শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনা মহামারি ছিল অগ্নিপরীক্ষা - শওকত

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১  

প্রতি ৫ বছর পরপর নির্বাচন হয়, কিন্তু বছর বছর দূর্যোগ ও মহামারী হয়না। এবারের মহামরীগুলোকে একপ্রকার অগ্নিপরীক্ষা হিসেবেই গ্রহণ করেছে প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এমন সকল সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে আলোচনা হলে তারা সকলেই অকপটে স্বীকার করেছেন চলমান মহমারীর গুরুত্বের কথা।

 

সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচিত হলে সমন্বয় করে কাজ করবেন। অপর দিকে বর্তমান কউন্সিলররা বলছেন, করোনার এই মহামারীতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিনের পর দিন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। সংকটাপন্ন সময়গুলোতে নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ রাজনীতিবিদরাই ছিলেন নিষ্প্রুভ। প্রবীণরা ছিলেন বাড়ীর আঙিনায়, আর যারা ভবিষ্যতে রাজপথে দলকে নেতৃত্ব দিবে এমন সম্ভাবনাময় তরুণরাও করোনার এই সংকটে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। তবে তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে আশার বাণী শুনাচ্ছে পরিবর্তন চায় মানুষ, সুযোগ পেলে কাজ করবেন সমন্বয় করে।


 
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ১২নং ওয়ার্ড। ইতিমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে কাউন্সিলর হবে এমন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা। সকলেই দাবী করছে মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের যুগে তারা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কল্যাণকর কাজগুলো করবেন এমন আশার কথাও শুনাচ্ছেন তারা। অনেকেই বলছেন, ১২নং ওয়ার্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক।

 

নির্বাচিত হয়ে প্রথমে মাদক নিয়ে কাজ করবেন এমন  কোথাও বলেছেন অনেকে। তবে নির্বাচনে নতুনদের অংশগ্রহণ নিয়ে ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তরা বলছেন, করোনার এই সংকটে অনেক পরিচিত প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশে পাননি তারা। তাঁদের দাবী দুঃখে পাশে ছিলনা এমন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতার আসনে বসানোর ইচ্ছা তাদের নেই। তবে ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুর বিষয়ে ইতিবাক ভোটাররা।  


 
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা হয় ১২নং ওয়ার্ডে তিন বারের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু’র সাথে। শওকত বলছেন, আল্লাহর রহমতে মাদকবের বিষয়টি নিয়ে আমরা সকলেই সচেতন থাকি। মাদককে সবাই না বলুক এবং মাদক থেকে সবাই দূরত্ব বজায় রাখুক এটাই আমাদের লক্ষ। ইতিমধ্যে প্রশাসনের সহায়তায় মাদকের স্পট চাঁনমারী বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং একই সাথে গঞ্জেআলী খালের পাশে গড় উঠা বস্তিটিও মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। এখন বলা যায় ওই এলাকাগুলোতে মাদকের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে এবং কাজটি এখনো চলমান রয়েছে। আশা করি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষদের সহায়তায় মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। অন্যথায় কারো একার পক্ষে মাদক নির্মূল কিংবা মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।


 
তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি এবং কাজগুলো এখনো চলমান রয়েছে। কখন যে কি হয়ে যায় বলা মুস্কিল। বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকাটাই আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। যদি সুস্থ্য থাকি ও বেঁচে থাকি তফসিল ঘোষনা হলে নির্বাচনের বিষয়টি দেখা যাবে। আর আমার নির্বাচন করা বা না করা তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। আমি নির্বাচনে যেমন বিশ্বাসী, তেমনি জনগণের ভোটাধিকারের উপরও বিশ্বাসী।  
 


তিনি বলছেন, করোনার প্রথম ওয়েবে আমি আমার পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। দিনের পর দিন আমি আমার ১২নং ওয়ার্ডের কার্যালয়ে অবস্থান করেছি। করোনা সংক্রমন থেকে ওয়ার্ডবাসীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সচেতনতার পাশপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। করোনা মহামারীতে আমি আমার ওয়ার্ডে (১২নং ওয়ার্ড) সীমাবদ্ধ থাকিনি। নির্বাচনি এলাকার বাহিরে গিয়েও আমাকে কাজ করতে হয়েছে। অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন একটি সময় ছিল এটি।
 


