বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

একশ ফুটের আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কে বদলে গেছে বন্দর

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

স্পেন থেকে ৮ বছর পর দেশে ফিরেছেন রুবেল। বিমানবন্দর থেকে ভোর রাতে যখন নিজের বাড়ি বন্দরের ২২ নং ওয়ার্ডের আমিন আবাসিক এলাকায় এসে পৌঁছান। তখন অনেকটাই বিস্মিত তিনি। নিজের চেনা রাস্তা, বাড়ি সবকিছুই অচেনা লাগছে। রেখে যাওয়া গিঞ্জি আর সরু রাস্তা কোন কিছু নেই। নিজের শৈশব কৈশোরের স্মৃতিমাখা সেই রাস্তা দেখতে না পাওয়ার কোন আক্ষেপ তাকে গ্রাস করেনি বরঞ্চ তার চোখেমুখে ছিল রাজ্যের বিস্ময়।

 

একসময় ভাঙাচোরা, কাদাপানিযুক্ত এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও ছিল দায়। এখন সেখানে সুবিশাল চওড়া রাস্তা। রাস্তার মাঝখানের সড়কের ডিভাইডার জুড়ে সুন্দর বৃক্ষরাজি আর তার মাঝখানে লালনীল সড়ক বাতি। তার ঘোর কাটে না। অবাক চোখ দিয়ে দেখছেন ৮ বছর আগের রেখে যাওয়া বন্দরকে। স্পেনে থাকতে বন্ধু কিংবা পরিবার থেকে বন্দরের বদলে যাওয়া গল্প শুনতেন। শুনে ভাবতেন যতটা শুনছেন ততটা হয়তো না। নিজের চোখে দেখে এখন তার বিস্ময় কাটে না। স্বপ্নের মতোই রাস্তা এখন তার নিজ দেশে নিজ শহরে। বিদেশ থেকে ফিরে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

 

স্থানীয়রা জানায়, একসময় বন্দরের রাস্তাঘাটের ছিল বেহাল অবস্থা। কাদাপানি ও স্যুয়ারেজের ময়লা ও নোংরা পানি ভেঙে প্রতিদিন চলাচল করতো হতো এখানকার বাসিন্দাদের। বারো মাসই ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা ময়লা ও নোংরা পানিতে ডুবে থাকতো অনেক রাস্তা। এমন অনেক এলাকায় যেমন রাস্তার অস্তিত্ব ছিল না, তেমনি ড্রেন না থাকায় এসব রাস্তায় বাসাবাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লা পানির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো মানুষদের। সেইসব এখন অতীত। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কদমরসুল অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।

 

৯ টি ওয়ার্ডের গলিতে গলিতে এখন পাকা রাস্তা, ফুটপাতসহ ড্রেন। পুরাতন সড়ক যেমন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে তেমনি নির্মাণ করা হয়েছে নতুন নতুন রাস্তা। এক আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কেই বদলে গেছে সিটি কর্পোরেশনের কদমরসুল অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। একসময় যা ছিল মাত্র ১২ ফুট রাস্তা। আজ তা ১০০ ফুটের সুপ্রশস্থ বিশাল আলী আহাম্মদ চুনকা সড়ক। প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কের রয়েছে ২৮টি লিংক রোড। একসময় এ সড়কের দুইপাশে সরকারি জায়গা দখল করে ছিল বাজার ও সারি সারি দোকান। অনেক জায়গা ছিল ডোবা-নালা। দখলদারদের কাছ থেকে সে জায়গা উদ্ধার করে মেয়র আইভীর চেষ্টায় সরু গলিকে রূপ দেওয়া হয়েছে ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়কে।

 

সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার প্রথম মেয়াদে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে শুরু করেন এই রাস্তার নির্মাণ কাজ। ২০১৫ সালেই এই রাস্তা মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মেয়র আইভী। এই এক সড়কেই বদলে গেছে এখানকার আর্থসামাজিক অবস্থা। এখানকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি বেড়েছে এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান। এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে জায়গা জমির দাম। ১৯ নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জের বাসিন্দা দেলু মিয়া বলেন, ‘এমন একটি রাস্তা হবে তা ছিল আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে ধরা দিয়েছে।’

 

এই বিভাগের আরো খবর