শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এক নিমিষে আশা-ভরসা সব শেষ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

‘আগে যেমন সাহস-ভরসা ছিল এখন আর তেমন নাই। বড় পোলাডা কইতাছিল, ২ বছর পর আমার অনার্স শেষ হইলে তোমার কিছু করা লাগবো না মা। অনার্স শেষ হইলে আমি চাকরি করমু, ইয়াছিনের পড়াশোনা সব আমি দেখমু। কিন্তু এক নিমিষে আমার আশা ভরসা সব শেষ। আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থাইকা গেল। মেজো পোলাডা কাইতাছিল এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ কইরাই একটা চাকরি নিবো। ঘরের হাল ধরবো। যারা ঘরের হাল ধরবো তারাই আমারে রাইখা চইলা গেল।’

 

গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মসজিদ বিস্ফোরণে নিহত হওয়া ২ ছেলে সাব্বির ও জুবায়েরের মা পারুল বিবি কথাগুলো বলছিলেন। পারুল বলেন, ছোট ছেলে জন্ম নেয়ার মাত্র ২১ দিনের মাথায় স্বামী তাদের রেখে চলে যায়। তারপর থেকে ৩ ছেলেকে নিয়ে কষ্ট করে জীবনযাপন করছিলেন তিনি। সবেমাত্র আশার মুখ দেখছিলেন আর সেখান থেকেই ২ ছেলের চলে যাওয়াটাকে কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না তিনি। ছেলেদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার নিজের চোখের জল লুকাচ্ছিলেন।

 

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলে উঠেন, ‘মাগরিবের নামাজ শেষ কইরা বড় পোলার লগে কোরআন শরীফ পড়তে বইছিলাম। এশার আজান দিছে আর পোলায় কোরআন শরীফ রাইখা উঠছে নামাজ পড়তে যাইবো। আমি পোলারে কইলাম, বাবা কোরআন শরীফের গিলাফটা লাগাইলা না? পোলায় আমারে কইলো এশার নামাজ শেষে আইসা আরেকটু পড়বো। এরপর যে পোলায় গেল আর আইলো না।’ মায়ের কান্না শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে পারুল বিবির ছোট ছেলে ইয়াছিন (১০)।

 

তাকে জাড়িয়ে ধরে পারুল বিবি বলে উঠলেন, ‘এখন আমার ছোট পোলাডাই সব আশা ভরসা। তয় ওইদিনের পর আজও অয় ঠিক হইতে পারে নাই। অন্য দুই ভাইয়ের মত খুব ভালো ছাত্র ছিল ইয়াছিন। ভাইয়েগো খুব আদরের ছিল। ভাইয়েরাই পড়াইতো, ভাইয়েরাই মাদ্রাসা নিয়া আসতো যাইতো। কিন্তু এখন ভাইগো ছাড়া পোলাডা আমার কেমন জানি হইয়া গেছে। ঠিকমত খায় না, পড়ে না। আগে হাজীগঞ্জ মাদ্রাসায় পড়াইতাম কিন্তু এখন টাকা পয়সার জন্যে এলাকার একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করামু। বাড়ি ভাড়া খাবার খরচ চালাইতে অনেক কষ্ট হইয়া যায়।’

 

তিনি বলেন, ‘সরকার যে অনুদান দিছিল ওইটা আর আমার হাতে পাই নাই। ওইটা আসছিলো সাব্বির আর জুবায়েরের বাবার নামে। কিন্তু উনি তো আর আমাদের সাথে থাকে না। ওই টাকা চাইতে গেলে বিচার শালিস বসে যাতে আমি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাই। এখন ওই টাকা আর ২-১টা টিউশনি করাইয়া যা আহে তা দিয়াই একটু একটু কইরা চলতাছি।’
 

এই বিভাগের আরো খবর