শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এক ঘাটে সব নেতা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  


#  সম্মেলনের আগে এমন ঐক্য নিয়ে নানা জনের নানা মত

 


জাতীয় নির্বাচন কিংবা স্থানীয় নির্বাচন, আন্দোলন কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের হুমকি কোন কিছুতেই জেলা ও মহানগর আওয়ামীগ এক হতে পারেনি। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনেও উত্তর-দক্ষিণ বলয়ের বিভক্তি  ছিলো আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে। তবে আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড যখন পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে তখন এই বিরল ঘটনাই ঘটতে শুরু করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে।

 

 

 

 

 

 

 

 

সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আগের চেয়ারম্যান  ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে সরিয়ে দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটির সহসভাপতি চন্দনশীলকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এছাড়া সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ তার মূল সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের নতুন কমিটি গঠনে সম্মেলনের তোরজোর করছে।

 

 

 

 

 

 

এই সম্মেলনের তোরজোর যে এবার সত্যিকার অর্থেই কার্যকরী তা অনুধাবন করতে পেরেই মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে ও বিভক্তিতে লিপ্ত নেতারা একজোট হয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে এই চিত্র চোখে পড়েছে।

 

 

 

 

 

 

ওয়ার্ড কমিটি, সিটির মনোনয়ন, সভাপতির পদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে বিভক্ত এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। কিন্তু  গতকাল একজন আরেকজনের পাশে থেকে দিব্যি একসাথে প্রোগ্রাম সফল করেছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে দ্বন্দ্ব ছিল আরো মারাত্মক। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ার পর থেকেই কমিটির অন্যান্য নেতাদের সাথে যোজন দুরুত্ব বেড়ে যায় সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদলের। এমনকি যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান ছিলেন কঠোর সমালোচনায়।

 

 

 

 

 

 

কিন্তু গতকাল তাদের একজন আরেকজনকে কেক খাইয়ে দেয়ার মতো বিরল দৃশ্য চোখে পড়েছে। এমনকি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন দুরুত্ব বজায় রাখা মিজানুর রহমান বাচ্চুও ছিলেন অত্যন্ত প্রাঞ্জল। এসব দৃশ্য কি ক্ষণিকের নাকি ঐক্য বেড়েছে এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মত, সামনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিন হতে যাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

এখানে পরিবর্তন হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।  মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের স্মরণকালের সবচাইতে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

 

 

 

 

 

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বিগত কয়েকবছর নেতিবাচক কারণে নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে শিরোনামে ছিলেন। এমনকি মামলার আসামিও হয়েছেন। তাছাড়া খোকন সাহার বিরুদ্ধে সিটি নির্বাচনের আগে আরো বেশ কিছু বির্তক তৈরি হয়। যা নিয়ে প্রশ্নবানের মুখোমুখি হতে হয় কেন্দ্রীয় নেতাদেরও।

 

 

 

 

 

 

 

আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের জেরে তো তিনি জেলা পরিষদ থেকেই ছীটকে গেলেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে রদবদল নেই। কমিটিতে থাকা এবং কমিটির বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারাও কমিটিতে বড় ধরণের পরিবর্তন চান। জেলা আওয়ামী লীগেও নেতাকর্মীদের একই দাবী।

 

 

 

 

 

 

 

 

এদিকে কমিটিতে থাকা নেতাদের আকাঙ্খঅ তারা যাতে কোন ক্রমেই কমিটি থেকে ছিটকে না যান আর তার দরুণ কেন্দ্রীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার দৃশ্য  দেখাতে চাইছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা এমন ধারণা বোদ্ধা মহলের। তবে, বোদ্ধা মহলের আরেকটি অংশ মনে করেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এখন বিভেদ হ্রাস করে এক হতে চাইছেন আওয়ামীীগ নেতারা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, ‘ঝগড়া করবো আবার একবছর পরে। এর অর্থ জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথাই বলেছেন তিনি।’ এছাড়া এখন বিভেদের মাত্রা বাড়ালে আসছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটির বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই নিজেদের ঐক্যবদ্ধ দেখানোর চেষ্টা করছেন নেতারা এমন ধারণা যোদ্ধা মহলের।

