শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কুতুবপুরে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনে ৬৫হাজার টাকা নিলেন বাবুলমেম্বার

সাদ্দাম হোসেন শুভ

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২২  


 
# সরকারিভাবে টিউবওয়েল স্থাপনে এতটাকা খরচ লাগে না : চেয়ারম্যান সেন্টু
 

জনগণ আশা করে যে, তাদের প্রতিনিধি নিজের যেসব গুণ বা আচরণ দেখিয়ে নির্বাচনে ভোট নিয়েছেন, সেসব গুণ বা আচরণ তিনি যেন নির্বাচনের পরেও বজায় রাখেন। আর যখন তিনি তা বজায় রাখেন না, তখন সেটি নিয়ে জনগণের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। হতাশা বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে সেই জনপ্রতিনিধি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। 

 

আর যদি নির্বাচিত এলাকার অসহায় নিরীহ মানুষদেরকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিতে আদায় করা হয় অবৈধ অর্থ, তখন একজন জনপ্রতিনিধি জনগণের কাছে হয়ে যায় 'রক্ষক থেকে ভক্ষক'। তেমনি একজন জনপ্রতিনিধি কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল মিয়া। তার বিরুদ্ধে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা বলে এক অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারের কাছ থেকে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়, সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা বলে নয়ামাটি এনায়েতনগর উচাঁপাড়া এলাকার অসহায়, সংখ্যালঘু পরিবারের মৃত সৌভাগ্য সরকার সাধুর, স্ত্রী সবিতা সরকার (৪২) এর কাছথেকে অবৈধভাবে ৬৫ হাজার টাকা আদায় করে ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার বাবুল মিয়া। 

 

ভুক্তভোগী পরিবারের টাকা নিয়ে টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে এখনো টিউবওয়েল স্থাপন না করার কারণেই মেম্বার বাবুল মিয়ার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়। শুধু তা-ই নয়, অত্র এলাকায় আরো তিনটি সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনে রয়েছে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ। 

 

তার বিরুদ্ধে রয়েছে জন্ম নিবন্ধনের নামে অর্থ আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ। বাবুল মিয়া এই ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ঘুষ ছাড়া সরকারি কোনো কাজই হয় না। তিনি পাচঁ বছরে অবৈধ টাকায় একটি পাচঁতলা বাড়ি করার চ্যালেঞ্জেও মেতেছেন অনেকের সাথে।


 
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা বলে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করছেন একাধিক ইউপি সদস্যরা। অনেক অসহায় নিরীহ পরিবার তাদের বিশ্বাস করে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না তাদের সরকারি টিউবওয়েল।


 
ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু পরিবারের সবিতা সরকার জানান, আমার স্বামী মারা যায় তিন বছর পূর্বে, এখন আমার সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমি নিজেও একজন অসুস্থ মানুষ। তাই পাশের বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হয় আমাদের, এই কষ্টের কথা চিন্তা করে একটি সরকারি টিউবওয়েলে জন্য বাবুল মেম্বারকে জানাই। 

 

পরবর্তীতে মেম্বার আমাকে বললো, একটি সরকারি টিউবওয়েল পেতে হলে তাকে ৬৫ হাজার টাকা আর ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হবে। আমি আমার পরিবারের কষ্টের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম টিউবওয়েল স্থাপনের। তারপর গত জানুয়ারি মাসে বাবুল মেম্বার বাসায় এসে বলে টাকা দাও সরকারি টিউবওয়েল আসছে। 

 

আমি ১৫ হাজার টাকা ও ভোটার আইডি কার্ড দিলাম। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় আমার বাসায় এসে সর্বমোট ৬৫ হাজার টাকা নেয় বাবুল মেম্বার। টাকা নেওয়ার পড়ে এখনো পর্যন্ত আমার টিউবওয়েল স্থাপনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। আমার এখন চলতে ফিরতে অনেক কষ্ট হয়। আমি এখন আর মানুষের বাসা থেকে পানি এনে খেতে পারি না।


 
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল মিয়া বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ আমি ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছি। তবে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপনে মোটর দেয় এক ঘোড়া, আমি দিবো দুই ঘোড়া। আর পাইপ চার ইঞ্চি, ৫শ ফুট গভীর, ১ হাজার লিটার টাংকি দিয়ে কল দেওয়ার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।

 

তিনি আরো বলেন, তাদের যদি কোনো ধরনের অভিযোগ থাকে তাহলে তাদের ৬৫ হাজার টাকা আমি এক্ষণ ফেরত দিয়ে দিবো। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে ৬৫ হাজার টাকা নেওয়া সরকারি কোনো নিয়ম আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই করি সরকারি নিয়মের বাইরে, কয়জন সরকারি নিয়ম নীতি মেনে চলে।


 
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ‌‌‌আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই কলগুলো দেওয়া হয়নি। আমি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে বাবুল মেম্বারকে টাকা ফেরত দিতেও বলেছি। আর সরকারিভাবে টিউবওয়েল স্থাপনে এতটাকা খরচ দিতে হয় না। তিনি কিভাবে ৬৫ হাজার টাকা নেয় তা আমার মাথায় আসে না। তবে আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।


 
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত ফেরদৌসের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর