শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

একযুগেও চার লেনে উন্নিতের কাজ শুরু হয়নি

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২  

 

# অভিজ্ঞ লোকদের উচিৎ সুচিন্তিত একটি মতামত সরকারে কাছে দেওয়া : এমএ রশিদ
# আপাতত রাস্তার দুই পাশে ছয় ফুট প্রশস্ত করা হবে : উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সওজ

 

 

প্রায় এক যুগ ধরে থমকে আছে বন্দরের মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটির মেরামতের কাজ। এর মধ্যে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর এই উসিলা দিয়ে সড়কটি চার লেনে উন্নতি করা হবে বলে আটকিয়ে রাখা হয়েছে রাস্তার মেরামতের কাজ। কিন্তু তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, উদ্বোধন হবে হবে অবস্থায়। অথচ এখন পর্যন্ত মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটির প্রশস্তকরণ বা ৪ লেনে উন্নীত করণের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যে রাস্তা দিয়ে এখনকার স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলসহ বন্দর বাসীর যাতায়াতে নাভিশ্বাস অবস্থা, সেখানে রাস্তা প্রশস্ত কিংবা ৪ লেনে উন্নীত না করে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু করার সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল।

 

তাদের মতে এই ১৪ কিলোমিটার রাস্তাটিই রাজধানীর সাথে বন্দর বাসীর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যার প্রশস্ত মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট। যেখানে দুটি বাস কিংবা ট্রাক একসাথে ক্রস করতে পারে না। যে কোন একটি যানবাহনকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্যটিকে অতিক্রম করতে হয়, ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় জ্যামে আটকে থেকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এমনকি এই রাস্তার কার্পেটিংয়ের টেম্বার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা নতুন করে কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করাও সম্ভব নয় জানিয়েছেন কর্তপক্ষ। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেখানে রাস্তাটি এমন অবস্থায় রেখে কোনভাবেই সেতুটি উদ্বোধন করা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন সুধীজন।


 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির খুবই করুণ অবস্থা। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় টিউমারের মতো ফুলে আছে। তার সামনেই আবার আচমকা গর্ত। এই রাস্তার সম্পর্কে যাদের ধারণা কম, বা এখান দিয়ে চলাচলে অভ্যস্ত না, তাদের চরম বিপদে পড়তে হয়। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে এখানে গাড়ি চালানো অনেকটা মৃত্যু ফাঁদ দিয়ে গাড়ি চালানোর মতো। অন্যদিকে রাস্তার প্রশস্ত খুবই কম। প্রায় ২০ ফুটের মতো হবে। এ বিষয়ে ট্রাক চালক আব্দুল হামিদ খান জানান, আমরা শুধু এই রাস্তা দিয়েই গাড়ি চালাই।

 

তারপরও আমাদের বিপদে পড়তে হয়। কিন্তু যেসব চালকরা এখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে অভস্ত নয়, তাদের জন্য চরম বিপদের রাস্তা এটি। শুধু রাতে নয় দিনের বেলায়ও এখান দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুকিপূর্ণ। এখানকার মানুষ বাধ্য হয়েই এখান দিয়ে চলাচল করেন। তিনি জানান এখানকার কার্পেটিংয়ের কাজ সর্বশেষ কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বছর আগে করা হয়েছে। এখন কয়েকদিন পরপরই দেখি বিভিন্ন জায়গা থেকে রাস্তার পুরানো মাল এনে সেগুলোর সাথে কিছু নতুন পাথর ও পিচ মিশিয়ে নাম মাত্র সংস্কার করা হয়। অথচ এই সংস্কারের কাজ আমাদের লাভের তুলনায় ক্ষতিই বেশি করে। এমনিতে আমাদের উচু নিচু দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। তার উপর সংস্কারের কাজ করার পর যখনই এখান দিয়ে গাড়ি চলে তখন সেই নিম্নমানের নতুন মালামাল উঠে গিয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে নতুন  সমস্যার সৃষ্টি করে। নতুন নতুন টিউমার বা ফুলার সৃষ্টি করে।