জনপ্রিয় এই কাউন্সিলর বলছেন, করোনার এই সময় আমরা যেভাবে কাজ করেছি সেটা কাউকে খুশি করার জন্য নয়। শুধু মাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য করেছি। আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধ, এমন ঝুকিপূর্ণ সময়গুলো আমাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। বর্তমান সময়ে যেভাবে কাজ করছি এমন সুযোগ সবায় পায়না। করোনা মহামারী, ডেঙ্গু মহামারী ও বন্যা পরিস্থিতিতে যেভাবে কাজ করেছি আমরা যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছি এটা আমাদের জন্য ছিল বিশাল এক পরীক্ষা। এমন মহমারী বছর বছর হয়না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই সময়ে যে দুর্যোগটা দিয়েছে এতে আমরা নিজেদের ঢেলে সাজিয়েছি এবং মানুষের জন্য সর্বাত্মক করার চেষ্টা করেছি।


 
তিনি বলেন, করোনা মহামারীতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান যথেষ্ট পরিমাণ অনুদান দিয়েছেন এবং সেই সাথে তার অনুপ্রেরণাও ছিল স্মরণ করা মতো। মাননীয় এমপি মহোদয়ের তরফ থেকে যেমন অনুদান ছিল, সেই সাথে ছিল বেশ কিছু নির্দেশনাও। আমরা সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ১২নং ওয়ার্ডে থাকায় আমার জন্য আরো কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। করোনার এই সময়ে ডাক্তারদের সেবাটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারদের বাসস্থানের সমস্যা ছিল। এমপি মহোদয়ের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমী স্কুলে হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের থাকার ব্যবস্থাসহ তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করি। যা পরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে।


 
কাউন্সিলর শওকত আরো বলেন, এমপি সাহেবের নির্দেশে ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের পাশাপাশি করোনার চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদেরও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে করোনা রোগীদের জন্য ভিটামিন সি ও  প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারেরও প্রয়োজন ছিল যা নিয়মিত সরবরাহ করা হয়েছে। ভয়াবহ এই দূর্যোগের সময় করোনা হাসপাতালের আশপাশেই কেউ যেতে চায়নি। আর সেখানে যদি মানুষ মারা যায় তাহলে কোন কথা নেই। নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালে যে সকল করোনা রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছে তারা সকলেই ছিল দূর-দূরান্ত থেকে আগত।

 

গত বছর এপ্রিল মাসে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের রেজিষ্টারে তার ঠিকানা উত্তর চাষাড়া অন্তর্ভূক্ত ছিল এবং ছিল একটি মোবাইল নম্বরও। যখন ওই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে সেখানে তার কোন আত্মীয় স্বজন ছিলনা। হাসপাতাল রেজিষ্ট্রারে যে নম্বর ছিল সেটাও ভূল নম্বর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এটাই ছিল ১২নং ওয়ার্ডে প্রথম মৃত্যু। সেই সময় আমি কোন টিম গঠন করেনি। প্রথম থানা থেকে ফোন আসে আমার কাছে। তারা আমাকে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে এই বিষয়ে আমার সহযোগীতা চায়। ে হিন্দু ধর্মাবলম্বি নারীর মৃত্যুর সংবাদের পরই আমি সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করি এবং সিটি কর্পোরেশনের গাড়ী, বিহাইকেল ও টিম নিয়ে মৃত নারীর সৎকারের ব্যবস্থা করি।


 
ঐতিহ্যবাহী গঞ্জেআলী খালের আশপাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। খালটির কাজ এখনো চলমান আছে। কোন বাসা-বাড়ীর পানি যাতে এই খালে নাপড়ে তার জন্য পৃথক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খালের উপর দুই থেকে তিনটা বেইলী ব্রীজ নির্মাণ করে খালের সুন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা হবে। এর পাশাপাশি ওই খালের পাশ দিয়ে রোডস এন্ড হাইওয়ের একটি চলমান প্রকল্প ( দুই ল্যানের সড়ক) রয়েছে। গঞ্জেআলী খাল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের হইওয়ে সড়কের কাজ সম্পন্ন হলেও আমি তৃপ্তি পাবো। কেননা এই কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে এলাকাটির সৌন্দর্যে ব্যাপক পরিবর্তন এবং স্থানীয়রা খুবই মনোরম একটি পরিবেশ উপভোগ করতে পারবে।

 

সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে (৬০ লক্ষ টাকা) খানপুর বউবাজার এলাকায় একটি পুকুর খনন করে সুন্দর একটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। অধিকাংশ এলিট শ্রেণির মানুষের বাসস্থান ১২নং ওয়ার্ডে। দুই জন সংসদ সদস্য ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সই সাথে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও রয়েছে। ওয়ার্ডবাসীর জীবন মান সহজী করণের লক্ষে অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ১২নং ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। আশা করা যায় বাসিন্দারা আর পানি বন্দি থাকবেনা।
 

এই বিভাগের আরো খবর