মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

এলাকার এমন চিত্র অন্তত ১৫ বছরের পুরনো

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২১  

ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায় জলাবদ্ধতার চিত্র অন্তত ১৫ বছরের পুরনো। এই দীর্ঘ ১৫ বছরেও হয়নি স্থায়ী কোন সমাধান। জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে  আওয়ামী লীগের সমর্থনে এমপি হন সারাহ বেগম কবরী। এরপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন থেকে নিয়ে অদ্যবধি টানা ৮ বছর ধরে এই এলাকার এমপি সাংসদ শামীম ওসমান। শ্লোগাণে বলা হয়, ফতুল্লার মাটি শামীম ওসমানের ঘাটি। কিন্তু সেই শামীম ওসমানের ঘাটিই এখন ডুবে আছে পানির নিচে।    

 


স্থানীয়রা বলছেন, লালপুরের এই পানির নেপথ্যে স্থানীয় মহলের ইগোর রাজনীতি রয়েছে। এই রাজনীতিতে যেমন রয়েছে অহমিকা, তেমনই রয়েছে একটি বাণিজ্যও। ভোগান্তিকে কেন্দ্র করে এমন রাজনীতি ও বাণিজ্যের ডালপালা বুনেছেন স্বার্থান্বেষী মহল। এদের কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি, আবার কেউ কেউ নিজেদের আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করে থাকেন। আর এই রাজনীতিতে সূক্ষ্মভাবে জড়িয়ে আছে স্থানীয় বিএনপি নেতারাও। সরেজমিনে গিয়ে এমন রাজনীতি ও বাণিজ্যের কথাই শোনা গেলো ভুক্তভুগিদের মুখ থেকে।  

 


লালপুরের আদি বাসিন্দারা বলছেন, লালপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ জায়গার মালিক বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ-আলম। নানা কারণেই স্থানীদের কাছে তিনি দানবীর হিসেবে ভূষিত হয়েছিলেন। শাহ-আলম চাইলেই তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই জলাবদ্ধতার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু রাজনৈতিক নানা কারণে তিনি এগিয়ে আসছেন না। আবার এগিয়ে আসতে চাইলেও রাজনীতিতে তার প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া পক্ষটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতা শাহ-আলমের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ‘২০০৮ সালে শাহআলম বিগত সময়ে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পদে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজয় বরণ করেন শাহ-আলম। তবে কবরীর জায়গায় শাহ-আলম যদি জয়ী হতেন, তাহলে তিনি ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে হলেও লালপুরের জলাবদ্ধতা দুরকরণে এগিয়ে আসতেন। চাইলে এখনো সেটা করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না এই কারণেই যে, তিনি সেখানকার জনপ্রতিনিধি না। আবার এলাকাবাসির ভোগান্তির কথা ভেবে যদি তিনি এগিয়ে আসেনও, তাতেও বাঁধ সাধবে শামীম ওসমান অনুসারীরা।  

 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রবীন এক ব্যক্তি বলেন, ‘শামীম ওসমানও চাইলে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা দূরকরণে অবদান রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না। কারণ তিনি জানেন, লালপুর এলাকাটি বিএনপি বা শাহ আলমের ঘাঁটি। তাই জলাবদ্ধতা দুরকরলেও আগামীতে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে লালপুর কেন্দ্রে নির্ঘাত পরাজিত হবেন শামীম ওসমান। তা জেনে বুঝেই তিনি লালপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এগিয়ে আসছেন না। এমনকি এখনো পর্যন্ত তিনি সরেজমিনে দেখতেও আসেননি। আবার অন্যকেউ এগিয়ে আসতে চাইলেও রাজনৈতিক ইগোর কারণে তার অনুসারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

 


উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘লালপুর পাম্প হাউজে বর্তমানে ২৫ ঘোরার ২টি এবং ৫০ ঘোরার ১টি সেঁচ পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ ঘোরা ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পটি দিয়েছেন বিএনপি নেতা শাহ-আলম। তা নিয়ে শামীম ওসমান অনুসারী কিছু নেতা তুলকালাম কান্ড ঘটায়। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে শামীম ওসমানের এলাকার দুর্ভোগ লাঘবে বিএনপি নেতা সহায়তা করে বাহবা কুড়াবে, এটা শামীম ওসমানের অনুসারীরা হতে দেবেন না! তাই শাহ-আলম এর দেয়া পাম্প শামীম ওসমান দিয়েছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই চাউর করেছেন। মূলত লালপুরের এই পানিটা এখন রাজনীতি হয়ে গেছে। একটি পক্ষ পানি নিয়ে রাজনীতি করছে, আরেকটি পক্ষ আবার বাণিজ্যও করছে। পানি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেকশন হয়। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ চান পানিটা এভাবেই থেকে যাক।

 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘লালপুরের জলাবদ্ধতার বিষয়ে সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে কথা বলতে আমরা একাধিকবার রাইফেল ক্লাবে গিয়েছি। সেখানে তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তিনি প্রায় সময় সদর উপজেলায় আসেন। আমরা সদর উপজেলায় গিয়ে শামীম ওসমানকে পেলেও তিনি এই বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলেননি। ফতুল্লায় শামীম ওসমানের নেতাকর্মী যারা আছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এগিয়ে আসলেও গা ছাড়া ভাব।

 


এদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। গত পরশু পূর্ন কমিটি নিয়ে প্রতিনিধি দল পরিদর্শণে যায় ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায়। সেখানে জলাবদ্ধতার এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন কমিটির প্রত্যেকেই। জলাবদ্ধতা দুর করার উপায় নিয়ে চিন্তিত খোদ প্রতিনিধি দলটিও।    
 

এই বিভাগের আরো খবর