 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট শাহ আলী খান পিন্টু বলেন, রাস্তা প্রশস্ত না করে এই সেতু চালু করার কোন যুক্তিই নেই। এরফলে প্রচন্ড রকমের যানজটসহ এখানকার মানুষ দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার শিকার হবে। এখনই মদনপুরের যে অবস্থা, তাতেই আমাদের আধ ঘন্টার মতো যানজটে আটকে থাকতে হয়। সেখানে ইউটার্ণ করতে গিয়ে আমাদের এমনিতেই অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ মিনিট নষ্ট হয়। এই অবস্থায় সেতুটি চালু হলে দেখা যাবে হাজার হাজার গাড়ি এই সড়ক দিয়ে যাবে। এমনিতেই এখান দিয়ে একটু বড় গাড়ি দুটি একসাথে ক্রস করতে পারে না। একটি থেমে থাকে আরেকটি ক্রস করে। তাই বন্দরবাসী যারা এই রাস্তাটি ব্যবহার করে ঢাকা বা মদনপুরে যাওয়া আসা করে তাদের অত্যন্ত কষ্ট হবে এবং অনেক সময় নষ্ট হবে। তাই সেতুটি উদ্বোধনের আগে অবশ্যই সড়কটি প্রশস্ত করতে হবে। ৪ লেনে উন্নীত করা সম্ভব না হলেও কমপক্ষে ২ লেনে উন্নীত করতে হবে।  


 
বন্দর উপজেলা পরিষদ ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ বলেন, এটা স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, যদি শীতলক্ষ্যা সেতুটি চালু করা হয়, তখন যে হারে দক্ষিণাঞ্চল থেকে গাড়িগুলো আসা শুরু করবে, আমার ধারণা তখন গাড়ি চলবে না, এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। তখন শুধু দুর্ভোগ বাড়বে তা নয়, সীমাহীন দুর্ভোগ বাড়বে। বন্দরে অবস্থিত কারখানাগুলোর উৎপাদন কমে যাবে এবং উৎপাদিত পণ্য নিয়ে রাস্তায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি রাস্তাটি এ অবস্থায় রেখে সেতুটি চালু করা কোনভাবেই সম্ভব না। এই রাস্তা একটি খুবই ছোট রাস্তা। আমার মনে হয় যারা ভাল চিন্তা-ভাবনা করেন, অভিজ্ঞ লোক আছেন তাদের সুচিন্তিত একটি মতামত সরকারে কাছে দেওয়া উচিৎ।

 

রাস্তাটার কাজ করার পর যেন সেতুটি চালু করা হয়। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি, আমি বুঝি আমার কতটুকু দুর্ভোগ হয়। আমার সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি প্রত্যেককেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই দুর্ভোগের সমাধান হওয়ার আগেই যদি সেতু চালুর মাধ্যমে আরও গাড়ি চলে আসে তাহলে গাড়ি তো চলবে না, গাড়িগুলোকে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কলকারখানার মালামাল, উৎপাদনের মালামালসহ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তিনি আরও জানান, আমি চিন্তা করছিলাম, আমরা যদি প্রশাসনের লোকদের নিয়ে বসে এমন একটা ব্যবস্থা করতে পারি যে, সেতু দিয়ে আপাতত ভারি যানবাহন চলাচল না করে হালকা ধরণের গাড়ি চলাচল করবে, তাহলেই এটা সম্ভব হতে পারে।


 
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, অন্য একটি প্রোগ্রাম থেকে এই প্রকল্পের জন্য আপাতত একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে এই রাস্তার দুই পাশে তিন ফুট করে ছয়ফুট প্রশস্ত করা হবে। খুব দ্রুতই এই কাজটি ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তাটির লেয়ার তুলে এখানে নতুন করে লেয়ারের মাধ্যমে কার্পেটিং করা হবে। তবে আপাতত ৪ লেনে উন্নীতকরণ হচ্ছে না। ৪ লেনে উন্নীতকরণের বিষয়ে একটি প্রস্তাব বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপিতে আছে। আমাদের প্রস্তাবটি প্রস্তুত হলে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ অনুমোদন হওয়ার পর কাজ করা হবে। আপাতত রাস্তাটি কিছুটা প্রশস্ত করার মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করার ব্যবস্থা করা হবে।এমই/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর