বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কোন পথে যাচ্ছে না’গঞ্জ বিএনপি

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২  

# বয়স, অসুস্থতাসহ নানাবিদ কারণে চলে গেছেন ব্যাকফুটে
# বিএনপি হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আছে

 

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যদি বিএনপির স্বর্ণযুগের কথা বলতে হয় তাহলে অবশ্যই ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদকালীন সময়কে প্রাধান্য দিতে হবে। ’৯০এর গণ আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করে তখন নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই বিএনপির প্রার্থী সাংসদ হিসেবে ছিলেন।

 

এ সময় আব্দুল মতিন চৌধুরী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে চাঙা করে রেখেছিলেন তারা। নারায়ণগঞ্জ শহর সংলগ্ন রাজনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ আবুল কালাম ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সিরাজুল ইসলাম।

 

তবে ৯৬-এ বিএনপির দুঃসময়ে অনেকটা এদের ভূমিকা অনেকটা নীরব হলে সেখানে ভূমিকা রাখেন তখন সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তখন থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে বিভাজন ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। এরপর ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি পুনরায় সরকার গঠন করলে সেই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচিত সাংসদ রেজাউল করিম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব

 

পালন করেন। তবে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সেসব জাদরেল নেতাদের অনেকেই এখন আর নেই। যারা আছেন তারাও বয়স, অসুস্থতাসহ নানাবিদ কারণে চলে গেছেন ব্যাকফুটে। তবে ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠনের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যখন থেকে বিএনপি আলোচনায় আসে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি কোন্দল ও বিভাজনে আছে বর্তমান সময়ে।

 

যেই ওয়ান ইলিভেনে পুরো বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকটে ছিল তখনও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এমন করুন ও শোচনীয় অবস্থা হয়নি বলে মনে করেন বিএপির অনেক ত্যাগী তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ। ওয়ান ইলিভেনের পর আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তারপর আর নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দাঁড়াতে পারেনি। এরই মধ্যে বহিস্কার করা, পদচ্যুত করা কিংবা কারও উপর মিথ্যে দোষ দিয়ে দায় চাপিয়ে দেওয়া এগুলো এখন ঢাকঢোল পিটিয়েই করা হচ্ছে।

 

আর এর ফলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও খুব ধুমধামের সাথেই যাচ্ছে রসাতলে। অথচ রাজনীতির অধ্যায়ে টিকে থাকতে হলে এবং দলকে চাঙা করতে হলে এখন বিএনপির সম্মেলন জরুরী হয়ে পড়লেও এসব দলীয় কোন্দলের কারণে একজন হটিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিযোগিতায় এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

 

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকো জানা যায়, এখনও ইউনিট কমিটিগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে না পারায় অনিশ্চয়তার মুখে আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে ইউনিট সম্মেলনও সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে স্কাইপি আলোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা বিএনপির সম্মেলন শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা বিএনপির

 

আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে। এরই মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির সম্মেলন দুই গ্রুপের দ্বন্দে¦র কারণে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজি মনিরুজ্জামান মনির ও মামুন মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

 

এরপর ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহবায়ক ও মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে ইউনিট কমিটিগুলো সম্পন্ন করার জন্য তিনমাস সময় বেধে দেন। পরে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ২০২২ সালের ১৬ জুনে নাসিক নির্বাচনে আংশগ্রহণের শাস্তি হিসেবে তৈমুর আলম খন্দকারকে আহবায়ক পদসহ বিএনপির সকল ধরণের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।

 

সে থেকে জেলা বিএনপির এই পদটিতে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুল ইসলাম রবি। অন্যদিকে একই অপরাধে অর্থাৎ সিটি নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারের সাথে দলের মতের বাইরে গিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদসহ দলের সকল পদ থেকে এটিএম কামালকেও বহিস্কার করা হয়।

 

রাজনৈতিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে অনেকটাই আড়ালে চলে গেছেন এক সময়ের প্রতাপশালী এমপি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন। সেই থেকে এই সময়ে যারা বিএনপির অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে পরিচিত তারা যেভাবেই হোক এখন আর দলের কাজে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। এরই মধ্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ আহত হওয়ার পর শুধু জেলা বিএনপি না,

 

টোটাল নারায়ণগঞ্জ বিএনপি-ই একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আছে। তাই এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে আসলেই কোন পথে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ এর বিএনপির অবস্থান।
 

এই বিভাগের আরো খবর