 

 

 

 

 

 

 


সূত্র বলছে, মেরুকরণের রাজনীতিতে দ্বিখন্ডিত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়া নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন অভ্যান্তরীণ কোন্দলে নিমজ্জিত। উভয় মেরুতে ছিলো নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লড়াই। দুই মেরুর মধ্যে উত্তর মেরুর মুখপাত্র নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান এবং দক্ষিণ মেরুর মুখপাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।

 

 

 

 

 

 

 

 

 


তাদের ঘিরেই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিলো নারায়ণগঞ্জ। সেই উত্তাপ ছড়িয়ে ছিলো উভয় মেরুর অনুসারীদের মাঝেও। নিজেদের মধ্যে বিভাজন এতোটাই ছিলো যে, সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও এক হতে দেখা যায়নি তাদের। তাদের অনুসারীদের একত্রে দলীয় কমসূচিতে দেখা যায় নাই।

 

 

 

 

 

 

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা দুই জনে শহরের দুই মেরুর হয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেন। খোকন সাহা শামীম ওসমানের অনুসারী হয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করে আসছেন।

 

 

 

 

 

 

 

অপর দিকে আনোয়ার হোসেন আইভীর অনুসারী না হলেও তার বলয়ের রাজনীতি করে বলেন দলের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে। মহানগরের এই দুই শীর্ষ নেতাকে কখনো দলীয় কর্মসূচিতে একত্রে দেখা যায় নাই। তারা নিজেদের মত করে নিজেরা কর্মসূচি পালন করে থাকেন। তবে, দীর্ঘদিন পর হলেও উভয় মেরুর সেই উত্তাপে লেগেছে শান্তির প্রলেপ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দলের চেয়েও পরিবার ও ব্যক্তি বিশেষে ঝুঁকে পড়া বিভক্ত আওয়ামী লীগ এবার উপলক্ষ পেয়েছে ঐক্যের সুরে সুর মেলানোর, এক কাতারে দাঁড়ানোর। তাইতো উভয় মেরুতে বইছে ঐক্যের সুবাতাস। অন্যদিকে সচেতন মহল বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের উত্তর দক্ষিন উভয় মেরুর নেতারা একে অপরকে প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর জন্ম দিনের কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে উভয় মেরুর মাঝে মান-অভিমানের সৃষ্ট বরফ গলতে শুরু করেছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই সহাবস্থান কতদিন ধরে রাখতে পারে তাই এখন দেখার বিষয়। তবে দলীয় নেতারা চান তাদের এই ঐক্য সব সময় বজায় থাকুক। ঐক্যের ধারাবাহিকতা বঝায় রেখে দলকে সুসংগঠিত করুক। এতে করে দল শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি নেতা কর্মীরা জাগ্রত থাকবে। এছাড়া দলীয় একাধিক নেতা জানান, তারা দুজনে দুই মেরুর হলেও একে অপরের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু তাদের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব নেই।

 

 

 

 

 

 

 

 

তার ঐক্যবদ্ধ থাকলে দল আরও শক্তিশালী হবে। তাদের ঐক্যে দলকে ক্ষমতায় রাখতে নেতা কর্মীরা উৎসাহিত হয়ে কাজ করবে।  মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ঐক্য চাই। ঐক্য না হলে দলের শক্তি কমে যায়। তাছাড়া বিএনপির ষড়যন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, নারায়ণগঞ্জে এসে রিজভী সাহেবরা উল্টা পাল্টা কথা বলে যাবেন আর আমরা ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিবো তা হবে না। আমরা যখন মাঠে নামবো তখন তারা ধারে কাছে আসতে পারবেন না। তাদেরকে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছি।   এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর