বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উত্তর-দক্ষিণে ঐক্যের সুর

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২১  

#আমরা ঐক্য চাই : আনোয়ার হোসেন


#এটা সামাজিকতা, রাজনীতি ভিন্ন জিনিস : খোকন সাহা


# সহমর্মিতা অটুট থাকুক : আনিসুর রহমান দিপু



মেরুকরণের রাজনীতিতে দ্বিখন্ডিত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়া নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন অভ্যান্তরিণ কোন্দলে নিমজ্জিত। উভয় মেরুতে ছিলো নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লড়াই। দুই মেরুর মধ্যে উত্তর মেরুর মুখপাত্র নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান এবং দক্ষিণ মেরুর মুখপাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।

 

তাদের ঘিরেই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিলো নারায়ণগঞ্জ। সেই উত্তাপ ছড়িয়ে ছিলো উভয় মেরুর অনুসারীদের মাঝেও। নিজেদের মধ্যে বিভাজন এতোটাই ছিলো যে, সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও এক হতে দেখা যায়নি তাদের। তবে, দীর্ঘদিন পর হলেও উভয় মেরুর সেই উত্তাপে লেগেছে শান্তির প্রলেপ। দলের চেয়েও পরিবার ও ব্যক্তি বিশেষে ঝুঁকে পড়া বিভক্ত আওয়ামী লীগ এবার উপলক্ষ পেয়েছে ঐক্যের সুরে সুর মেলানোর, এক কাতারে দাঁড়ানোর। তাইতো উভয় মেরুতে বইছে ঐক্যের সুবাতাস। জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মা মমতাজ বেগম ইন্তেকাল করেন। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং জানাজায় অংশগ্রহণের পর মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্তনা দেন।

 

অন্যদিকে, জানাজায় শরিক হতে না পারলেও গত ২৭ জুলাই সাংসদ শামীম ওসমান তার অনুসারী নেতাদের নিয়ে মাসদাইর গোরস্থানে গিয়ে মেয়র আইভীর মায়ের কবর জিয়ারত করেন এবং পরবর্তীতে মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে তাকে শান্তনা দেন। এসময় শামীম ওসমান এবং মেয়র আইভীর অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। বোদ্ধামহল বলছেন, উভয় মেরুর নেতারা একেঅপরকে প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে থাকলেও মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর পর সেলিম ও শামীম ওসমানসহ তাদের অনুসারীরা মেয়র আইভীর পাশে দাঁড়ানোয় উভয় মেরুর মাঝে মান-অভিমানের সৃষ্ট বরফ গলতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সেলিম এবং শামীম ওসমান প্রশংসার দাবি রাখছেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, তাদের মধ্যে যেই দুরত্ব আছে, তা কিছুটা হলেও কমে আসবে। কামনা করি, তাদের মধ্যে যেই সহাবস্থান এখন দেখা যাচ্ছে, তা যেন আগামীতেও বজায় থাকে। তারা এই সহাবস্থান কতদিন ধরে রাখতে পারে তাই এখন দেখার বিষয়।’

 


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। রাজনৈতিক দুরত্ব থাকার পরও মেয়র আইভীর এই শোকের দিনে সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তার পাশে দাঁড়ানোয় আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমপি দ্বয়কে সাধুবাদ জানাই। তবে, এই পাশে দাঁড়ানোটা লোক দেখানো না হয়ে যেন মন থেকেই হয়, সেই প্রত্যাশা করি। আমরা চাই দুরত্ব ঘুচে যাক। ঐক্য ফিরুক।’  

 


মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক সহকর্মীর দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়ানোটা সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব। শামীম ওসমানের মা মারা যাওয়ার পরও মেয়র আইভী সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলো। আমরা ঐক্য চাই। এই উসিলায় যদি ঐক্য হয় তাহলে ভালো। ঐক্য না হলে ধরে নেব, মুসলমান হিসেবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। তবে আমি কামনা করি, এই উপলক্ষে উভয়ের দুরত্ব কমে আসুক। তারা এক কাতারে দাঁড়াক।’

 


মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুরপর আইভী এসেছিলেন, আইভীর মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে সহমর্মিতা জানানোর জন্য আমরা গিয়েছি। এটা সামাজিকতা। আসলে মেয়র আইভীর মা ভালো মানুষ ছিলেন। তবে, রাজনীতি এক জিনিস আর মৃত ব্যক্তি আরেক জিনিস!’

 


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিছুর রহমান দিপু বলেন, ‘আমরা একই পরিবারের সদস্য। এই পরিবার হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন কারণে মান-অভিমান হতে পারে। কিন্তু বোনের দুঃসময়ে ভাই ছুটে যাবে, ভাইয়ের দুঃসময়ে বোন ছুটে যাবে, এটাই স্বাভাবিক, এটাই মানবিকতা। যখন কোন দুর্যোগ ঘটে, তখন মানুষ মান অভিমান ভুলে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। পাশে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়ে অতীতের ভুল বা মান অভিমানকে পাশ কাটিয়ে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। আমার বিশ্বাস, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান মেয়র আইভীর পাশে দাঁড়ানোয় নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতির আগামীর পথ মসৃন হবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারবো। এই সহানুভুতি, সহমর্মিতার সম্পর্কটা অটুট থাকুক এটাই আমি কামনা করি।’

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল বলেন, ‘মানবতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন আমাদের এমপিদ্বয়। আর রাজনীতির দুরত্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে। মনুষ্যনীতি বা সম্পর্ক নীতির ক্ষেত্রে দুরত্ব নেই। আইভী আপা ওনাদের বোনের মত। সম্পর্ক নীতির মধ্যে আমি কোন দুরত্ব দেখি না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সময় চড়াই উৎরাই হয়। আওয়ামী লীগ বড় দল হিসেবে তা হতেই পারে। তবে, মৃত্যুর শোকের মাধ্যমে রাজনীতিতে কি হবে না হবে, সেই দিকটা নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। মৃত্যুর সাথে রাজনৈতিক ঐক্যকে গুলিয়ে ফেলতে চাই না। দুই পরিবারের মাঝে যুগ যুগ ধরে সম্পর্ক। পারিবারিক এই সম্পর্ক অটুট থাকবে সেটা প্রত্যাশা করি।

 

তবে, রাজনীতিটা ভিন্ন জায়গায়।’ ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীন আওয়ামী লীগার এম শওকত আলী বলেন, ‘সব জায়গায় রাজনীতি থাকে না। এটা পারিবারিক বিষয়। রাজনৈতিক বিষয়ে মানসিক ভাবে শত দুরত্ব থাকার পরও মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর খবরে সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান সাহেবসহ আমরা মেয়র আইভীর বাসায় গিয়েছি তার এই শোকে শরীক হওয়ার জন্য। সুতরাং আমি প্রত্যাশা করি যে, এই সহানুভুতির উছিলায় যেন নিজেদের মধ্যে জমে থাকা সকল মান-অভিমান দুর হয়। ঐক্য ফিরে আসে।’ ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘যার মা মারা যায়, সে অবশ্যই শোকে কাতর থাকে। এমন একটি শোকের সময়ে শামীম ওসমান ভাই মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে নিজেকে মহানুভব লিডার হিসেবে প্রমান করেছেন। এই ধারাটা যেন অভ্যাহত থাকে, সেই কামনা করছি।’    
 

এই বিভাগের আরো খবর