শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

কুমিল্লা থেকে বন্দর হয়ে শহরে ঢুকছে মাদক!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২১  

# শীর্ষ তিন মাদক বিক্রেতাদের মৃত্যুর পর, উত্থান হচ্ছে নতুন ব্যবসায়ীর
# মাদক বিক্রি বন্ধে স্থানীয়দের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় প্রয়োজন- পুলিশ  

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিক্রি আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রমাণ মিলেছে সরেজমিনে গিয়ে। দেখা গেছে, শহরের আশেপাশে অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় প্রকাশ্যে ইয়াবা ও গাঁজাসহ নিষিদ্ধ মাদক বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তবে প্রশাসনের তেমন নজরদারী না থাকায় বন্ধ হচ্ছেনা মাদকের ব্যবসা। উল্টো দিনদিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে মাদক বিক্রেতারা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগেও শহরের ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৮ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাগুলোতে মাদকের সাপ্লাই করতো গুটি-কয়েক মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে, দেওভোগ গলাচিপা এলাকার মনিরুজ্জামান শাহীন ওরফে বন্দুক শাহীন, পানির ট্যাংকি এলাকার মোহাম্মদ শাহীন ওরফে গোখরা শাহীন ও নাগবাড়ী-কাশিপুর এলাকার পারভেজ ওরফে মেজর পারভেজ। মূলত এদের হাতেই ছিলো পুরো শহরের ড্রাগ কার্টেল।

 

কিন্তু গত কয়েক বছরের ব্যবধানে শহরের এই তিন শীর্ষ ড্রাগ ডিলারের মৃত্যুর পর, ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে মাদকের ব্যবসা। তাছাড়া এখন শহরজুঁড়ে অসংখ্য নতুন মাদক বিক্রেতার উত্থান হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। যারা দৈনিক ২০ থেকে ৩০ পিস করে ইয়ারা ও অন্যান্য মাদক বিক্রি করে। তবে পুরনো খুচরা মাদক বিক্রেতারা স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে কিনে অলি-গলিতে মাদক বিক্রি করলেও, নতুন বিক্রেতারা মাদক সরবরাহ করছেন অন্যত্র থেকে।

 

সূত্র বলছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে নৌ-পথে শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে প্রথমে বন্দরের কয়েকটি এলাকায় আসে মাদকের বড় বড় চালান। পরবর্তীতে শহরের খুচরা বিক্রেতারা গিয়ে সেখান থেকে মাদক কিনে আনে। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাদক পরিবহনের রুট হিসেবে; নবীগঞ্জ ফেরীঘাট, বন্দর ১ নং সেন্ট্রাল ঘাট এবং টানবাজার ঘাটসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কদমতলী ঘাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে।

 

অতীতে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো, এমন এক ব্যক্তির সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই ব্যক্তি বলেন, পূর্বে শহরের মাদক বিক্রি করতো অল্প কিছু মাদক ব্যবসায়ী। মূলত এদের বাহিরে অন্য কেউ তেমন একটা এই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলোনা। কিন্তু এখন প্রায় প্রতিটি এলকাতেই নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি একটু নজরদারী বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এই ভয়ঙ্কর মাদকের হাত থেকে সবাই রক্ষা পাবে।

 

এদিকে মাদক বিক্রির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। সাধারণ মানুষের দাবি, মূলত মাদককে কেন্দ্র করেই শহরে চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের জন্ম হচ্ছে। তাই দ্রুতই এসব বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তারা।  নারায়ণগঞ্জ নাগারিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি. সিদ্দিক বলেন, আমাদের এখানে আগের চেয়ে মাদকের ব্যবসা আসলেই বৃদ্ধি পেয়েছে। খবরের কাগজে প্রতিদিনই এই সংক্রান্ত নানা সংবাদ দেখা যায়। তাই আমি মনেকটি দ্রুত এ বিষয়ে আমাদের স্থানীয় প্রশাসনকে সরব হতে হবে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমারা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষনা করেছি। তাই ইতিমধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় মাদকের আস্তানা চানমারী বস্তী উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যেসব মাদক বিক্রেতারা আছে, এদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আর স্থানীয় লোকজন যদি এসব বিষয়ে আমাদের সাথে সমন্বয় করে তাহলে এদের আরো দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পারবো আমরা।
 

এই বিভাগের আরো খবর