শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আ’লীগের মনোনয়ন নিয়ে 

কাদের নওফেলের পর বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন ‘ভুয়া’

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সম্প্রতি কালেরকন্ঠ পত্রিকায় আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীতা নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তা কাল্পনিক এবং অগ্রহণযোগ্য।

 কালেরকন্ঠের এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভূয়া। আমি কালের কন্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই রিপোর্টটির ব্যাপারে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে নিরব থেকেছেন। 

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভিয়েতনাম সফর নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হয়েও এখনো বলতে পারছিনা কারা আগামীতে মনোনয়ন পাবে। 

অথচ তারা নিজের মতো করে প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে দিলো। কালেরকন্ঠের তালিকায় এমন অনেকের নাম উঠে এসেছে যারা বিতর্কিত। যাদের কর্মকান্ডে দল তথা সরকার বিব্রত। এরকম ব্যক্তিরা কখনই মনোনয়ন পাবেনা। অথচ অনেক ভাল মানুষ আছেন যারা মনোনয়ন পেতে পারেন তাদের নাম তালিকায় দেয়া হয়নি। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা গ্রহণযোগ্য, মানুষ যাদের ভালবাসে,যাদেরকে মনোনয়ন দিলে দল উপকৃত হবে এমন নেতাকেই মনোনয়ন দিবে আওয়ামীলীগ। কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা। মাঠ পর্যায়ের তৃণমূলের রিপোর্ট, গোয়েন্দাদের রিপোর্টসহ নানা বিষয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হবে। 

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাহিরে এখন কেউই জানে না আগামীতে কাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। কালেরকন্ঠ যা করেছে এটা ঠিক হয়নি,অন্যায়। 
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একেএম শামীম ওসমানের নাম চূড়ান্ত হয়েছে বলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের  দেওয়া তথ্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের তালিকা শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানে না।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি, তবে যাদের অবস্থা ভালো- এ রকম অনেককে বলা হয়েছে। আমাদের লিডার আভাস-ইঙ্গিত দিয়েছেন, কাউকে মনোনয়ন... একেবারে শিওর... এ রকম কোনো আশ্বাস দেয়া হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছে। 

অক্টোবরে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে নতুন মুখ আসছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন যত বাদ যাবে সেখানে নতুন আসবে।

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এতথ্য জানান।
আওয়ামী লীগ গতবারের মতো জোটগত নির্বাচন করবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে। বিএনপি যদি আসে তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসনবণ্টন, সমঝোতা হবে। সবকিছু নির্ভর করছে মেরুকরণ কীভাবে হবে, সেভাবেই অ্যালায়েন্সের সমীকরণ হবে।

প্রসঙ্গত, রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে পাগলা  মেরিএন্ডারসনে বিআরইডব্লিউটিএ’র ১০তলা বিশিষ্ট স্টাফ কোয়ার্টার ভবন উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৪ নং আসনে প্রার্থী কে হতে পারেন? কাকে চাই ? আজকের পত্রিকা দেখবেন। ঘোষণা না ঠিক, আওয়ামীলীগের ১০০ জনের যে অবশ্যাম্ভবী প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে শামীম ওসমান সাহেবের নাম আছে।

জরীপ হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে এখানকার প্রার্থী হচ্ছেন শামীম ওসমান। আপনারা সবাই আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমানকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান।

নৌমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিত্তুরে সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোশেনর (নাসিক) নগরভবনে একটি মতবিনিয়ময় সভা শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান অনধিকার চর্চা করেছেন। 

কেননা, এ মুহুর্ত্বে বাংলাদেশের কারো মনোনয়ন নিয়ে বলার ক্ষমতা রাখেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জননেত্রী ছাড়া কেউ এ ব্যাপারে কারো মনোনয়ন নিশ্চিত করে বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার নেই। নৌপরিবহণ মন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা উনার ক্ষমতার বাইরে অনধিকার চর্চা করেছেন। এমন কোন কথা বলার এখতিয়ার তাঁর নেই।

নওফেল আরো বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান খুব ভালো লোক। তিনি হয়তো তাঁর নিজ সংসদীয় আসনে জয়ী হবেন। কিন্তু অন্য কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দিলো  বা কার মনোনয়ন হলো না এটা বলার এখতিয়ার তাঁর নেই। 

শুধু নৌমন্ত্রীই নন, এমন বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার আমারও নেই। শামীম ওসমান মনোনয়ন পাবেন না এটা যেমন আমি বলতে পারবো না, ঠিক তেমনি শামীম ওসমান মনোনয়ন পাবে এমন কথাও আমি বলতে পারবো না। এটা বলতে পারবে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান যে কাজটি করেছেন এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।  এটি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও শামিল বলে উল্লেখ করেন নওফেল।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে শামীম ওসমানকে ঘোষণার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রতিত্তুরের সাথে আব্দুল হাই ও আনোয়ার হোসেনের পর একমত পোষণ করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল (ভিপি বাদল) এবং মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, কেন্দ্র এখনো কাউকে অফিসিয়ালি মনোনয়নের ব্যাপারে বলে নি। মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম একসাথে ঘোষণা করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের আগাম কোন কিছু বলা অবশ্যই ঠিক না। এগুলো বলার এখতিয়ারও আমরা রাখি না।

নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে নিয়েই আমরা কাজ করবো। কিন্তু কেউ যদি আগে কাউকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে যান তাতে আমরা বিব্রত বোধ করি। এতে করে দলে অনিশ্চয়তা তৈরী হয়ে বিভেদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার জন্য কেন্দ্র এ ব্যাপারগুলো একসাথে ঘোষণা করে।

মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নওফেল সাহেবের বক্তব্যের সাথে একমত। দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে অগ্রীম বললে কর্মীদের একটি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যেতে হয়। এরআগে অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকও বলেছিলেন, অমন বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। তদ্রুপ ঠিক একইরকমভাবে শাজাহান খানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নওফেল যে বক্তব্য দিয়েছেন আমি তাঁর বক্তব্যে সাথে একমত।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমান মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবে এখনই তাকে মনোনিত করে ঘোষণা করা হয়েছে এমনটি ঠিক নয়। মনোনয়ন ঘোষণা করবেন আগে আল্লাহ এরপর একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়া কেউ মনোনয়নের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। 

মনোনয়ন বোর্ড আছে মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাঁরা নির্ধারণ করবেন। জননেত্রীর তরফ থেকে যখন চূড়ান্ত ঘোষণা হবে তখনই মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত বলা যাবে। নওফেল ভাই, সাংগঠনিক লোক। সাংগঠনিক কতগুলো নিয়ম-কানুন আছে। সে নিয়মের মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো চূড়ান্ত ডিক্লারেশন আসবে। সে সময়টি এখনো আসেনি।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে যেটি বলা হয়েছে সেটিই আমার মতামত। আমি এটিই মনে করি। মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রিম ঘোষণা করলে দলে বিভেদ ও মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি কাউকে মনোনয়ন দেয় এটি শুধুই তাঁর ব্যাপার। তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন। এর আগে মনোনয়নের ব্যাপারে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারেন না।
 

এই বিভাগের আরো খবর