বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কোরবানীকে কেন্দ্র করে কর্মচাঞ্চল্য কামার শিল্পে

হাসিবা নিঝুম

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২  


 
আর মাত্র কয়েকদিন পরই কোরবানীর ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর এসময়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামার শিল্পীদের। টুংটাং শব্দের সাথে সাথে উপার্জন বৃদ্ধির আশার ঝিলিক দেখা যায় তাদের চোখে। কোরবানীর সময় সারাদেশে লাখ লাখ পশু জবাই করা হয়। পশু জবাই করা, মাংস কাটা কিংবা চামড়া ছাড়ানোর কাজে প্রয়োজন হয় ধারালো অস্ত্রের। চাকু, চাপাতি, বটি, দাঁ সহ বিভিন্ন ধারালো উপকরণের প্রয়োজন পরে এই সময়। তাই কোরবানীর আগমুহূর্তে প্রস্তুতি হিসেবে কোরবানী দিতে উৎসুক জনতা নতুন ধারালো উপকরণ কেনার জন্য ছুটে যান কামারের দোকানে। শুধু যে নতুন দা-বঁটি কেনার জন্যই লোকজন কামারের দোকানে আসেন তা নয়, আসেন পুরোনো দাঁ-বটি শাণ দিতেও।


 
গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কালীর বাজার এলাকার একটি কামারের দোকানে দেখা যায়  অনেকেই সেখানে দাঁ, বটিসহ কোরবানীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনাসহ পুরানো উপকরণগুলো শাণ দেওয়ার জন্য এখানে ভিড় করছেন। কামার শ্রমিকও তাদের দোকানের দিকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সাজিয়ে রেখেছেন  এধরণের বিভিন্ন উপকরণ। সেখানে বটি ও চাপাতি শাণ দিতে আসা নিয়াজ উদ্দিন জানান, তিনি এখান থেকে ১০০ টাকায় বটি এবং ১৫০ টাকায় চাপাতি শাণ করিয়ে নিয়েছেন।


 
বেচাবিক্রির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে দোকানী বলেন, এখনও ঈদের প্রভাব শুরু হয়নি। তাই এখনও তুলনামূলকভাবে কাষ্টমারের সংখ্যা কম, ব্যবসা অনেক মন্দা। তবে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু করে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মানুষ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। এই ব্যবসার মাধ্যমে সারা বছর কীভাবে সংসার খরচ চলে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুধু শাণ দেওয়ার কাজে কিংবা কোরবানীর প্রয়োজনীয় উপকরণ বিক্রি করে সারা বছর চলে না। অন্যান্য সময় আমরা ছেনি, হাতুড়ি, শাবলসহ নির্মাণকাজে ব্যবহার হয় এমন লোহার যন্ত্রপাতি তৈরি ও শাণ করে থাকি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কামার শিল্পে ব্যবহারের মূল উপাদান কয়লা। গতবছর আমরা কয়লার যে বস্তা দেড় হাজার টাকায় ক্রয় করেছি সেই একই বস্তার দাম বর্তমানে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তাই এইসব উপকরণ তৈরি খরচসহ শাণ দেওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আমাদেরকেও মূল্য বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। ফলে কাস্টমাররাও আমাদের উপর নাখোশ।


 
কামার শ্রমিকরা জানান, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা এ দুই ধরনের লোহা ব্যাবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি করা উপকরণের মান ভালো হয় এবং এর দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা। আর কাচাঁ লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। তারা জানান, এখানে লোহার মানভেদে একটি দা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ৫০ থেকে ২০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা, কুড়াল ৫০০ থেকে ৭০০, বঁটি ২০০ থেকে ৫০০টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তারা আরও জানান, আমাদের দেশীয় তৈরি উপকরণের তুলনায় চায়না থেকে আমদানী করা উপকরণগুলোর চাহিদা বেশি।

 

তাছাড়া কোরবানীর একমাস যে ধরণের ব্যবসা হয় বাকী ১১ মাস তাদের ব্যবসা সে রকম থাকে না। গত বছরের কোরবানীর মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো উপার্জন হয়েছে বলে জানান দোকানী। এইবারও আশা প্রকাশ করছেন তার কাছাকাছি ব্যবসা হবে বলে।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর