শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এহসানের মনোবাসনা, আ’লীগের আস্থাহীনতা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১  

ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আর তাই প্রস্তুতি নিতে শুরু করছে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ। আর এর জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে যারা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের নিয়ে চলছে নিজেদের মধ্যে আলোচনা। এখান থেকেই যোগ্য লোকের সন্ধান করবেন তারা। আর এই যোগ্যতার বিচারে অর্থ, সাহস ও দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রধান্য দিবে তৃণমূল। কারণ বন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ধারণা, এবারের নির্বাচন শুধু প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

 

প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করবে স্বয়ং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টি সমর্থিত সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তার উপর ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করবে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ। তাই এবার এখানকার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে কাউকে নির্বাচিত করতে হলে তাকে অবশ্যই এসব গুণাগুন থাকতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের তৃণমুল পর্যায়সহ ত্যাগী নেতৃবৃন্দ। এবারের নির্বাচন খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বোদ্ধামহল। তাদের ধারণা জাতীয় পার্টি তাদের অবস্থান ধরে রাখতে এই পদটি কোন অবস্থাতেই ছাড়তে চাইবে না।


 
বন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্থানীয় বেশ কয়েকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কোন অনুষ্ঠানে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে ডাকে না, কিংবা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন অনুষ্ঠানেও তারা থাকেন না। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে যেসব সরকারী অনুদান কিংবা সহায়তা আসে তা স্থানীয় হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। কে পেয়েছেন  আর কে পাননি তা তারা জানতেও পারেন না। ঐসব হাইব্রীড নেতারা তাদের অনুগতদের মাঝে এসব বিতরণ করেন আর বাকীটার কি হয় ! তা তারাই বলতে পারবে।

 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ২৫ শত টাকা করে যে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে তা কতজনকে কার মাধ্যমে দেয়া হয়েছে তা স্থানীয় প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতারা জানে না বলে তারা জানান। তাই এসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক এটা না চেয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক এটা চাইবে? এই সব বিষয় নিয়ে মাতবরি করেছেন স্থানীয় লেজুরবৃত্তি করা হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতাসহ স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র নেতা কর্মীরা।

 

স্থানীয় নেতারা দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, এখন এমন একটা সময় হয়েছে যে, কিছু পাতি নেতা যারা এলাকায় কোন পাত্তাই পেতো না, তারা এখন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে বুক ফুলাইয়া চলতাছে। ৫/৭ বছর আগে যেসব মানুষের খাবার টাকার সন্ধান করতে দিন ফুরাতো, এখন তারা কিছু না করেও অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে। তাদের বাড়ি ঘর এখন জমিদারী স্টাইলের হয়ে গেছে। তাদের যোগ্যতা একটাই, তারা কোন না কোন ভাবে জাতীয় পার্টির এমপির গুণগান করে। তারা এখন স্থানীয় বিভিন্ন সরকারী কাজ-কর্মসহ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা এবং বিভিন্ন সময় শো-ডাউন ও নিজেকে এমপির খুব কাছের লোক বলে নিজেকে জাহির করছে।

 

স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি’র সাথে যত লোক আছে তাদের মধ্যে স্থানীয় কোন ত্যাগী নেতা নাই। তার পাশে শুধু হাইব্রীড, এবং স্বার্থলোভী নেতাকর্মীরাই আছে। তারা বেশীরভাগই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে জাতীয় পার্টির গুণগান গাইতে ব্যস্ত থাকে, এমপির হুকুম তামিলে ব্যস্ত থাকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন কাজেই সভাপতি কিংবা সম্পাদক থাকেন না। আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মী যারা আছে তারাও তাদেরকে ডাকে না। জনগণের কোন কল্যাণেই এসব নেতারা থাকেন না বলে তারা জানান।


 
এ বিষয়ে বন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন পনির বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা সবাইকে ডেকে একসাথে বসতে পারছি না। তবে মোবাইলের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাদের সাথে কথাবার্তা বলছি। তাছাড়াও নির্বাচনে আমি দাঁড়াই কিংবা আরেকজনকে দাঁড় করাই, এখানে অনেক টাকার বিষয়। এর বাইরেও দল থেকে সে কি পরিমান সাহায্য পাইবে, দলের লোকেরা তার জন্য কতটুকু কাজ করবে ! এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপার সেপার আছে। তিনি বলেন, এমপির বিষয়টা তো দেখলেন, তিনি জনসভায় বর্তমান চেয়ারম্যানদের দরকার বলে ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছে।

 

এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়েছে, কিন্তু সংবাদ প্রচার করলে কি হবে, কেন্দ্রীয়ভাবে যদি কিছু না করে, কাজের কাজটা না করে। মোট কথা বিড়ালের গলায় ঘন্টাতো বাধতে হবে। সেটা বাধবে কে, এমপি’র বিরুদ্ধে কে কথা বলবে ? তিনি বলেন, উপজেলা কমিটির কথা কি বলবো, তারাইতো এমপি’র বিভিন্ন জনসভায় উপস্থিত থেকে তার পক্ষ হয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তাদের অর্ধেক কাজ আগাইয়া রাখছে। তারা যে ধরণের কার্যকলাপ শুরু করছে তা বলার মতো না। কাউন্সিল হওয়ার দেড় বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত তারা একটা পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি।

 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জনগণের জন্য কিছু দিতেছে তা একজন ইউনিয়ন নেতা হিসেবে আমাদের তো জানারও অধিকার আছে। আমরা নিজেরাই জানি না, মানুষকে তা জানাবো কি করে? আমরা যে মানুষের পাশে দাঁড়াবো, আমাদের তো কাজ দেখাতে হবে। এসব বিষয়ে উপজেলা থেকেই আমাদের জানায় না, আমরা জনগণকে জানবো কি করে। প্রধানমন্ত্রীতো ঠিকই দেয়। আমাদের যদি না জানায় আমরা কি উপজেলায় গিয়ে বসে থাকবো। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৩৯ বছর যাবত আওয়ামী লীগ করি। এ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে যে, আমরা টেন্ডারবাজি করছি। এসব এলাকায় যদি রাজাকার পরিবারের সন্তান চেয়ারম্যান হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কতটা শোভনীয় হবে?


 
নির্বাচনের বিষয়ে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আশা আছে, যদি আল্লাহ চায় তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয় শুধু দলের সাথে না, সবার সাথেই কথাবার্তা বলব। বর্তমানে আমার কাজে আমি সন্তুষ্ট, আমিতো দীর্ঘদিন মানুষের জন্যই কাজ করলাম, সময় দিলাম, মেধা ব্যয় করলাম, নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তাকালাম না, সেই হিসেবে জনগণের আমার পক্ষে থাকার কথাই। জনগণের সাপোর্ট আশা করি ভালই পাব।’


 

এই বিভাগের আরো খবর