শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এবার কার পালা

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২  


# দুই মেরুর নেতাদের দৌড়ঝাঁপ


ক্ষমতাসীন দল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ মানেই দুই মেরুর প্রভাব বিস্তার। সেটা হোক কোন নির্বাচন বা দলীয় কমিটি গঠন। সব জায়গাতেই তাদের প্রভাব থাকবেই। এখানে তৃতীয় শক্তি গড়ে, আসল ধারার দলীয় রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে সেই সাহসও কেউ দেখাতে পারে না; দুই মেরুর প্রভাব বিস্তারের জন্য।

 

 

 

তারপরেও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চান জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সম্প্রতি সময়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসছে। তারই প্রতিফলন হিসেবে ইতোমধ্যে গাইবন্দার এমপি ও ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বির আসনে উপ নির্বাচনে তার পরিবার থেকে মনোনয়ন না দিয়ে কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্র লীগের নেতা রিপনকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

 

 

 


এদিকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে দলীয় নেতাদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হতে যাচ্ছে। এই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সাথে ক্ষমতাসীন দলের জেলা সভাপতি ও সেক্রেটারির আমল নামা তুলে ধরা হবে।

 

 

 

তাদের কর্মকান্ড জবাবদিহির আওতায় আনা হতে পারে বলে জানান দলীয় নেতারা। জানা যায়, বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদের আশীর্বাদে জেলার শীর্ষ পদ পান। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল জেলার প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের আশীর্বাদে পদ পেয়ে যান।

 

 

 

 

কিন্তু এবার এই দুই নেতাকে নিয়ে দলীয় নেতাদের মাঝে অভিযোগের শেষ নেই। তাছাড়া তাদের কার্মকান্ড নিয়ে ইতোমধ্যে তারা বিতকির্ত হয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে এবার শামীম ওসমানের আশীর্বাদ কে পাবে? তার বিপরীতে দক্ষিণ মেরু থেকে মেয়র আইভীর আর্শীবাদ কে পাবে তা নিয়ে আলোচনা উঠেছে।

 

 

 


দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের হাওয়া বইছে। এতে করে পদ প্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নিজেদের অবস্থান জাহির করার জন্য নানাভাবে প্রচষ্টো চালেিয় যাচ্ছেন। সেই সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও জেলা ও মহানগর নেতাদের পদ প্রত্যাশী নেতাদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করছেন।

 

 

 

তবে দলকে শক্তিশালী করার জন্য সব দিক বিবেচনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার আলোচনা হচ্ছে। উত্তর-দক্ষিন উভয় মেরু ঠিক রেখে কমিটি হবে সেই প্রত্যাশা নেতা কর্মীদের।

 

 

 

 
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতারা মাঠে নেমেছে। তারা প্রত্যেকেই শেখা হাসিনার প্রতি আনুগত্য রেখে যে কোন পদে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

 

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি পদে আগ্রহী হিসেবে আলোচনায় আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিসুর রহমান দিপু, তিনি সাংসদ শামীম ওসমানের বন্ধু হলেও বর্তমানে মেয়র আইভী বলয়ে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে থেকে রাজনীতি করছেন।

 

 

 

 

জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া, মিজানুর বাচ্চু, বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই সভাপতি পদে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তার মাঝে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু উত্তর বলয়ের সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারি।

 

 

 

তবে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তিনি বাদ পড়তে পারে বলে জানান একাধিক নেতৃবৃন্দ। অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসার জন্য আলোচনায়  রয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের ২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু,  জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, এবং র্বতমান সেক্রেটারী আবুল হাসনাত শহীদ মো. বাদল।

 

 

 

সাধারন সম্পাদক প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন দক্ষিণ বলয়ের মেয়র আইভীর অনুসারী। তার বিপরীতে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল উত্তর বলয়ের এমপি শামীম ওসমানের অনুসারি। প্রভাবশালী এমপির  আশীর্বাদে তিনি ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যূতে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

 


এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটিতে সভাপতি পদে আলোচনা রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা, র্বতমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু চন্দন শীল, এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

 

 

 

 

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন র্বতমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আহসান হাবিব ও শাহ নিজাম, জিএম আরমান। মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দক্ষিন বলয়ের আইভী পন্থী হয়ে রাজনীতিতে রয়েছেন। অপর দিকে চন্দন শীল এবং এড. খোকন সাহা দুজনেই এমপি শামীম ওসমানের বন্ধু।

 

 

 

এই সাংসদের কারিশমায় এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চন্দন শীল চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাই এখানে খোকন সাহার আশীবার্দ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ সম্পাদক পদে শাহ নিজাম, জি এম আরমান দুজনেই শামীম ওসমানের অনুসারী হয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেন।

 

 

 

তাদের বিপরীতে আহসান হাবিব, জিএম আরাফাত মেয়র আইভী বলয়ের হয়ে দলীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তাই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটিতে দক্ষিন বলয় থেকে মেয়র আইভীর আশীবার্দ কারা পাচ্ছেন। একই ভাবে তারা প্রশ্ন তুলেন উত্তর মেরু থেকে সাংসদ শামীম ওসমানের আশীর্বাদ কারা পাচ্ছেন।

 

 

 

 

কেননা এখানে এই দুই মেরু থেকে যারা আশীর্বাদ পাইবেন তারাই জেলা মহানগর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন। তবে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদে নৌকার মনোনয়নে শামীম ওসমান জয়ী হয়েছেন। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এবার মেয়র আইভীর পালা। কমিটিতে তার বলয়ের লোকেরা প্রাধান্য পাবেন; সেই আশা করেন ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ।

 

 

 

যারা দুই বলয়ের আশীর্বাদ পাবেন তারাই আগামীতে ক্ষমতাসীন দলকে নেতৃত্ব দিবেন। কিন্তু দলীয় নেতারা ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের চান। এছাড়া বর্তমান কমিটিতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ব্যর্থতা নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। তাই সব কিছু মিলিয়ে এবার নতুন কমিটিতে নতুন মুখ আসবে সেই প্রত্যশা নেতা কর্মীদের।

 

 

 


আগামীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থাকা ও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে জেলা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু  এর আগে একতরফা কমিটি হওয়ায় অনেক র্শীষ নেতারা জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে পদ পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বরং তারা গ্রূপিং এর কবলে পড়ে পদ বঞ্চিত ছিলেন।

 

 

 

তাছাড়া দীর্ঘ দিন কমিটি না হওয়ায় অনেক নেতা নেতৃত্বে আসার জন্য আলোচনায় রয়েছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সব মরেুতে এখন পদ পাওয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পদ প্রত্যাশীরা নিজ বলয়ের নেতার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন।

 

 

 

আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু জানান, দলের জন্য নিস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছি এবং যাবো নেত্রী আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে তখন তা আমি দক্ষতার সাথে পালন করেছি। নেত্রী  আমাকে যে দায়িত্ব দিবে আমি তা মেনে নিয়ে কাজ করে যাবো। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর