোক মানুষদের ঘরে তো ফ্রিজ আছে কিন্তু আমাদের মত গরিব মানুষের ঘরে তো আর ফ্রিজ নাই।

 

 

তাই এই দোকান থেকেই দশ টাকার বরফ কিনে শরবত বানিয়ে ইফতার করব "। একই দোকানের আরেক বরফ ক্রেতা মিনু আরা বেগম বলেন,  ঘরে ফ্রিজ নাই। সারাদিনের সূর্যের তাপের কারণে বাসার পানি খুবই গরম থাকে। এমনিতেই তীব্র গরম তারপর ইফতারিতে বাসার পানি দিয়ে ইফতারি করতে ইচ্ছে করে না।

 

 

তাই ইফতারিতে বরফের ঠান্ডা পানির মধ্যে একটুখানি চিনি মিশিয়ে খেতে ইচ্ছে করে। তাই দশ টাকা দিয়ে একটুখানি বর কিন্তু এসেছি’। বিসিক এলাকার এক মুদি দোকানদার মো. রহিম মিয়া এসেছেন এই বরফের দোকানে বরফ কিনতে। তিনি বলেন, এই বরফ তারা কোথা থেকে নিয়ে এসেছে বা এই বরফ স্বাস্থ্যকর কিনা তা জানিনা।

 

 

কিন্তু মাত্র ১০ টাকায় এর থেকে ভালো বরফ কথা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনই দেখি এই দোকানদার বিকেল হলেই এখানে বরফ বিক্রি করা শুরু করেন। এই বিক্রি চলে ইফতারের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। অনেক মানুষ এই দোকান থেকে বরফ কেনেন। ক্রেতারা এই দোকান থেকে দশ টাকার বরফ কিনেই খুশি।

 

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এভাবেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় রমজানের সময় বরফ বিক্রি হয়। যারা বিক্রি করেন তারা বেশির ভাগই মৌসুমী ব্যবসায়ী। রমজান মাসে বরফ বিক্রি করলেও তারা প্রত্যেকেই অন্য পেশার। বাসার বাইরে যারা ইফতার করেন তাদের কাছে বরফের খুব কদর। বিসিকের আরেক বরফ বিক্রেতা মেহেদী হাসান।

 

 

পেশায় তিনি পোশাক শ্রমিক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শুধু রমজান মাসে বিকেলে বরফ বিক্রি করেন। বিসিক এবং এর আশপাশে যারা ইফতার করেন তাদের অনেকেই মেহেদীর কাছ থেকে বরফ কেনেন। ক্রেতারা জানান, তারা পানি ও শরবত জাতীয় পানীয় ঠান্ডা করতে বরফ ব্যবহার করেন।

 

 

অটো চালক রমজান আলী বলেন, ‘বিসিক এক নম্বর গেইটে ইফতার করব। আমরা চার জন অটো চালক মিলে পাশের একটি বাসা থেকে পানি এনেছি। আর পানিটা ঠান্ডা করতে নিলাম ১০ টাকার বরফ। রমজান মাসের বেশিরভাগ সময়ে বাইরে ইফতার করা হয়। তখন রাস্তার পাশ থেকে বরফ কিনে এভাবেই চালিয়ে দিই’।

 

 


রোজার সময় অনেকেই পিপাসা পাচ্ছে এমনটা বলে থাকেন। তাই ইফতারের সময় তারা বেশি বেশি বরফ দেওয়া পানি পান করেন। এটি করা যাবে না। এই ঠাণ্ডা পানি রোজাদারদের রক্তনালির সংকোচন বাড়িয়ে হজমে সমস্যা করে।

 

 

তাই ইফতার ও সেহরিতে বরফযুক্ত পানি পান না করে সাধারণ তাপমাত্রার পানি পান করতে হবে। আবার রমজানে যেহেতু স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাই ক্রেতাদের এসব বরফ স্বাস্থ্যকর তা যাচাই-বাছাই করেই কেনা উচিত। এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর