শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উচ্ছেদ হতে যাচ্ছে চাঁনমারি বস্তি

তুষার আহমেদ

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২১  

নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় চাঁনমারি বস্তিতে কয়েক যুগ ধরেই চলছে মাদক ব্যবসা। এই নিয়ে পত্রপত্রিকায় অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়; অভিযানও চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। তবে, শত প্রচেষ্টার পরও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি চাঁনমারির এই মাদক ব্যবসা।


তবে, এবার চঁনামারির মাদক ব্যবসা নির্মূল করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। সড়ক ও জনপথের সম্পত্তিতে গড়ে উঠা এই চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদ করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৯ই মে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।  

 
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এই বিষয়ে দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, ঈদের পর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশিল সমাজ, সাংবাদিকদের সহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই বিষয়ে বসা হবে। আলোচনা সাপেক্ষে তখন সিদ্ধান্ত হবে, চাঁনমারির বস্তিতে যারা বসবাস করেন, তাদেরকে অন্যত্র স্থানান্তর বা পূনর্বাসন করা যায় কিনা। আর লিংক রোড প্রশস্ত করা হবে বিধায় এমনিতেই চাঁনমারি বস্তি ভাঙা পড়বে।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাঁনমারিতে যেহেতু সরকারের জায়গা দখল করে অবৈধ ভাবে বস্তি গেড়ে বসে মাদক কেনা-বেচা হচ্ছে, সেহেতু আমি আরো আগেই জায়গার মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেছিলাম যে, এই বস্তি উৎখাত করতে। মাসিক আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়েও বিষয়টি একাধিকবার বলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিলে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু জনপ্রতিধিদের কাছ থেকে এতোদিন আশ্বাস ছাড়া কোন সহায়তা পাইনি। এরপ্রেক্ষিতে গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এই বিষয়টি পূনরায় উত্থাপনের পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ঈদের পর এই বস্তি উচ্ছেদ ও বস্তিবাসিকে পূর্নবাসনের মাধ্যমে এই জায়গাটি থেকে মাদকের আখড়া ভেঙ্গে দিতে হবে।’


নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমরা ঈদের পরে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করবো। তখন এটা নির্মূলে রেজ্যুলেশন করা হবে। তখন বিস্তারিত জানানো যাবে।’

তিনি বলেন, ‘চাঁনমারিতে মাদকের কেনা-বেচার অভিযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এটা কিভাবে নির্মূল করা যায় এবং চানমারি বস্তির বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, সেটার বিষয়ে পরবর্তীতে সভা করে রেজুলেশন করা হবে। ঈদের পরই সিদ্ধান্ত আসবে।’


সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. মেহেদী ইকবাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘চাঁনমারি বস্তিটি আমাদের সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় অবস্থিত। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি ছয় লেনে উন্নীত করণের কাজে এখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে। আমরা প্রশাসনের সহায়তায় শীঘ্রই আমাদের পুরো জমিটি দখলমুক্ত করবো। এক্ষেত্রে কিছু পক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। ঈদের পর এগুলো নিয়ে কাজ চলবে।’   


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এই বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছিলাম। তখন জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার এটা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ঈদের পরই বস্তি উচ্ছেদ করার বিষয়ে সভা ডেকে প্রয়োজনীয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’


সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়টি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন চাঁনমারি বস্তির পাশে অবস্থিত। একই স্থানে রয়েছে আদালত পাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়। অথচ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আদালত পাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের পাশে চাঁনমারী বস্তিতে চলছে নির্বিঘেœ মাদক কেনা-বেচা। কয়েক দশক ধরে এই চাঁনমারি বস্তিই মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এরপরও অদৃশ্য কারণে চাঁনমারিতে মাদক ব্যবসার মূল উৎপাটন করা যাচ্ছে না।  


রাস্তার পাশে মাদক নিয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রেতাদের হাকডাক দিতে দেখা যায়। প্রশাসনের অভিযান চললেও তা ধারাবাহিক নয়। সকালে অভিযান চললে দুপরেই জমে উঠছে মাদকের হাট। ফলে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।


সূত্র বলছে, চাঁনমারী এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত। আর ৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। যিনি প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। মাদক বিক্রেতাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে শায়েস্তা করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন বারংবার। তবে, সেই শামীম ওসমানের বাড়ির কাছাকাছি চাঁনমারী এলাকার অবস্থান হলেও ওই স্থান থেকে মাদক নির্মূলে তাকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না বলে অনেকেই প্রশ্ন তুলে থাকেন।


নগরবাসি বলছেন, শহরের টানবাজার এলাকার পতিতালয় শামীম ওসমান কঠোর হস্তে উচ্ছেদ ও পূনর্বাসন করলেও তার নিজ আসনে অবস্থিত চাঁনমারীতে এমন মাদকের হাট কেন নির্মূল করছেন না- তা নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন।


এদিকে, ইতিপূর্বে চাঁনমারী থেকে মাদক নির্মূলের জন্য মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে রেজুলেশন হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। তবে, রেজুলেশন হলেও অদৃশ্য কারণে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ব্যবসার নেপথ্যে কারা, তা-ও গুরুত্ব দিয়ে খুঁজে বের করতে দেখা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ফলে, নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রশ্ন, কোন্ অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে প্রকাশ্যেই চলছে চাঁনমারী এলাকায় মাদক ব্যবসা?
 

এই বিভাগের আরো খবর