বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কোন্দল মাইনাসের রাজনীতিতে না’গঞ্জ বিএনপি

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২  


ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। এখন পর্যন্ত কোন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সামনে বিএনপিকে নির্ভার হয়ে বসে না থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলের হাই কমান্ড থেকে বারবার বলা হচ্ছে। দলকে গুছিয়ে শক্তিশালী করার জন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার দিকেও জোর তাগিদ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকা নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও জাগিয়ে উঠবে বলে আশাবাদী ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপিসহ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ।

 

এর মধ্যে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এবং কমিটির ভাল অবস্থানে নিজেদের নামকে দৃঢ় করতে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছিল দলের বেশ কিছু উৎসাহী নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে। কিন্তু বিএনপির নারায়ণগঞ্জ এলাকার বেশ কিছু হাই প্রোফাইলে অবস্থান নেওয়া নেতৃবৃন্দের উচ্চভিলাষী ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কমিটিকে পকেট বন্দী করার অপচেষ্টার কারণে এখন বিএনপি মাইনাস ও কোন্দলের রাজনীতিতে পরিণত হয়ে পড়ছে বলে দাবী করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশ কিছু কর্মকাণ্ড দলের মধ্যে অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির বিশৃঙ্খলার সবচাইতে বড় বিষফোঁড়া হিসেবে নজরুল ইসলাম আজাদকে দায়ী করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পাড়া মহল্লার পদ নিয়েও হুমড়ি খেয়ে পড়েন আজাদ। নানা প্রলোভনে বিএনপির নানা কমিটির নেতাদের বিভ্রান্তির পেছনেও রয়েছে আজাদের হাত। তার রাহু আগ্রাসন থেকে কর্মীদের হেফাজত করতে পারলেই উতড়ে যেতে পারে বিএনপির বিভেদের রাজনীতি।


 
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সামনে এখন কঠিন সময়। একদিকে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন সাজাপ্রাপ্ত এবং অসুস্থ। যদিও সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি জামিনে বাসায় আছেন। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানও বিচারিক আইনে সাজার রায় মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আর এরা দুজনই বিএনপির মূল কমান্ডার এবং তাদের নির্দেশনায় দলের নেতাকর্মীরা পরিচালিত হয়। এমতবস্থায় সারা বাংলাদেশের বিএনপির রাজনীতির মতই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও আছে অকেটা বেকায়দায়। সেই সুযোগে অনেকেই তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত। ১৯৯১ সালে প্রায় দশ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সরকারের সে সময়ের প্রভাবশালী নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মতিন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম বর্তমানে নিস্ক্রিয়, সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালাম শয্যাশায়ী অবস্থায় দীর্ঘদিন যাবত দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে আছেন। এখানে তার জায়গায়ও নতুন মুখের জন্য দাবী শোনা যাচ্ছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তৈমুর আলম খন্দকারকে এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তার হয়ে কাজ করার জন্য এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের পরিবারের উপর যে অভিযোগ এসেছে এভাবে দলে তারও গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দের অনেকেরই ধারণা। যখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনেক প্রবীন নেতা হয় মৃত্যু বরণ করেছেন নয়তো নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন তখন প্রবীণ নেতাদের এভাবে মাইনাসের মুখে ফেলে বিএনপিকে কেউ দুর্বল করার চেষ্টা করছেন কিনা এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের মুখে মুখে।


 
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হলেও দলীয় আন্তকোন্দল ও ইউনিট কমিটি গুলো গঠনও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র দুটি উপজেলা কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন করতে গিয়ে দু পক্ষের সংঘর্ষে তা পন্ড হয়ে যায়। তারপর ঢাকায় দলীয় সভা শেষ ফেরার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেলের টুঙ্গিপাড়ার ঘটনা। একই সাথে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির পোস্টার কাণ্ড। মশিউর রহমান রনি, তার স্ত্রী, পিতা, শশুর ও স্বজনদের ছবি দিয়ে কুরুচিপূর্ণ একটি পোস্টার ছাঁপিয়ে রাতের আধাঁরে শহরের অলিতে-গলিতে লাগাতে গিয়ে আটক হন দক্ষিণ সস্তাপুরের জয়নাল ও সমির আলী নামক দুই যুবক। পেশায় তারা অটো রিকশা চালক। পোস্টারগুলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও কোর্ট এলাকায় লাগানোর জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের এক হাজার টাকা প্রদান করা হয় বলে তারা জানিয়েছে। তাই বিএনপিকে এখন সরকার দলীয় প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াইসহ নিজেদের আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হচ্ছে।


 
এ বিষয় জানতে চাইলে, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানান, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমবেশি আভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকেই। সম্মেলন নিয়ে, পদ নিয়ে এধরণের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাছাড়া একটি কমিটিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের পদ থাকে একটি করে। কিন্তু যোগ্য লোকের সংখ্যা থাকে ৫ থেকে ১০ জন কিংবা তারও বেশি। তাই একজন পদ পেলে তাকে বাকী ৫/১০জন লোকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকেও দলীয় কোন্দলের কারণে শারিরীক আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা নিয়াজুল ইসলাম খানকেও মারধরের শিকার হতে হয়েছিল। এখন সামনে যেহেতু নির্বাচন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না হলে আমাদের অবশ্যই আন্দোলনের জন্য তৈরি হতে হবে। এর জন্য আমাদের মধ্যকার সব কোন্দল ও বিদ্বেষ ভুলে দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর