শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

উত্তর-দক্ষিণের বাকযুদ্ধ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  


# আইভী-আনোয়ারের বক্তব্যে এক সুর
# দক্ষিণে শামীমের সাথে গরম চন্দন

 
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দু’টি পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি বলয়। এই বলয় দু’টির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থাকাকালীন সময় থেকেই। বিভিন্ন সময় এই দ্বন্দ্বের পরিধির উত্থান-পতন ঘটলেও নির্মূল করতে পারেননি কেউ। আবারও এই বলয়ের মধ্যকার বাকযুদ্ধ বেশ কিছুদিন যাবতই উত্তাপ ছড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে।

 

 

এই বাকযুদ্ধ এখন আর শুধু দুই পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দুই বলয়ের সমর্থকদের মাঝেও। মেয়রের পক্ষ হতে নারাণয়গঞ্জ শহরকে ওসমানীয় সাম্রাজ্য বলে মন্তব্য করা হয়। এরই মধ্যে সেই সুরে কথা বলেছেন বর্তমানে মেয়র আইভীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। এর উত্তর-প্রতিউত্তরে এখন শহরের গণ্ডি পেরিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে পুরো জেলা তথা দেশ জুড়ে। 

 

 

একেএম শামসুজ্জোহা ও চুনকা পরিবারের মধ্যকার বিভেদের কথা নারায়ণগঞ্জবাসী কারও অজানা ছিল না।  সেই বিভেদ উত্তর দক্ষিণের বিরোধ নামে পরিচিত ছিল। যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও সমর্থকই বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

 

 

চুনকার মৃত্যুর পর তার পরিবারের কেউ রাজনীতিতে না থাকলেও উত্তর দক্ষিণের বলয়ের রাজনীতি কিংবা বিভেদ বিদ্যমান ছিল। এর পর বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে আবারও এই দুই পরিবারের প্রকাশ্য বিভেদ চলে আসে জনসম্মুখে। সম্প্রতি সিটি নির্বাচনেও চলে বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনার চাক্ষুস করেন নারায়ণগঞ্জবাসী। 

 

 

এর আগে বিভিন্ন বাকযুদ্ধের পর কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী অভিযোগ করে বলেন, দেশের সব জেলা চলে একরকমভাবে, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। প্রশাসনও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারি না, এখানে যারা প্রশাসনের লোক আসেন তারা কার হুকুম পালন করেন। সরকারের না স্থানীয় গডফাদারদের।’

 

 

এছাড়াও তিনি বলেন, পুরো শহর হয়ে গেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যের মধ্যে বসবাস করে আমরা ত্বকী মঞ্চের গুটিকয়েক মানুষ সব মানুষকে সম্পৃক্ত করে যেভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, মনে হয় আর বেশি দিন নেই, অত্যাচারী-জুলুমবাজদের মসনদ খুব তাড়াতাড়ি ধসে পড়বে। একই সাথে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের রাজধানী কুমিল্লা হয়ে যায় কি না জানি না। নামও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

 

 

নারায়ণগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ‘ওসমান নগরী’ হলে বোধহয় বেশি ভালো হত। তিনি বলেন,  এই অত্যাচার, অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীই আবার রুখে দাঁড়িয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন যখন রাজা অত্যাচারী হয়ে উঠে তখন প্রজারাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রজারা যে নারায়ণগঞ্জে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা দেখেছেন। 

 

 

অন্যদিকে তার এই বক্তব্যের সাথে মিল রেখেই যেন মন্তব্য করছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের গুরু হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। গত শনিবার এক শান্তি সমাবেশে তিনি বলেন, অনেকে বলে যে তারা তাহাজ্জুদের নামাজও কাজা করে না।

 

 

আশি রাকাত নামাজ পরে। তারা মিথ্যা বলতে বলতে এখন সত্য বললেও ওই নেতার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। তাই এইসব কথা বলে আর লাভ নেই। আপনাদের শেষ সময় আসন্ন। কেউ কেউ বলে, নারায়ণগঞ্জের মাটি অমুক ভাইয়ের ঘাটি। এসব কথা বলবেন না। যারা এগুলি বলে, তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। 

 

 

তবে এর পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি এমপি শামীম ওসমান। একটি কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অনেকের খারাপ লাগে প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিবারের কথা বললে বলেন, ওসমানীয় সাম্রাজ্য। আরে ভাই আমরা মানুষের জায়গা দখল করে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে সাম্রাজ্য করিনি। মানুষের ভালোবাসা দিয়ে করেছি। 

 

 

তবে কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি এমপি শামীম ওসমান। নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির (মেয়র) কাছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তাদের কষ্টের কথা বলতে গেলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান মেয়রের ব্যাপক সমালোচনা করেন।

 

 

তিনি বলেন, তার (মেয়রের) এমন কথায় আমি লজ্জা পেয়েছি। আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও কিন্ত মানুষ। আমি ওই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাই। জনপ্রতিনিধির এমন কথা শুনে লজ্জা হয়। আপনাদের ট্যাক্সের ফাইলে টাকা না থাকলে এতো বড় বড় বাড়ি-ঘরে কিভাবে থাকেন। 

 

 

গোদনাইলের একটি বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখন যারা অনেক বড় বড় কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আগরতলা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। লুট করে অনেকে সম্পদ কামিয়ে ছিলেন, চোরের মার বড় গলা। এরা অনেক বড় বড় কথা বলে, আমি তাদের উত্তর দেই না।

 

 

নারায়ণগঞ্জে কত বড় লোক, কত কোটি পতি, কত লুটেরা, কত বঙ্গবন্ধুর নাম বেঁচে পয়সা কামানো মানুষ, কথায় কথায় যারা রূপ বদলায়। কখনো কাক, কখনো কোকিল। অনেকে অনেক কথা বলে। কি কি জানি গালাগালি করে আমাদের। আমি আবার এগুলি শুনি না, কারণ আমার মায়া লাগে ওদের জন্য। 

 

 

শামীম ওসমানের ভক্ত হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল বলেন, শামীম ওসমানকে নিয়ে কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। শামীম ওসমানের মতো নেতা আছে বলে আপনারা এখনও নারায়ণগঞ্জে আছেন। বুঝে শুনে কথা বলবেন। নারায়ণগঞ্জে কেউ কেউ বলে ওসমানীয় সম্রাজ্য। ওসমানী সম্রাজ্যের সম্রাট শামীম ওসমান।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর