শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঢিলেঢালা লকডাউন

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২১  

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও ৭ দিনের লকডাউন পালিত হচ্ছে। তবে করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারের দেয়া এই লকডাউন সবার কঠোর ভাবে পালনের কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় সড়েজমিনে গিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ঢিলেঢালা লকডাউন পালন করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে দেখা যায়, লকডাউনের জন্যে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কল-কারখানা খোলা থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেই সাধারণ মানুষ কর্মস্থলে রওনা হয়েছেন। এছাড়া লকডাউন বন্ধের দাবিতে বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভের খবরও পাওয়া গেছে। যদিও এই সকল বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো।


শহর ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হয়েছে লকডাউন :


সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শহরে সোমবার সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত থাকার কথা থাকলেও মূলত সেটা চোখে পড়েনি। সড়েজমিনে ঘুড়ে সকাল ৯টার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেল, আটোরিক্সা ও লেগুনার মতো যানবাহনের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি শহর কেন্দ্রিক বিভিন্ন হোটেল রেস্তরা খোলাসহ পাইকারি ও খুচরা বাজার চোখে পড়েছে ক্রেতাদের ভীড়।


নগরীর দিগুবাবুর বাজারে শামসুদ্দিন নামে এক মাছ বিক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাজারে মানুষের তো অভাব নাই। ছুটির দিনের আমেজ শুরু হইসে। আমাদেরও বেশ ভালো বেচাকেনা হইতাসে। আমার কাছে লকডাউন শুধু পালন করতাসে কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তারাই। বাকিরাতো আগের মতোই চলাফেরা করতাসে।’


দুপুরে দুইনং রেলগেট এলাকায় সাগর নামে এক বিরিয়ানি হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই শহরে দোকানের কাজে দৌড়াদৌড়ি করছি। এতে কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছি, তা বলতে পারবোনা। তবে আমার কাছে মনে হয় লকডাউন দিলে সেটা লকডাউনের মতোই হওয়া উচিৎ। শহরে সারাদিন যেই চিত্র দেখলাম তাতে লকডাউন চলেছে বলে মনে হচ্ছেনা।  
 
শহরে ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও, শহরতলীতে ছিলো অদৃশ্য :


নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর প্রায় প্রতিটি মানুষেরই জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ দিন ব্যাপী লকডাউন পালনের কথা ছিলো। তবে গতকাল লকডাউনের প্রথমদিনে সড়েজমিনে ঘুরে শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও অলি গলির মধ্যে কাউকেই লকডাউনের এই নির্দেশ পালন করতে দেখা যায়নি। সেখানে আগের মতোই রাস্তাঘাটে চলাচল করেছে সাধারণ মানুষ; একই সাথে খোলা ছিলো চায়ের দোকান, মুদি দোকান ও বাজার।


এ বিষয়ে নগরীর দেওভোগ শেখ রাসেল পার্ক সংলগ্ন পাক্কারোড় এলাকায় এক মুদি দোকানদারের সাথে কথা হলে সেলিম মিয়া নামে ঐ দোকানী বলেন, ‘লকডাউন শুধু শহরের দোকানীদের জন্য। আমরাদের এলাকার মধ্যে কিসের লকডাউন? এখানে সবতো আগের মতোই আছে। লোকজন বাসা থেকে বের হচ্ছে, চায়ের দোকানে যাচ্ছে, কেনাকাটা করছে, আড্ডা দিচ্ছে; সবই করছে। তাই এখানে লকডাউনের তেমন আমেজ দেখা যাচ্ছেনা।’


এছাড়া নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাসদাইর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় খোলা রয়েছে, আস্ত এক কাঁচাবাজার। সেখানে একপ্রকার স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেই বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় যিনিসপত্র কিনছেন সাধারণ ক্রেতারা। জানতে চাইলে আওলাদ হোসেন নামে বাজারের এক আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, আসলে আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলোম যে, এই লকডাউন এখানে কেউ মানবেনা! তাই সকাল সকালই দোকান খুলেছি। ত্রেতারা অন্যদিনের চেয়ে আজকে বেশি খরিদ করেছে। আমি নিজে মাস্ক পড়লেও ক্রেতাদের বেশির ভাগই মাস্ক পড়ছেনা। ফলে দেশে যে লকডাউন চলছে, এখানে আসলে সেটা মনেই হবে-না।


লকডাউন বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ :

সোমবার থেকে সারাদশে ৭ দিনের লকডাউনের সরকারি ঘোষনার বিরোধীতা করে সিদ্ধিরগঞ্জের সিমরাইল এলাকায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল করেছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। সেখানে ব্যবসায়ীরা কল-কারখানা চালুর সাথে সাথে সিদ্ধিরগঞ্জের সকল মার্কেট খুলে দেওয়ার দাবি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষোভরত ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে চলে যায়।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেই বিক্ষোভে অংশ নেয়া মিজানুর রহমান এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা ঋণ হয়ে আছি। গত বছরও লকডাউনের জন্য ব্যবসা করতে পারিনি। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, আমাদের যাতে এই লকডাউনের আয়োতামুক্ত রাখা হয়।


অন্যদিকে সকালে নগরীর কালীর বাজারের ফ্রেন্ডস সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও লকডাউনের বিরুদ্ধে মানবন্ধন বের করার জন্যে মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।


এ বিষয়ে কালীর বাজারের ফ্রেন্ডস সুপার মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এই লকডাউন আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা গ্রহন করতে পারছিনা। এতে আমাদের খুবই ক্ষতি হবে। তাই আমরা মঙ্গলবার সকালে সকল ব্যবসায়ী ও মার্কেটের কর্মকর্তারা মানববন্ধন করবো।  
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লেগুনা ও অটোতে উঠেছেন যাত্রীরা

 

সোমবার ৭ দিন ব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিনে কল-কারখানা খোলা থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে যাত্রীদের লেগুনা, সি.এন.জি ও অটোরিক্সার মতো সাধারণ পরিবহনে চেপে গন্তব্য স্থানের দিকে যেতে দেখা গেছে। তবে এ সময় যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।


সোমবার সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের ইসদাইর এলাকাল মামুন মাহমুদ নামে এক গার্মেন্টস কর্মীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বাস-মিনিবাস বন্ধ আছে, কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠান (গার্মেন্টস) ঠিকই খোলা। তাই বাধ্য হয়েই সকালে নিজবাড়ি পোস্তখোলা থেকে অটোরিক্স্রায় চড়ে ৫জন মানুষের সাথে গাদাগাদি করে নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরে অবস্থিত কর্মস্থলে এসেছি। এতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য হলেই কি করার আছে বলুন?’


এদিকে সোমবার দুপুর ১২ টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া এলাকায় গণপরিবহন না থাকায় ঢাকায় যেতে লেগুনা গাড়ীর জন্য অপেক্ষায় থাকা সজিব নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমি পঞ্চবটি থেকে অটোতে চড়ে ৭ জনের সাথে চাষাঢ়া এসেছি। এ সময় আমি ও চালক ছাড়া বাকি ৫ জন মাস্ক পড়েনি। এখন আবার ঢাকায় যেতে এখানে (চাষাঢ়া) লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছি। জানিনা লেগুনার মধ্যে কি অবস্থা হয়, শুনেছি একসাথে ১৫ জন বসে!


লকডাউনের নির্দেশ না মানলে সামনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, আমরা শহরে ও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় লকডাউন মানতে সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম। তাই নগরীতে প্রাই সবাই ভালো ভাবে লকডাউন পালন করেছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গার এটা মানা হয়নি। তাই সামনে আমরা এর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
 

এই বিভাগের আরো খবর