মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

কথিত ছাত্রলীগ নেতা শামীম অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১  

কখনো ছাত্রলীগ, কখনো যুবলীগ, এমন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার কিশোরগ্যার লিডার শরীফ হোসেন শামীম। কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও কিশোরগ্যাং বাহিনী নিয়ে ত্রাস করে বেড়াচ্ছিল এই সন্ত্রাসী। পান থেকে চুন খশলেই শামীমের লালিত কিশোরগ্যাং বাহিনী অস্ত্র হাতে দুঃসাহসিক হামলায় জড়িয়ে পড়তো মুহুর্তেই। এতে ভীত হয়ে পড়েছিলো এলাকাবাসী।  


একটি বা দুটি নয়, নানা ঘটনায় ফতুল্লা থানায় অন্তত ৪০টি অভিযোগে অভিযুক্ত কথিত এই ছাত্রলীগ নেতা। বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলাও রয়েছে ফতুল্লা মডেল থানায়। এবার চিহ্নিত এই সন্ত্রাসী শামীমকে ছিনতাইকালে ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকশ দল।
গত ১৪ তারিখে ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় অবস্থিত পিবিআই অফিস কার্যালয়ের সামনে থেকে ধারালো অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী শামীমকে আটক করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। পরে গতকাল তাকে ফতুল্লা মডেল থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব-৩ এর এসআই কামাল হোসেন বাদি হয়ে অস্ত্র ও ছিনতাই আইনে মামলা দায়ের করেন।  


র‌্যাবের দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শামীম ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে চলাচলরত সিএনজি-অটোরিক্সা চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই করার লক্ষ্যে তার দুই সহযোগি ইকবাল ও শাহীনকে নিয়ে অপেক্ষমান ছিলো। এসময় অস্ত্রসহ তাদের হাতে নাতে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, অপরাধ জগতে জড়ানোর পেছনে সন্ত্রাসী শামীমের রয়েছে পারিবারিক সূত্র! তার পিতা আমিনুল ইসলাম এমান চিহ্নিত মাদক সেবী। শামীমের চাচা আয়নাল নিজ বাড়িতে গাঁজা গাছের চাষ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। শুধু কী তাই? বেশ কয়েক বছর আগে ডাকাতীর প্রস্তুতিকালে পিস্তলসহ গ্রেফতার হয়েছিল শামীমের আরো এক চাচা এজা মিয়া। এদিকে, শামীমের অপর চাচা সানোয়ার হোসেন জুয়েলের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ। মূলত জুয়েলের সেল্টারে তার ভাতিজা কথিত ছাত্রলীগ নেতা শামীম ও তার সহযোগিরা ত্রাস সৃষ্টি করছে তক্কার মাঠ এলাকায়- এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

 

সূত্র জানায়, কোন পদ-পদবীতে না থাকলেও ক্ষমতাশীন দলের একটি মহলের ছত্র-ছাঁয়ায় নিজেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে একেরপর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে শামীম। তার রয়েছে অস্ত্রধারী এক সন্ত্রাসী বাহিনী। মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর ও চাঁদাবাজী’সহ প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চালালেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছিল শামীমসহ তার সহযোগিরা। ছিচকে সন্ত্রাসী শামীম দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় বিভিন্ন উঠতি বয়সের বিপথে যাওয়া কিশোর ও তরুণদের নিয়ে কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছিল। এ বাহিনীতে রয়েছে বিভিন্ন অস্ত্রের মজুদ। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তক্কার মাঠ ও আশপাশের এলাকার মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন নেশার আখড়ায় শামীম বাহিনী’র সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শামীম আড়ালে থেকে এলাকায় মাদক দ্রব্য বিক্রি করে আসছিলো বলে বিভিন্ন তথ্য বেড়িয়ে আসছে।


জানা গেছে, গত বছরের ২০ জুলাই চাঁদা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একই দিনে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক ২টি অভিযোগ দায়ের হয় শামীমের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তক্কার মাঠ এলাকার নাজমুল গামেন্টর্সের সামনে চাঁদার দাবীতে শামীম বাহিনী সোলায়মান মিয়ার পুত্র রাজুকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় এবং মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে এসে রাজুকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওই ঘটনার কিছুক্ষন পরই ২ লাখ টাকা চাঁদার দাবীতে ব্যবসায়ী সোহেল গাজীর গতিরোধ করে তাকে পিটিয়ে আহত করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও উঠে শামীমের বিরুদ্ধে।

 


এর আগে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ ফতুল্লায় পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের বসত-বাড়িতে ব্যপক হামলা ও লুটপাট চালায় শামীম বাহিনী। এতে সেতু বেগম নামে সন্তান সম্ভবা এক নারীকে আহত করে শামীম। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দেয় আহত সেতু বেগম। শামীমকে গ্রেফতার করা হলেও তার সহযোগিরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে থাকায় তাদেরও আইনের আওতায় আনার আকুতি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দারা।

এই বিভাগের আরো খবর