
একজন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরেকজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অর্থাৎ দুইজনই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কিংবা নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতা এবং এই দুই নেতা-ই নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। আবদুল হাই প্রশাসক হিসেবে এবং আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেন।
অথচ একই দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও দুই জনকে খুব কম বিষয়েই ঐক্যমতে পৌঁছাতে দেখা গেছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রার্থীর দাবিতে এই দুইজনকে এক হতে দেখা যায়। এর বাইরে তাদের দুইজনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে তেমনভাবে দেখা যায়নি। এমনকি একজন যখন উত্তর বলয়ের হয়ে কাজ করেন অন্যজনকে তখন তার বিপক্ষে বলয়ের সাথে মিশতে দেখা যায়।
এমনকি তারা যদি কখনও এক মঞ্চে বসে কর্মসূচী পালন করেন তাতেও আওয়ামী লীগের তৃণমূলসহ নেতা কর্মী ও সমর্থকদের একটু হলেও বিস্মিত হতে দেখা যায়।তবে তৃণমূল সবসময়ই চায় তারাসহ পুরো নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সকল নেতৃত্ব এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াক। তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে আবারও দুইজনের প্রতিযোগিত চোখে পড়ছে। যেখানে আবদুল হাই এবং আনোয়ার হোসেন দুইজনই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
মূলত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের শুরু হয়েছিল জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে। এরপর ২০১৬ সালে যখন আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন প্রশাসক হিসেবে সাবেক হওয়া আব্দুল হাই আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের গাড়িটিও বুঝিয়ে দেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
এরপর যখন ২০১৯ সালের রমজানে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে আবদুল হাই এবং আনোয়ার হোসেন প্রথম এক টেবিলে বসে। এর ফলে দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকগণ অনেক খুশিও হয়েছিল বলে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সেই ইফতার মাহফিলে সেই গাড়ির মাধ্যমেই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। মার্ক টাওয়ারের বাসা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইকে মহানগরের ইফতার মাহফিলে আনতে আনোয়ার হোসেন পাঠিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সেই গাড়িটি।
আর সেই গাড়িতে চড়েই আসেন আব্দুল হাই। এমনকি ইফতার শেষে সেই গাড়িতে করেই মার্ক টাওয়ারের বাসায় আব্দুল হাইকে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। যেখানে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবদুল হাইকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব দেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পুরো ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে ২০১৬ সালে দায়িত্ব ছাড়েন এবং একই বছরের ২৮শে ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৫ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এস.এ/জেসি