বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কেউ সরবে, কেউ নীরবে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২১  

# ড্রেজার বুস্টার পাম্প ক্রয়ে ৪ লাখ টাকা ফতুল্লা থেকেই কালেকশন


# একক ক্রেডিট নেয়ার গুঞ্জন চলছে ফতুল্লায়


# অনেকে সহযোগিতা করেও প্রচারণায় নেই  


 
লালপুরে কমতে শুরু করেছে জলাবদ্ধতার পানি। ক’দিন আগেও যেখানে পানির স্তর ছিলো কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত, সেখানে পানি কমে কোথাও ছয় থেকে ১২ ইঞ্চি উচ্চতায় রয়েছে পানির স্তর। আবার কিছু সড়ক শুকিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গেল কয়েকদিন বৃষ্টি না হওয়ায় লালপুর পাম্প হাউজে থাকা ৫টি এবং পৌষারপুকুর পাড়ের দক্ষিণে রুশেন হাউজিং এলাকায় অবস্থিত ৮ সিলিন্ডারের একটি ড্রেজার বুস্টার পাম্পসহ মোট ছয়টি পাম্প একযোগে চলমান থাকায় পানি অনেকটাই কমে যাচ্ছে।

 

তথ্য বলছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা লালপুর এবং আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা দূরকরণে প্রকাশ্যে কাজ করে থাকলেও ফতুল্লার কিছু নেতা এবং স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নীরবে সহযোগিতা করেছেন প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হকসহ বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। এছাড়া, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপনও উল্লেখ যোগ্য। জলাবদ্ধতা নিরসনে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট পর্যাপ্ত না থাকলেও পাম্প হাউজ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে সহায়তা করেছেন। কেবল এই বছরই নয়, প্রতিবছরই লালপুরের পাম্প হাউজ পরিচালনায় আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন তারা।

 

তবে, তারা প্রচারণার আড়ালে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করলেও ফতুল্লারই কিছু নেতা দূর্ভোগ নিয়ে নিজেদের জাহির করণে ব্যস্ত। জানা গেছে, লালপুরের ড্রেজার বুস্টার পাম্প আনার পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী। এসময় ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হককে সেভাবে ডাকা হয়নি। কারণ হিসেবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, তাদের না রেখে মীর সোহেল নিজেই পাম্প উদ্বোধন করলে একক ভাবে বাহবা কুড়াবেন। সেই ইচ্ছেই পুরণ হয়েছে তার। তিনি বাহবা কুড়িয়েছেন।

 

এদিকে, পাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে মীর সোহেল আলী একক ভাবে বাহবা কুড়ালেও তথ্য বলছে, ড্রেজার বুস্টার পাম্প ক্রয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ টাকাই লালপুর ও আশপাশের এলাকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি এক অংশ থেকে কিছু টাকা রয়েছে শাহ-নিজাম এবং বাকি টাকা জোগার করেছেন মীর সোহেল আলী। কিন্তু কিছু টাকা দিয়ে যুক্ত হয়েই ড্রেজার বুস্টার পাম্প স্থাপনের ক্রেডিট নিয়েছেন একক ভাবে। এতে স্থানীয় অন্যান্য নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সহযোগিতা করা ব্যবসায়ীরাও অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।  

 

সূত্র জানায়, ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে লালপুরের ড্রেজার বুস্টার পাম্প আনা হয়েছে স্থানীয়দের সহযোগিতার মাধ্যমে। তবে, মীর সোহেল বলছেন, এই পাম্প ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শামীম ওসমান, আবার মীর সোহেলের কর্মী সমর্থকরা প্রচার করছেন, এই পাম্প দিয়েছে মীর সোহেল আলী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ-নিজাম। মাঠে এমনটা প্রচার করা হলেও অনুসন্ধান বলছে, লালপুর পাম্প হাউজে জমে থাকা ৬২ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কথা বলে কালেকশন করা হয়েছিলো। কালেকশনে উঠেছিলো ৪ লাখ টাকা। অতঃপর লালপুরে ড্রেজার পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত হলে আওয়ামী লীগ নেতা মীর সোহেল সেই পাম্প হাউজের বিদ্যুত বিলের সেই ৪ লাখ টাকা নেন এবং শাহ-নিজামের সাথে সমন্বয় করে বাকি টাকা যোগ করে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৮ সিলিন্ডারের ওই ড্রেজার বুস্টার পাম্প আনেন।

 

তবে, ওই পাম্প তারা নিজেদের অর্থায়েনেই এনেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। এমনকি সাংসদ শামীম ওসমানও গত কয়েকটি সভায় বলেছেন, তার কর্মীরা নাকি নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে ১২-১৫ লাখ টাকা ব্যায়ের মাধ্যমে ওই পাম্প স্থাপন করেছেন।’ এদিকে, ফতুল্লার বেশ কয়েকজন নেতা, স্থানীয় বাসিন্দা এবং জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা চাই কাজটা হোক। যেহেতু এটা জনদূর্ভোগ সংশ্লিষ্ট, সেহেতু আমরা মানুষের উপকারের কথা ভেবেই স্বাধ্যমত সহায়তা করেছি। কাউকে দেখানোর জন্য সহায়তা করিনি, তাই প্রচার প্রচারণা আমাদের মুখ্য বিষয় ছিলো না। তবে, অনেককেই দেখছি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন একক ভাবে। তা নিয়ে আমাদের তেমন কোন অভিযোগও নেই। কারণ আমরা চাই, কেউ একক ক্রেডিট নিলেও কাজটা যেন সম্পন্ন হয় এবং এই এলাকার মানুষ যেমন জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়, সেটাই আমাদের কাম্য। 
 

এই বিভাগের আরো খবর